পেশা ও ব্যবসায় অর্থাগমের যোগটি অনুকূল। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ... বিশদ
আদিবাসী কৃষিজীবী পরিবারে চামির জন্ম। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন বাবাকে হারান তিনি। মা, দুই ভাই এবং এক বোনের দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর উপর। ফলে স্কুল পাশ করার পর আর পড়াশোনা এগয়নি। সপরিবার গ্রামে মজুর খাটতেন তাঁরা। পরিবারের গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য অর্থ উপার্জন করতে কঠিন পরিশ্রম করতে হতো চামিকে। তার মধ্যেও স্বপ্ন দেখার বিরাম ছিল না।
সমাজে পুরুষ আধিপত্য দেখেই বড় হয়েছেন চামি। মেয়েরা যেন সবসময় পুরুষের পায়ের নীচে থাকবে, এই নিয়ম দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়েছেন। তাই ছোট থেকেই মেয়েদের জন্য কাজ করতে চেয়েছিলেন। নারী উন্নয়নে আজও নিরলস পরিশ্রম করেন তিনি। জল, জঙ্গল, জমি রক্ষা করতে শিখেছেন ছোট থেকেই। সেই শিক্ষাই ছড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় মেয়েদের মধ্যে। বনবিভাগের এক আধিকারিকের সাহায্যে মেয়েদের নিয়ে গাছ লাগানোর কাজ শুরু করেন। রুক্ষ মাটি, শুকিয়ে যাওয়া জমিতে কীভাবে গাছের চারা বাঁচিয়ে রাখতে হয় তা শিখেছেন বনবিভাগের কর্মীদের থেকেই।
একটা সময় আদিবাসী সমাজে মেয়েদের লাঞ্ছিত হতে দেখেছেন চামি। গ্রাম পঞ্চায়েতের সভায় পুরুষদের পাশে মেয়েদের বসতে দেওয়া হতো না। কারণ পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের নিকৃষ্ট বলে মনে করা হতো। চামির ভিন্ন ধারার ভাবনা দেখে গ্রামবাসীরা তো বটেই, নিকট আত্মীয়রাও তাঁর কাজে বাধা দিয়েছিলেন। চামির সঙ্গে কাজ করার জন্য বহু মহিলার উপর তাঁদের স্বামীরা শারীরিক নিগ্রহ করতেন। এসবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতেই জীবনের পথে এগিয়েছেন চামি। অনেকটা পথ পেরিয়ে এসে এখন প্রায় ৩০০০ মহিলা তাঁর সঙ্গে কাজ করছেন। কীভাবে সংসার খরচ থেকে টাকা বাঁচিয়ে বিপদের দিনের জন্য একটু একটু করে সঞ্চয় করতে হয়, মেয়েদের তা শিখিয়েছেন তিনি। এতে চড়া সুদে মহাজনের কাছে টাকা ধার নেওয়ার প্রবণতা কমেছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মেয়েদের পড়াশোনার গুরুত্ব বুঝিয়েছেন। আদিবাসী মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়েছেন। ফলে স্থানীয় এলাকায় শিক্ষার হারও বেড়েছে অনেকটাই। এককথায় নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষাকে হাতিয়ার করে গ্রামের চেহারাটাই বদলে দিতে চেয়েছেন চামি।
২০২৪-এ মিলেছে পদ্মশ্রী সম্মান। চামির পরিশ্রমের ফল। হাসিমুখে জানান, এই পুরস্কার তাঁর কাজের উৎসাহ আরও বাড়িয়েছে।