চিকিৎসাশাস্ত্রের অধ্যয়নে বিশেষ উন্নতি ও সাফল্যের যোগ। কর্মস্থল পরিবর্তন ও উপার্জন বৃদ্ধির সম্ভাবনা। মনে অস্থিরতা। ... বিশদ
আঁধার সাঁঝে বনের মাঝে উল্লাসে প্রাণ ঢেলেছ॥
তুমি নও তো সূর্য, নও তো চন্দ্র, তোমার তাই ব’লে কি কম আনন্দ।
তুমি আপন জীবন পূর্ণ ক’রে আপন আলো জ্বেলেছ॥’
রাতের নিকষ কালো অন্ধকারে বনে-জঙ্গলে, গাছের শাখায় শাখায়, পুকুর পাড়ে খুদে আলোর হুল্লোড়। তা দেখে কার না ভালো লাগে! আমরা সবাই জানি, এভাবে আলোর দীপ জ্বেলে কারা ঘুরে বেড়ায়। ওরা জোনাকি। ছোট্ট হলে কী হবে, বড় বিচিত্র প্রাণী ওরা। সাগরের গভীরে অনেক প্রাণী রয়েছে, যারা এমন আলো জ্বালতে পারে। কিন্তু ডাঙায় শুধুমাত্র জোনাকিদেরই এই ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু ওদের এই আলোর উৎস কী? কোন পদ্ধতিতেই বা আলো জ্বলে? আলো জ্বললে তো তাপ সৃষ্টি হওয়ার কথা। সেই তাপে তো ওদের জ্বলে-পুড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ওরা তো দিব্যি ঘুরে বেড়ায়। তাহলে কীভাবে তাপ সহ্য করে ওরা?
এখন তো শীতকাল। অনেকেই কাঠ জ্বালিয়ে আগুন পোহায়। একটু খেয়াল করে দেখলে বোঝা যাবে, কাঠে আগুন জ্বললেও আলো হয়। কিন্তু তা বেশি দূর ছড়ায় না। বরং অনেক বেশি তাপ তৈরি হয়। বিদ্যুৎচালিত আলোতে তড়িৎশক্তি আলোকশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। পুরো তড়িৎশক্তির অল্প পরিমাণ আলোকশক্তিতে রূপান্তর ঘটে। বাকি অংশ তাপশক্তি উৎপন্ন করে। জ্বলে ওঠার কিছুক্ষণ পর বৈদ্যুতিক বাল্বে হাত দিলেই গরম লাগে। সাধারণ বাল্ব যে পরিমাণ বিদ্যুৎশক্তি গ্রহণ করে, তার ৯০ শতাংশ তাপ উৎপাদনেই ব্যয় হয়ে যায়। বাকি ১০ শতাংশ থেকে আসে আলো। বিদ্যুৎ খরচ বাঁচাতে সক্ষম আলোগুলো কম তাপ উৎপন্ন করে। এজন্য সেগুলি গরমও কম হয়। সেজন্য এগুলোকে ‘এনার্জি সেভার’ বলা হয়। কিন্তু জোনাকির আলোর পুরোটাই আলোকশক্তি। এজন্য বিজ্ঞানীরা জোনাকির আলোকে ‘কোল্ড লাইট’ বা ঠান্ডা আলো বলে থাকেন। আলোর উৎসগুলির মধ্যে এই আলো সবচেয়ে বেশি কার্যকর বা সুদক্ষ। কারণ, এখানে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়, তাতে প্রায় ১০০ শতাংশই আলো উৎপন্ন হয়। সেজন্যই জোনাকি নিজের আলোর তাপে জ্বলে যায় না। আর সেই জন্যই জোনাকি ধরলে বা আমাদের গায়ে বসলে কোনও তাপও লাগে না। বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরে এমনই ঠান্ডা আলো তৈরির চেষ্টা করছেন। এই চেষ্টা সফল হলে বিদ্যুতের অপচয় কতটা কমে যাবে ভাব তো!
কীভাবে আলো জ্বালে জোনাকি?
জোনাকির দেহে থাকে লুসিফেরিন নামক একধরনের রাসায়নিক। জোনাকির পেটের নীচের একটি অংশে থাকে বিশেষ ধরনের কিছু কোষ। ওই কোষগুলির মধ্যেই থাকে এই রাসায়নিক। এদের শরীরে যখন বাতাস প্রবেশ করে, তখন সেই বাতাসে থাকা অক্সিজেন লুসিফেরিনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে আলো উৎপন্ন করে। এই প্রক্রিয়াকে বলে ‘বায়োলুমিনেসেন্স’। আলোককণা তৈরির জন্য জোনাকির দেহে লুসিফেরেজ নামক এনজাইম বা উৎসেচক থাকে। তা লুসিফেরিন ও অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় সাহায্য করে। এই বিশেষ প্রক্রিয়ায় জোনাকি অক্সিজেনের সরবরাহ একেবারে নিজস্ব ছন্দে নিয়ন্ত্রণ করে। এজন্যই, জোনাকির আলো মিটমিট করে জ্বলে আর নেভে। কখন আলো জ্বলবে বা নিভবে, তা অক্সিজেন সরবরাহের উপর নির্ভর। জোনাকি অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ করে দিলে আলো নিভে যায়। অক্সিজেন সরবরাহ চালু করলেই রাসায়নিক বিক্রিয়া শুরু হয়। আর আলো জ্বলে ওঠে। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, লাতিন শব্দ লুসিফার থেকে লুসিফেরিন ও লুসিফেরেজের নামকরণ হয়েছে। ‘লুসিফার’ শব্দের অর্থ আলোকবাহী বা আলোকময়।
জোনাকির আলো হলুদ, সবুজ ও হালকা লাল রঙের হয়ে থাকে। সাধারণত ওরা নিশাচর। তবে কিছু কিছু প্রজাতি দিনে সক্রিয় থাকে। এদের অবশ্য আলো থাকে না।
এই আলো জোনাকির কী কাজে লাগে?
জোনাকিরা কি অন্ধকারে পথ খুঁজতে আলো জ্বালে? এর উত্তর হল—না। এই আলো আসলে তাদের ভাষা। আমরা কথার মাধ্যমে ভাবের আদানপ্রদান করি। কিন্তু বেশিরভাগ কীটপতঙ্গ শব্দ করতে পারে না। তারা নানাভাবে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখে। জোনাকি আলোর মাধ্যমে ভাবের আদানপ্রদান করে। সারা বিশ্বে কয়েক হাজার প্রজাতির জোনাকি রয়েছে। ঠান্ডা পড়লে এরা শীতঘুমে চলে যায়।