যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
পরিচালককে যখন ফোনে পাওয়া গেল তখন তিনি জাপানের এক পাহাড়ের উপরে বসে। কেমন অনুভূতি হচ্ছে? প্রচণ্ড ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে প্রসূন বললেন, ‘খুবই ভালো লাগছে। ছবি তৈরি করার সময় তো কেউ ভাবে না পুরস্কার পাবে কি না। ‘দোস্তজি’ আমার প্রথম ছবি। শুধু আমি কেন, ছবির অভিনেতা থেকে কলাকুশলী প্রায় প্রত্যেকেই নতুন। আমি ছাড়া সে অর্থে সিনেমা সম্বন্ধে কারও কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। আমার ছবির দুই খুদে নায়ক আশিক ও আরিফ। দু’জনেই বাংলাদেশ বর্ডারের কাছে মুর্শিদাবাদের একটা প্রত্যন্ত গ্রামে থাকে। সত্যি বলতে কী, ছবিটা যে এতগুলো সম্মান পাবে, তার থেকেও বড় কথা এত দূর পর্যন্ত আসবে সেটাই আমরা কেউ আশা করিনি। এটা আমার ছবি নয়। আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল।’
ঠিক কী কী কাণ্ড ঘটিয়েছে ‘দোস্তজি’? ছবিটি ইতিমধ্যেই ২২টি দেশের ফেস্টিভ্যালে দেখানো হয়েছে। আগামী মার্চ মাসের মধ্যে আরও ১০-১২টা দেশে ছবি প্রদর্শন হবে। এ তো গেল প্রদর্শনের কথা। ‘দোস্তজি’ ইতিমধ্যে ৬টি প্রেস্টিজিয়াস আন্তর্জাতিক পুরস্কারে সম্মানিত। তার মধ্যে সিফেজ (CIFEZ) পুরস্কারের কথা আলাদা করে বলতেই হবে। ইউনেস্কো স্বীকৃত এই পুরস্কার। ‘দোস্তজি’ হল প্রথম বাংলা ভাষার ছবি আর পঞ্চম ভারতীয় ছবি যা সিফেজ পুরস্কার পেল। এছাড়া ইউকেশিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা ছবির পুরস্কার পেয়েছে যাদের পৃষ্ঠপোষক আর্টস কাউন্সিল অব ইংল্যান্ড। মালয়েশিয়া গোল্ডেন গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ডে সেরা অভিনেতা হয়েছে দুই খুদে আশিক ও আরিফ। এই পুরস্কারে ভারত থেকে একমাত্র আমন্ত্রিত ছবি ছিল ‘দোস্তজি’। এছাড়াও রয়েছে জাফনা, গ্রিসের অলিম্পিয়া, সিফিসি’র মতো পুরস্কার। ‘এই ছবি নিয়ে পৃথিবীর যতগুলো দেশে গিয়েছি সব দেশের দর্শক ও সমালোচকদের থেকে উষ্ণতা ও প্রশংসা পেয়েছে ছবিটি’, তৃপ্ত কণ্ঠ পরিচালকের।
আমরা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোন জিনিস সবথেকে মিস করি? শৈশবের হারানো দিন আর নির্ভেজাল বন্ধুত্ব। বাবরি মসজিদ ধ্বংস আর বম্বে ব্লাস্টের প্রেক্ষাপটে তৈরি এই ছবির দুই বন্ধু ধর্মের ক্ষুদ্র মানসিকতার ঊর্ধ্বে। ধর্মের গোঁড়ামি তাদের বন্ধুত্বে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। হিন্দু ব্রাহ্মণ ছেলে পলাশ ও তার মুসলিম প্রতিবেশী শফিকুল দর্শকদের শৈশবের নিষ্পাপ দিনগুলোয় ফিরিয়ে নিয়ে যায়। শ্যুটিং হয়েছে মুর্শিদাবাদ সহ সারা বাংলার নানা অঞ্চল জুড়ে। ফিল্মমেকিং নিয়ে প্রথাগত কোনও শিক্ষা নেই প্রসূনের। থিয়েটার করতে করতেই ছবি তৈরি নিয়ে আগ্রহ। ২০১৭ সালে তৈরি করে ফেলেন একটি শর্ট ফিল্ম ‘শেডস’ যা কেরল আন্তর্জাতিক ডকুমেন্টরি ও শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রিমিয়ার হয়। এরপর বিদেশের কয়েকটি ফেস্টিভ্যালেও দেখানো হয়।
‘দোস্তজি’ এদেশে মুক্তি পাবে আগামী ১১ নভেম্বর। বিদেশ ঘুরে নিজের দেশের মানুষ, বাংলার মানুষের সামনে দেখানো হবে তাঁর সৃষ্টি। কী মনে হয় পরিচালকের? প্রসূন বলছেন, ‘আমার নিজের ভাষার মানুষের সামনে দেখানোর আনন্দই আলাদা। এখানকার দর্শকের ভালো লাগলে সেটা আমাকে আরও স্বস্তি দেবে। আশা করছি তাঁরা নিরাশ হবেন না।’