রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ফেমাস’ পদ্য ‘দুই বিঘা জমি’ অবলম্বনে গুছিয়ে গদ্য থুড়ি গল্প লিখেছিলেন ভগীরথ মিশ্র, সেটাকেই নাট্যরূপ দিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করল ‘উষ্ণিক’। নাম ‘শ্রাদ্ধ শতবার্ষিকী’। কার? না, রবীন্দ্রনাথের। আসলে হওয়ার কথা ছিল সার্ধ শতবার্ষিকী। হাসনাবাদের সিমেন্ট ব্যাবসায়ী প্রাণকেষ্ট কুণ্ডুর কল্যাণে সেটা হয়ে দাঁড়িয়েছে শ্রাদ্ধ শতবার্ষিকী। আর ‘এ জেলা ও জেলা, এর নামে ওর নামে লিগালি প্রায় আড়াইশো বিঘা’ জমির মালিক প্রাণকেষ্টর পর্যালোচলনায় দুই বিঘা জমির বিতাড়িত, বঞ্চিত উপেন হয়ে উঠেছে অলস, ঋণগ্রস্ত, এক প্রজা। আর জমিদার সৎ, নীতিপরায়ণ প্রজাবৎসল অভিভাবক। কীভাবে? অনুষ্ঠানের একমাত্র পৃষ্ঠপোষক সভাপতি প্রাণকেষ্টর দাবি, কবিতাটি অসহায়, দুর্বল, দরিদ্র উপেনের উপর নিষ্ঠুর, অত্যাচারী, লোভী জমিদারের করুণ ও মর্মস্পর্শী আলেখ্য তো নয়ই একইসঙ্গে উপেন সজ্জন আর জমিদাবাবু বজ্জাত, মোটেই তা নয়। প্রাণকেষ্টর বিশ্লেষণ, জমিদারবাবু নগদ নগদ মূল্যে উপেনের জমি কিনে নিতে চেয়েছেন, ‘বুঝেছ উপেন‘, ‘বাপু’, ‘বাছা’ বলে সম্মান করছেন। তবুও উপেন যখন জমি দিতে চাইল না, আইনি প্রক্রিয়ায় সেই জমির দখল নিয়েছেন। বরং জমিদার সামাজিক, পরিশ্রমী ও বন্ধু বৎসল।
কালজয়ী কবিতাটির কাব্যভাষ্যের বিপরীতে গিয়ে ভগীরথ যে স্যাটায়ারটি গল্পাকারে লিখেছিলেন সেটাকেই হিউমারের অলঙ্কারে সাজিয়ে মঞ্চায়ন ঘটিয়েছেন পরিচালক ঈশিতা মুখোপাধ্যায়। কপিরাইট উঠে যাবার পর রবীন্দ্র সৃষ্টি নিয়ে চর্চা ও নিরীক্ষার নামে এক শ্রেণির তথাকথিত রবীন্দ্রানুরাগী আজও যে কাণ্ড করছেন, সেটাকেই এই একাঙ্কটির প্রতিটি সংলাপ ও কম্পোজিশনে তির্যক তামাশায় বিঁধেছেন পরিচালক। তাঁর এই প্রয়াসকে অভিনয়ে, উচ্চারণে, শরীরী ভাষায়, নিখুঁত সময় জ্ঞানে এবং অনাবিল রসবোধে সার্থক করে তুলেছেন ‘প্রাণকেষ্ট’ শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। হাসিয়েছেন, ভাবিয়েছেন, মন ভরিয়ে দিয়েছেন। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করেছেন দেবজিৎ ভট্টাচার্য, অরুণিকা দে ও চিত্রা দে। আলো, মঞ্চসজ্জা (সপ্তর্ষি ভৌমিক), আবহর (আবুল চক্রবর্তী) বুদ্ধিদীপ্ত ব্যবহারে সর্বাঙ্গ সুন্দর হয়ে উঠেছে প্রযোজনাটি।
প্রিয়ব্রত দত্ত