নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আচমকা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি অবাক করছে সাধারণ মানুষকে। এমনিতেই তাঁরা আনাজপাতির চড়া দাম নিয়ে নাজেহাল। অগ্নিমূল্যের বাজারে নতুন করে সঙ্কট বাড়িয়েছে রসুন। যাঁরা নিয়মিত বাজার যান, তাঁদের অভিজ্ঞতা বলছে, আচমকা রসুনের দর কেজি পিছু ৫০০ টাকা ছাড়িয়েছে। অবশ্য সেই দামেও ভালো জাতের মোটা দানার রসুন মিলছে না। বরং দেখনদারিতে কিছুটা ভালো রসুন বাজার থেকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে হতাশ হচ্ছেন অনেকেই। কারণ, রসুনের কোয়া ছাড়ালেই দেখা যাচ্ছে ভেতরটা অপুষ্ট বা ফোঁপরা। বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রসুন যেহেতু পরিমাণে লাগে কম, তাই তার দাম বাড়লে তেমন রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয় না। তাই যাঁরা রান্নায় রসুন ব্যবহার করেন, তাঁদের সঙ্কট মুক্তিতে বড় একটা পদক্ষেপ করা হয় না। রসুনের দাম বাড়লে, তা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
এদেশে সবচেয়ে বেশি রসুন চাষ হয় মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত এবং মহারাষ্ট্রে। অন্য কয়েকটি রাজ্যেও চাষ হয়, তবে তুলনায় কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খরিফ এবং রবি মরশুম—বছরে এই দু’বারই রসুন ওঠে। এর মধ্যে খরিফ বা বর্ষাকালীন রসুন চাষ হয় মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাতের পাশাপাশি ছত্তিশগড়, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক ও রাজস্থানে। শীতকালীন, অর্থাৎ রবি ফসল ফলে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখাণ্ডের পাশাপাশি বিহার, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গে। বিশেষজ্ঞদের কথায়, এবারের বিক্ষিপ্ত বর্ষা এবং মরশুমের শেষের দিকে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে রসুন চাষে বড় প্রভাব পড়েছে।
শিয়ালদহ কোলে মার্কেটের কর্তারা বলছেন, এবার দেশজুড়েই চলছে রসুনের আকাল। কলকাতাও তার বাইরে নয়। এই পাইকারি বাজারে রসুন আসে মূলত নাসিক থেকে। সেখানে উৎপাদন ধাক্কা খাওয়ার প্রভাব রাজ্যে পড়েছে। মহারাষ্ট্রের ভোটপর্ব চলার কারণে পেঁয়াজের দাম আচকা বাড়তে শুরু করেছে, বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। খোলা বাজারে দিনপাঁচেক আগেও যেখানে ৫০ টাকায় পেঁয়াজ পাওয়া যেত, তার দাম এখন ৮০ টপকে ১০০ টাকার কাছাকাছি। সরকারিভাবে ফল কম হওয়াকেই যুক্ত হিসেবে সামনে আনা হচ্ছে। কিন্তু দাম আচমকা যেভাবে বেড়েছে, তাতে এই যুক্তি বিশ্বাস হচ্ছে না অনেকেরই। তাঁরা বলছেন, ‘ফাটকা’ বাজারে পেঁয়াজের দোসর হয়েছে রসুন। দাম কমবে কবে? বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করলে দাম কমতে পারে। কিন্তু তা কবে? স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না কেউই। ধন্দ জিইয়ে থাকবে আপাতত রসুন নিয়েও।