অমৃতকথা

শিক্ষা

গুরুশিষ্য-সম্বন্ধে নিবেদিতা কি গভীর শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রমের দৃষ্টিতে দেখিতেন, তাহা অনেকের জানা নাই। দেহত্যাগের কয়েক মাস পূর্বে শিক্ষাসমস্যা সম্বন্ধে তাঁহার কয়েকটি প্রবন্ধ “প্রবুদ্ধ-ভারতে” প্রকাশিত হইয়াছিল। ঐ প্রবন্ধগুলি পাঠ করিলে জানা যায় যে, তাঁহার মতে, শিষ্যত্ব গ্রহণ করিয়া গুরুর কাছে আত্মসমর্পণ করাই প্রকৃত শিক্ষার শ্রেষ্ঠ অঙ্গ। বিদ্যার্জ্জন সমাপ্ত হইলে স্বীয় জীবনাদর্শের সাধনক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইবার সময় শ্রীগুরুকে জীবনের নেতা ও নিয়ন্তা রূপে লাভ করিতে হইবে। বেশ বুঝা যায়, শিক্ষার এই পরম অঙ্গ বিচার করিবার সময় নিবেদিতা নিজেরই প্রাণের কথা লিখিয়া গিয়াছেন। “We must understand that the whole significance of our own lives depends, first and last, on their relation to his (Gurus) life”. অর্থাৎ, “আমাদিগকে বুঝিতে হইবে যে, গুরুর জীবনলীলার সহিত শিষ্য যে সম্বন্ধে আবদ্ধ, তাহার নিজজীবনের প্রকৃত মর্ম্ম ও তাৎপর্য্য সেই সম্বন্ধের মধ্যেই নিহিত থাকে।” আমাদের নিকট চিরবিদায় লইবার কিছু পূর্ব্বেই নিবেদিতা স্বীয় চরিত-রূপ রত্নপেটিকার চাবি এই উক্তিগুলির মধ্যে রাখিয়া গিয়াছেন। এই চাবিটি অবহেলা করিয়া নিবেদিতার জীবনচরিতের আলোচনা করিতে যাওয়া বিড়ম্বনামাত্র।
বাস্তবিক, নিবেদিতাকে বুঝিতে হইলে, নিবেদিতার গুরুর কথা অনিবার্য্য-রূপে আসিয়া পড়ে। তাঁহার হৃদয়ে গুরুর প্রতি ভক্তি ও আনুগত্যের যে তন্ময়তা প্রতিষ্ঠিত হইয়া গিয়াছিল, তাহাই তাঁহার সকল শক্তির উৎস—তাঁহার চরিত্রসৌধের ভিত্তি। গুরুভক্তির সহিত তাঁহার চরিত্র এমন নিখুঁতভাবে তদাকারকারিত হইয়া গিয়াছিল যে, তাঁহার সহিত যাঁহারা গুরুর সম্পর্কে সম্পর্কিত নহেন, উহার অস্তিত্বই হয় তো তাঁহাদের চোখে পড়িত না। কিন্তু তাই বলিয়া আমাদিগকে কি গুরুর কথা বাদ দিয়া নিবেদিতার কথা আলোচনা করিতে হইবে? অসম্ভব। যিনি ঐরূপ বাদ দিবার পক্ষপাতী, তিনি বুঝেন না যে, ঐরূপ করিলে তাঁহার গুরুর প্রতি অন্যায় করা না হইলেও, নিবেদিতার প্রতি অত্যন্ত অন্যায় করা হয়। যাঁহারা মনে করেন, নিবেদিতার সহিত তাঁহার গুরুর সম্পর্ক সাম্প্রদায়িকতার দুর্গন্ধে দূষিত, অতএব ঐ সম্পর্ক অন্তরালে থাকিলেই ভাল, তাঁহারা নিবেদিতার বিশ্বজনীনভাব বুঝিতে পারেন নাই, এবং সেইভাবের মূল-আকর ও শিক্ষাগুরুর বিরুদ্ধে তাঁহারা নিজেরাই সাম্প্রদায়িকতার একটা উৎকট প্রাচীর গড়িয়া তুলিতেছেন।
এই কারণে আমাদের মনে হয় যে, “নিবেদিতা”-লেখিকা শিষ্যার জীবনের আলোচনা করিতে যাইয়া, প্রথমেই যে গুরুর প্রভাব নির্ণয় করিয়াছেন, তাহাতে নিবেদিতাকে বুঝিবার চেষ্টা বঙ্গসাহিত্যে প্রকৃত গতি লাভ করিয়াছে। শ্রীমতী লেখিকা “The Master as I saw Him” নামক পুস্তক হইতে দেখাইয়াছেন যে, নিবেদিতা যখন হিন্দুসন্ন্যাসীকে গুরু-রূপে বরণ করিলেন, তখন কেবল একটা উচ্চতর মতবাদের নিকট তিনি আত্মসমর্পণ করেন নাই। প্রকৃত কথা, তিনি অসাধারণ ত্যাগ ও সত্যানুরাগের নিকটই আপনার সর্ব্বস্ব বিকাইয়া দিয়াছিলেন। তিনি বুঝিলেন যে, “তিনি (স্বামী বিবেকানন্দ) আজ যাহা মনের সহিত সত্য বলিয়া গ্রহণ করিয়াছেন, এবং সর্ব্বলোকসমক্ষে প্রচার করিতেছেন, কাল যদি সেই মতে ভ্রম দেখিতে পান, তাহা হইলে, বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করিয়া তখনই তাহা পরিত্যাগ করিতে পারেন; কেন না, তিনি সত্যানুরাগী, তিনি বীর;—তিনি ত্যাগমন্ত্র গ্রহণ করিয়া এমনভাবে আপনাকে বিসর্জ্জন দিয়াছেনযে, মানযশ প্রভৃতি কিছুরই আর আকাঙ্ক্ষা রাখেন না।”  
রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দির প্রকাশিত ‘দীপান্বিতা নিবেদিতা’ থেকে
22d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কাজকর্মে সুনাম বাড়বে। জ্ঞাতির চক্রান্তে সম্পত্তি সংক্রান্ত ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। উচ্চশিক্ষায় শুভ ফল লাভের...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.৮৫ টাকা৮৫.৫৯ টাকা
পাউন্ড১০৬.১০ টাকা১০৯.৮৬ টাকা
ইউরো৮৭.৯১ টাকা৯১.৩০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
8th     December,   2024
দিন পঞ্জিকা