সন্তানের কর্ম সাফল্যে মানসিক প্রফুল্লতা ও সাংসারিক সুখ বৃদ্ধি। আয়ের ক্ষেত্রটি শুভ। সামাজিক কর্মে সাফল্য ... বিশদ
হিসেব মতো সত্তরের গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছেন তিনি। তবে বয়স তাঁকে কোনওভাবেই ছুঁতে পারেনি। বাহ্যিক গঠন এবং অন্তরের দৃষ্টিভঙ্গিতে আজও তিনি নবীন। বিপ্লবী তথা আজাদ হিন্দ ফৌজের ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী সায়গলের বোনঝি নাচের ধারায় বিপ্লব এনেছেন। তাঁর ধ্রুপদ ভরতনাট্যম বা কুচিপুরি নৃত্যের সঙ্গে সমকালীন সঙ্গীতে ভাবপ্রকাশের আধুনিকতম রীতিনীতির ফিউশন দর্শককে আবিষ্ট করে রাখে। মনেপ্রাণে ‘তরুণী’ পদ্মভূষণ মল্লিকা সারাভাই ঠিক এমনই। সম্প্রতি ভারতীয় বিদ্যাভবন আয়োজিত নৃত্যনাট্য উৎসব ‘নৃত্য গাথা’র তৃতীয় মরশুমে তিনিই ছিলেন প্রধান আকর্ষণ।
ঘণ্টা দেড়েকের টানা পারফরম্যান্স শেষেও সেদিন উত্তেজনায় টগবগিয়ে ফুটছেন মল্লিকা। শ্রান্তির লেশমাত্র নেই। গ্রিনরুমে ভক্তদের ছবি, সইয়ের আবদারও হাসিমুখে মেটাচ্ছেন। কীভাবে নিজেকে এই বয়সেও ফিট রাখেন? প্রশ্ন শুনেই হেসে ফেলেন। ‘বয়স একটা মানসিক বিষয়। বছর পনেরোর ছাত্রীরাও স্টেজে আমার এনার্জির সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না। যা করি সেটা খুব মন দিয়েই করি। নাচ তো একটা সাধনা। আমি রোজ দু’তিন ঘণ্টা রেওয়াজ করি। এর সঙ্গে যোগব্যায়াম, সাঁতার তো রয়েছেই। সবসময় সক্রিয় থাকতে চাই’, বললেন শিল্পী।
হিন্দি ছাড়াও বেশ কিছু ভাষায় অভিনয় করেছেন। প্রথম ছবি ‘হিমালয় সে উঁচা’ সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে ছিল। ইদানীং সিনেমা এবং রিয়ালিটির শো-এর যে প্রভাব নাচের উপর পড়ে, তা কীভাবে দেখেন? মল্লিকার সোজাসাপটা উত্তর, ‘অশ্লীলতার ঝোঁক থাকেই। তার বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াই চলবেই। তবে, নিজের পছন্দের আর্ট ফর্মের জন্য কোনওকিছুর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার পক্ষপাতী নই। যে কোনও শিল্পকলা নিজের জোরেই টিকে থাকবে।’
বাবা ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানের জনক পদ্মবিভূষণ বিক্রম সারাভাই। আর মা পদ্মভূষণ মৃণালিনী সারাভাই। মল্লিকা নিজে অর্থনীতির স্নাতক। পরিবারে কোনওকিছু চাপিয়ে দেওয়ার মানসিকতা ছিল না। ‘বাবা ছিলেন মজার মানুষ। কখনও বিজ্ঞানে ভালো নম্বর পেলে বলতেন, মল্লিকা, তুই বিজ্ঞানী হতে পারিস। আবার নিজের বন্ধুদের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলে আসার পর পরামর্শ দিতেন, তুই শাটলার হয়ে যা’, হেসে স্মৃতির পাতায় ডুব দিলেন মল্লিকা।
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কলকাতায় আসছেন শিল্পী। দর্শকদের বদলাতে দেখলেন? মল্লিকার কথায়, ‘কলকাতার দর্শক সবসময়ই স্পেশাল। তাঁরা আমার ধ্রুপদী নাচকে যেভাবে ভালোবাসা দিয়েছেন, তেমনই আমার নতুন এক্সপেরিমেন্ট, ফিউশনকেও ভালোবেসেছেন। তবে একটা কথা মনে হয়, তুল্যমূল্য বিচারে তাঁরা আমার ক্লাসিক্যাল দিকটিকেই বেশি পছন্দ করেন।’
দেশ, বিদেশে ছড়িয়ে থাকা অগণিত ছাত্রছাত্রীদের কখনও ‘রেসের ঘোড়া’ তৈরি করতে চাননি মল্লিকা। তাঁর আজীবনের বিশ্বাস, ‘নাচকে ভালোবেসে জীবনের অংশ করে তুলতে হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির পরীক্ষা নেয়। আমি এর বিরোধী। আমার কাছে বেশ কিছু নতুন ছাত্রী যোগ দিয়েছেন যাঁরা ষাটোর্ধ্ব। নাচকে আপন করে নেওয়ার পরে তাঁদের জীবনদর্শনই বদলে গিয়েছে।’