পেশা ও ব্যবসায় অর্থাগমের যোগটি অনুকূল। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে পারে। ... বিশদ
শাশ্বতী প্রামাণিক
ক্যালেন্ডার বাংলা হোক বা ইংরেজি, এটি অতি প্রয়োজনীয় বস্তু। তবে বর্তমান সময়ে বাংলা ক্যালেন্ডারের গুরুত্ব অনেক হ্রাস পেয়েছে। কারণ বোধহয় এই ক্যালেন্ডার অনেকেই দেখতে বা পড়তে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন না। তাঁরা এতটাই ইংরেজি ঘেঁষা যে ইংরেজি ক্যালেন্ডার দেখে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকেই এমন আছেন যাঁরা কিনা বাংলা কোন বছর চলছে তাও বলতে পারেন না। এই প্রবণতা বেশিদিন চললে বাংলা ক্যালেন্ডার হয়তো অবলুপ্তির পথে অগ্রসর হবে।
কলেজ ছাত্রী
অন্তরা মিদ্যা
বর্তমানে সমস্ত স্কুল-কলেজে ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী জানুয়ারি মাসে নতুন শ্রেণি শুরু হয় এবং ডিসেম্বরে বর্ষ শেষ হয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখার জন্য ভারতেও ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সাল তারিখ নির্ধারণ করা হয়। বিভিন্ন মনীষীদের জন্মদিবসও ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পালন করা হয়। তবে অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের মতো বাঙালিরা যদি আঞ্চলিক ভাষাকে প্রাধান্য দিত, তাহলে হয়তো বাংলা ক্যালেন্ডারের বেহাল অবস্থা হতো না। বর্তমানে শিশুরা যেমন মাতৃদুগ্ধ ছাড়া বাইরের প্যাকেটজাত খাবারে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে তেমনই বাঙালিরাও বাংলা ভাষা ছেড়ে ইংরেজিতেই বেশি অভ্যস্ত। এতে শুধুমাত্র বাঙালিরই দোষ, তা নয়। কারণ বাংলা ভাষা এখন ব্যবহৃত হয় সীমাবদ্ধ কয়েকটি অঞ্চলে, বাইরের যে কোনও কর্মসূত্রে ইংরেজি ভাষারই প্রাধান্য লক্ষ্যণীয়। তাই বাঙালিরা আজ সাল তারিখ নির্ধারণের জন্য ইংরেজি ক্যালেন্ডারেরই বেশি সাহায্য নেন।
দশম শ্রেণির ছাত্রী
বিজন মজুমদার
দু’একটা বিষয় ছাড়া জীবনের টাইম-টেবিলে বাংলা ক্যালেন্ডারের কোনও ভূমিকাই নেই বাঙালির কাছে। ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা। সুতরাং বিশ্ব নাগরিক হওয়ার ক্ষেত্রে ইংরেজি ক্যালেন্ডারের অপরিসীম ভূমিকা। সারা বছরের কর্মসূচি লিপিবদ্ধ হয় ইংরেজি ক্যালেন্ডারের সূচি মেনে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার সূচি, ছুটির তালিকা সবই দেওয়া হয় ইংরেজি ক্যালেন্ডার মেনে। সুতরাং চলমান জীবনের সারণিতে যেখানে বাংলা তারিখের কোনও ভূমিকা নেই, সেখানে বাংলা ক্যালেন্ডারের গুরুত্ব তো কমে যাবেই। পয়লা বৈশাখ, পৌষপার্বণ, চৈত্র সংক্রান্তি, পঁচিশে বৈশাখ, বিয়ের তারিখ নির্বাচন সহ কয়েকটি বিষয় ছাড়া বাংলা ক্যালেন্ডার কেউ মনে রাখে না।
শিক্ষক
অগ্নিদীপা বন্দ্যোপাধ্যায়
বাংলা ক্যালেন্ডারের গুরুত্ব সত্যিই বাঙালির কাছে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। এটা বোঝা যাবে ক্যালেন্ডার ছাপানোর প্রেসগুলিতে গেলে। কলেজ স্ট্রিটের বহু ছাপাখানায় আগে নববর্ষের সময়টায় নাওয়া-খাওয়ারও সময় মিলত না। এখন ছাপাখানাগুলো প্রায় মাছি তাড়াচ্ছে। কারণ এই ডিজিটাইজেশনের যুগে বাংলা ক্যালেন্ডারের সেরকম চাহিদা নেই। মোবাইলেই দিনক্ষণ দেখে নেওয়া যাচ্ছে। বাড়িতে বা দোকানেও সেভাবে বাংলা ক্যালেন্ডার ঝুলতে দেখা যায় না। অনেক ইংরেজি ক্যালেন্ডারে আজকাল বাংলা বর্ষের তারিখ উল্লেখ থাকে। অমাবস্যা, পূর্ণিমা, দ্বাদশী, একাদশীর মতো তিথি এবং পুজোর দিনক্ষণ যাঁদের জানা প্রয়োজন, তাঁরা সেখান থেকে জেনে নিচ্ছেন। এতে বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রয়োজনীয়তা তলানিতে।
শিক্ষিকা
বিপক্ষে
পিন্টু দেওয়াশী
বর্তমান ডিজিটাল দুনিয়াতেও বাঙালির কাছে বাংলা ক্যালেন্ডার সমান গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক। বাঙালি এখনও যে কোনও শুভ অনুষ্ঠান, যেমন বিবাহ, গৃহপ্রবেশ, অন্নপ্রাশন, উপনয়নের দিন নির্ধারণ করে বাংলা ক্যালেন্ডার দেখেই। পৌষ বা চৈত্র সংক্রান্তিও বাংলা মাস নির্ভর। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ তথা বিভিন্ন পূজাপার্বণের দিনক্ষণ ও নির্ঘণ্ট নির্ধারিত হয় বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ীই। বাঙালির কাছে বাংলা ক্যালেন্ডার শুধুমাত্র কতগুলি তারিখ নয়। বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, আবেগ ও অস্তিত্বও জড়িয়ে আছে। তাই যতদিন বাঙালি থাকবে ততদিন বাংলা ক্যালেন্ডার স্বমহিমায় বিরাজ করবে।
সহকারী শিক্ষক
সোহিনী রায়চৌধুরী
বৈশাখের শুরু মানেই নববর্ষ, হালখাতা, মিষ্টিমুখ। আর রংবেরঙের বাংলা ক্যালেন্ডার। এই সবকিছু ঘিরেই বাঙালির নস্টালজিয়া। মানুষের পছন্দ বদলেছে, চাহিদা নয়। বিশ্বায়নের যুগে মধ্যবিত্ত বাঙালির অন্দরমহলে পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। তা বলে বাংলা ক্যালেন্ডার বিলুপ্তির পথে যায়নি। অফসেটে নানা ডিজাইনে আরও আকর্ষণীয় করে সাজানো হচ্ছে ক্যালেন্ডার। এখন তো ই-ক্যালেন্ডারেরও যুগ! মোবাইল দেখেও বাংলা তারিখ, একাদশী, দ্বাদশী, অমাবস্যা, পূর্ণিমা, নীল ষষ্ঠীর মতো বিশেষ দিনক্ষণ জানা যায়। হোক না তার ভোলবদল, তবুও তো ক্যালেন্ডার! অনেক অভিভাবক বলেন যে তাদের ছেলেমেয়ের ‘বাংলাটা ঠিক আসে না।’ তাই বাংলা ক্যালেন্ডারও ঠিক করে দেখতে পারে না! অথচ আমারই এক ছাত্র বাংলা তারিখ, মাস, বছর সম্পর্কে আগ্রহ দেখিয়েছিল বাংলা ক্লাসে! হোক না ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা, তাই বলে বাংলা খাতায় ইংরেজি তারিখ লিখব কেন? ছোট্ট ছাত্রটির ভাবনা ছোট্ট নয়! বাংলা ভাষার প্রতি তার এই ভালোবাসাই আমাদের ভাবতে শেখায়। বাংলা ক্যালেন্ডারের গুরুত্ব এত সহজে হারাতে পারে না, হারাবেও না!
শিক্ষিকা
সৈয়দ সাদিক ইকবাল
বাংলা বছরের গুরুত্ব অপরিসীম বাঙালির জীবনে। এখনও গ্রাম অঞ্চলে সাধারণ মানুষ বাংলা মাসের উপর নির্ভর করে চাষাবাদ করেন। বাংলা কোন মাসে কোন বীজ বপন করতে হবে, তার হিসেব থাকে। শীতের শুরু কখন, তার হিসেব থাকে বাংলা মাসের উপর। চৈত্র সেলের বাজার, পহেলা বৈশাখে বাড়িতে ভূরিভোজ। নবান্ন উৎসবে বাড়ির পাশের মুদির দোকানের হালখাতা। সবই বাংলা মাসের উপর নির্ভর। গৃহপ্রবেশ থেকে বিবাহ, সব শুভ কাজ বাঙালি বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ঠিক করে। দৈনিক সংবাদপত্র থেকে শুরু করে পূজা সংখ্যায় বাংলা সন লেখা থাকে। তবে আরও বেশি করে বাংলা ক্যালেন্ডার পৌঁছে দেওয়া দরকার।
রাজ্য সরকারি কর্মচারী
সায়ন তালুকদার
বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই ১ বৈশাখ, ২৫ বৈশাখ, ২২ শ্রাবণ খুব বেশি হলে ১১ জ্যৈষ্ঠ বা ৭ পৌষ দিনগুলির কথা জানে, আবার অনেকে উদাসীন। তাতে ক্যালেন্ডার তার প্রয়োজনীয়তা খোয়াবে না। ইংরেজি ক্যালেন্ডারে বিবাহ, উপনয়ন, গৃহপ্রবেশ প্রভৃতি শুভ দিন সবসময় উল্লেখ থাকে না। পাঁজি দেখার অভ্যাস সকলের নেই। সেক্ষেত্রে বাংলা ক্যালেন্ডারই ভরসা। অনেকের বাড়িতেই দিদিমা, ঠাকুরমা রয়েছেন। তাঁরা পূর্ণিমা, অমাবস্যা, একাদশীর ব্রত মেনে চলেন। ইংরেজি ক্যালেন্ডারে এসব পর্যাপ্ত এবং সুষ্ঠু হালহকিকত কোথায়? হালখাতার অনুষ্ঠানে আজও মিষ্টির বাক্সের সঙ্গে বাংলা ক্যালেন্ডার দেওয়ার চল অটুট। বাঙালির কাছে বাংলা ক্যালেন্ডার অতীতে যেমন আদর পেয়ে এসেছে, ভবিষ্যতেও তার ঘাটতি হবে না।
গণিত স্নাতকোত্তরে পাঠরত,
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়