চিকিৎসাশাস্ত্রের অধ্যয়নে বিশেষ উন্নতি ও সাফল্যের যোগ। কর্মস্থল পরিবর্তন ও উপার্জন বৃদ্ধির সম্ভাবনা। মনে অস্থিরতা। ... বিশদ
বাবা রজনীকান্ত পেশায় চিকিৎসক। মা পদ্মাকুমারী মাইক্রো বায়োলজিস্ট। পরিবারে দাবা খেলার রীতি ছিল। যদিও পেশাদারি নয়। অবসর সময়ে দাবার বোর্ড নিয়ে বসে পড়তেন রজনীকান্ত। সেই দেখেই শতরঞ্জের খেলায় আগ্রহ বাড়ে গুকেশের। ছোট্ট ছেলেটির প্রতিভার আঁচ করতেও সময় লাগেনি বাবার। ছেলেকে চেস অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করে দেন তিনি। আর হাতেখড়ির এক বছরের মধ্যেই অনূর্ধ্ব-৯ এশিয়ান স্কুল দাবা প্রতিযোগিতা জেতেন গুকেশ। অনূর্ধ্ব-১২ স্তরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় তাঁর ঝুলিতে যোগ হয় আরও পাঁচটি সোনা। মাত্র ১২ বছর ৭ মাস ১৭ দিন বয়সে গ্র্যান্ড মাস্টারের যোগ্যতা অর্জন করেন গুকেশ। এক্ষেত্রে তিনি ভারতের সর্বকনিষ্ঠ ও বিশ্বের দ্বিতীয় কনিষ্ঠতম। ২০১৮ যুব বিশ্ব দাবা জিতেও সাড়া ফেলে দেন চেন্নাইয়ের বিস্ময় বালক। তবে অল্পে সন্তুষ্ট হওয়ার পাত্র নন গুকেশ। সেই মঞ্চেই সদর্পে ঘোষণা করেন, সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে চান। আর ছ’বছর পর সেই সাফল্যকে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতেও ভুল হল না ডোম্মারাজুর। চেন্নাইয়ের এই তরুণতুর্কির উত্থানের পিছনে বিশ্বনাথন আনন্দের অবদান নিছকই কম নয়। কিংবদন্তির দাবা অ্যাকাডেমিতে দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন গুকেশ। পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মূল্যবান পরামর্শে নিজেকে আরও পরিণত করেছেন তিনি।
২০২৪ সালের দাবা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে আন্ডারডগ হিসেবেই নেমেছিলেন গুকেশ। কারণ, ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ডিং লিরেনকে হারানো তো মুখের কথা নয়। তারপর প্রথমবার শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে স্নায়ুর চাপ ধরে রাখাও কঠিন। এমন সব সংশয়ের মধ্যেই প্রথম গেমে মুখ থুবড়ে পড়লেন গুকেশ। বিশেষজ্ঞরা তো ভবিষ্যদ্বাণী করেই ফেলেছিলেন, লিরেনের খেতাব ধরে রাখা কেবলমাত্র সময়ের অপেক্ষা। তবে ডোম্মারাজু ভেঙে পড়লেন না। দ্বিতীয় গেম ড্রয়ের পর তৃতীয় গেমে দুরন্ত জয় ছিনিয়ে সিরিজে সমতা ফেরালেন। সেই সঙ্গে অক্সিজেন পেল ভারতীয় অনুরাগীরাও। পরের সাতটি গেমে কেউ কাউকে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়েননি। ১১তম গেমে অবশ্য ডিং লিরেনকে হারিয়ে খেতাবের স্বপ্ন উস্কে দিয়েছিলেন গুকেশ। কিন্তু পরের গেমেই প্রত্যাঘাত করেন চীনা দাবাড়ু। ১৩তম গেম আবার ড্র। সবাই একপ্রকার ধরেই নিয়েছিলেন, টাই-ব্রেকারের মাধ্যমেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নির্ধারণ হবে। যদিও নির্ণায়ক ম্যাচে সাদা ঘুঁটির সুবিধা ছিল লিরেনের কাছে। ১৪তম অর্থাত্ অন্তিম গেমও ড্রয়ের দিকেই এগচ্ছিল। তবে গুকেশের নাছোড়বান্দা মনোভাব লিরেনকে মারাত্মক ভুল করাতে বাধ্য করেন। ৫৫ চালে সাময়িক বিভ্রান্তিতে নৌকা বিসর্জন দিয়ে নিজের ভরাডুবিই নিশ্চিত করেন লিরেন। সেটা বুঝতে দেরি হয়নি গুকেশের। উত্তেজনায় সঙ্গে সঙ্গে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েন তিনি। বিধ্বস্ত লিরেন তখন অনুশোচনায় ভুগছেন। শেষ পর্যন্ত ৫৮ চালে চীনা দাবাড়ু আত্মসমর্পণের খসড়ায় সই করতেই ‘গুকেশ, গুকেশ’ জয়ধ্বনিতে কেঁপে উঠল অডিটোরিয়াম। সিঙ্গাপুরের ইকুয়েরিয়াস হোটেলের হলঘরে গুকেশেরও দু’চোখে অঝোরে ঝরছে আনন্দাশ্রু। স্বপ্নপূরণের মুহূর্তগুলো তো এমনই হয়। সাত বছর বয়সে যে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, ১৮ বছর বয়সে তা পূরণ করলেন। সতিই এ যেন রূপকথা!