পেশা ও ব্যবসায় অর্থাগমের যোগটি অনুকূল। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ... বিশদ
ষাট বছর একটা দীর্ঘ সময়। পৃথিবী অনেক বদলেছে। কিন্তু বদলায়নি স্বজনহারা শিশুদের কষ্ট, তাদের দুঃখের দিনলিপি। পরিবারহীন শিশুদের পরিবারের ভালোবাসা দেওয়ার কাজটি ‘এসওএস চিলড্রেন্স ভিলেজেস’ করে চলেছে নিপুণভাবে। যেসব বাচ্চা বাবা-মাকে হারিয়েছে, বা এমন শিশু যার বাবা-মা কঠিন রোগে আক্রান্ত, যে কোনও দিন সে অনাথ হয়ে পড়বে, এমন শিশুদের পাশে থাকার চেষ্টা করে এই সংস্থা।
এতদিন ধরে শিশুদের নিয়ে কাজ করতে করতে সংস্থার সদস্যরা বুঝেছেন যে পরিবারহীন শিশুদের শুধু খাওয়া-পরা-ভালোবাসা দিলেই হয় না, বড় হয়ে ওঠা পর্যন্ত তাদের দরকার একটা সুষ্ঠু সুন্দর সামাজিক পরিবেশ ও শিক্ষা। প্রত্যেক শিশুর প্রয়োজন অনুযায়ী সংস্থা তাদের যত্নের ব্যবস্থা করে।
পথশিশুরা অবশ্য এই প্রকল্পের আওতায় নেই, জানালেন সিইও সুমন্ত কর। নিজের পরিবারকে হারিয়ে যে শিশুটি দিশাহারা, তার কাছে পৌঁছে যায় সংস্থাটি। ‘ফ্যামিলি লাইফ কেয়ার প্রোগ্রাম’-এর আওতায় তাদের দেওয়া হয় এমন যত্ন যাতে পরিবার না থাকার কষ্ট ভুলে যায় তারা। শিশুরা অন্তর্গত হয় এসওএস ফ্যামিলি-র। অনাথ শিশুকে এসওএস ফ্যামিলিতে নিয়ে আসা হয়। এই ভিলেজে ৫-৭ একর জমিতে ১২-১৫টি এমন পরিবার থাকে। প্রতিটি বাড়িতে ৪-৫টি ঘর। আট জন বাচ্চা সেখানে থাকে। বাড়িতে থাকেন একজন করে ‘এসওএস মাদার’। তাঁকে বা তাঁর মতো ‘ভাবী মা’-দের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি আগে থেকে প্রশিক্ষণ দেয়। শিশুদের দেখভালের ক্ষেত্রে এই মায়েদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাঁকে সাহায্য করার জন্য কয়েক জন মাসি বা কাকিও থাকেন। এই বাড়ি থেকে বাচ্চারা স্কুল যায়, শিক্ষালাভ করে। বাড়ি ফিরে মায়ের সঙ্গটাও পায়। স্কুল শেষে বুদ্ধিমত্তা অনুযায়ী কেউ যায় বৃত্তি প্রশিক্ষণে, কেউ যায় উচ্চতর শিক্ষা ক্ষেত্রে। এই ধরনের প্রশিক্ষণ শেষ হলে থাকে চাকরির বাজারে ঢোকার সুযোগ। চাকরিতে একবার ঢুকে গেলে ধীরে ধীরে বাচ্চার ভরণপোষণের আর্থিক সুবিধা একটু একটু করে তুলে নেওয়া হয়। কারণ ক্রমে সে স্বনির্ভর হয়ে ওঠার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে এই ভিলেজে মায়ের সঙ্গে যে সম্পর্কটা গড়ে ওঠে, সেটা সারাজীবনের সম্পদ হয়ে থাকে। মোটামুটি ২৩ বছর বয়স পর্যন্ত সুবিধা পেয়ে থাকে বাচ্চারা। মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে বিয়ের ব্যবস্থাও করা হয়।
কীভাবে এই ধরনের শিশুদের ব্যাপারে জানতে পারে সংস্থা? সুমন্তবাবু জানালেন, ভারতের প্রতি জেলায় থাকে শিশুকল্যাণ ও অধিকার রক্ষা কমিটি। তারা আমাদের খবর দেয়। নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রকেরও ভূমিকা থাকে। পশ্চিমবঙ্গের সল্টলেকে ১৯৭৭ সাল থেকে এমন একটি ভিলেজ রয়েছে। ১৮৬ জন শিশু রয়েছে এ রাজ্যের প্রোগ্রামে। শুধু শিশু নয়, অনেক সময় পরিবারের পাশেও দাঁড়ায় সংস্থা। কারণ অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, বহু পরিবার আর্থিক সংস্থানের অভাবে বাচ্চাকে ছেড়ে দেয় বা বেচে দেয়। দারিদ্র্যসীমার আওতায় থাকা এমন বেশ কিছু পরিবারের পাশে থাকে সংস্থা। বাচ্চার পুষ্টি, শিক্ষা সব দিকে নজর দেওয়ার পাশাপাশি জোর দেওয়া হয় সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পেও। যাতে এই ধরনের বাচ্চার নিজের বাবা-মায়েরাই তার দেখাশোনা করতে পারে।
এই রাজ্যের ৫১৩ পরিবারের ১০৩৫ শিশু রয়েছে এই প্রকল্পের আওতায়। সারা দেশে ৩৭ হাজার শিশুর দেখভালে নিয়োজিত রয়েছে সংস্থাটি। শিশুদের স্বাবলম্বী করে তোলার পরে চেষ্টা করা হয় সংস্থার বাইরে যে বিরাট দুনিয়াটা রয়েছে, তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে। এমনিতে সংস্থার অন্দরেও কেউ কেউ কাজ করে। তবে সংস্থার লক্ষ্য, এই শিশুদের দ্রুত মূল স্রোতে ফিরিয়ে দেওয়া কারণ তাতেই তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
এই সংস্থা থেকে অনেক শিশুই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন সংস্থায়। কেউ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কেউ এমবিবিএস দিয়ে ডাক্তার হয়েছে। সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশে সংস্থার ভোপাল প্রোজেক্ট থেকে একটি মেয়ে ভালো রেজাল্ট করে মুখ্যমন্ত্রীর ফান্ড সহায়তা নিয়ে ডাক্তারি পড়ছে। এমন উদাহরণ অজস্র। বিমানবাহিনী, প্রযুক্তি সব ক্ষেত্রেই ছাপ রাখছে ছেলেমেয়েরা। কেউ কেউ উজ্জ্বল সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও। বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন শিশুরাও প্যারাঅলিম্পিকস-এ ভালো পারফর্ম করছে। ৬০০ জন স্নাতক হয়েছেন গত বছর এই সংস্থা থেকে। যারা পড়াশোনায় এগতে পারছে না, যাদের জন্য আছে কারিগরি শিক্ষা।
এসবের বাইরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়েও জরুরি বেশ কিছু প্রোগ্রাম চালু করে সংস্থা। সংস্থা চলে অনুদানের মাধ্যমে। বিদেশ থেকে যেমন আর্থিক অনুদান আসে, ভারতীয়দের কাছ থেকেও সেই সক্রিয় সহযোগিতা আশা করে সংস্থাটি।