সাংগঠনিক কর্মে বড় সাফল্য পেতে পারেন। উপস্থিত বুদ্ধি আর সাহসের জোরে কার্যোদ্ধার। বিদ্যায় সাফল্য। ... বিশদ
কোভিড পরবর্তীকালে দেশের পর্যটন দপ্তর একেবারে নতুন ধাঁচে সাজিয়েছে ইন্দোনেশিয়া। একগুচ্ছ নতুন জায়গা পর্যটনের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় পর্যটকদের কথা ভেবে বেশ কিছু আকর্ষণীয় স্থান নির্বাচন করেছে তারা। আর এই নির্বাচনের শীর্ষে রয়েছেন দুই মহিলা। একজন ইন্দোনেশিয়ার অ্যাম্বাসাডর আর অন্যজন পর্যটন দপ্তরের উপমন্ত্রী।
পর্যটন দপ্তরের উপমন্ত্রী নি মাদে আয়ু মার্থিনির সঙ্গে পর্যটনের বিস্তার বিষয়ে কথা হচ্ছিল সম্প্রতি। তিনি জানালেন, মহিলাদের চরিত্রে একটা সহজাত কমনীয় ভাব রয়েছে। সেই কারণেই তাঁরা পর্যটকদের আকর্ষণ করতে বেশি মাত্রায় সক্রিয়। আর সেই কথা মাথায় রেখেই ইন্দোনেশিয়া সরকার পর্যটন বিভাগে বেশি সংখ্যক মহিলা নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া বলতেই এতদিন ভারতীয় পর্যটকদের কাছে শুধুই বালির নাম পরিচিত ছিল। কিন্তু পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ইন্দোনেশিয়া অনেক বেশি বিস্তৃত। মার্থিনি বললেন, ‘এখানকার রাজধানী শহর, জাকার্তার কথাই ধরুন। এই শহরের শিল্প ও সংস্কৃতির সঙ্গে ভারতের প্রচুর মিল। শুধু তাই নয়, শহরের শপিং সেন্টারগুলোও ভারতীয় পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য অনবদ্য।’ সেই কথা মনে করেই কোভিড পরবর্তীকালে শপিং সেন্টারগুলোকে নতুন রূপে সাজানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘আমাদের জাতীয় পোশাক ‘কাইম’ এমন একটা নকশায় বোনা হয় যাকে আমরা ‘ইকাট’ বলি। আপনাদের ইক্কত উইভের সঙ্গে তা প্রায় সম্পূর্ণই এক। এমন বিভিন্ন সাদৃশ্য রয়েছে ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার সংস্কৃতিতে। সেগুলো তুলে ধরার প্রচেষ্টায় রয়েছি আমরা। এবং এই কাজেই মহিলারা বেশি সক্রিয় বলে আমাদের মনে হয়।’
এছাড়াও গতানুগতিকতা বা ট্র্যাডিশনাল ট্যুরিজম নামে একটি বিশেষ পর্যটন শুরু করছেন মার্থিনি। তিনি জানালেন পর্যটনের এই ধরনটিতে একটু হেলথ ট্যুরিজম থাকবে যেখানে যোগাসন ও আয়ুর্বেদের সহযোগে স্বাস্থ্য ফেরানোর উপায় সম্পর্কে জানবেন পর্যটকরা। আরও থাকবে ধর্মীয় পর্যটন। ইন্দোনেশিয়ায় এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে হিন্দু মন্দিরের অবস্থান চোখে পড়ে। সেই মন্দিরগুলো আবারও পুনঃনির্মাণ করার পরিকল্পনাও তাঁরা নিয়েছেন। ভারতের মতোই ইন্দোনেশিয়াতেও সংস্কৃতির প্রাচুর্য। ঐতিহাসিক গুরুত্বও এই দেশে প্রচণ্ড। ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার সম্পর্ক চিরকালই মধুর। সেই সম্পর্কটাই আরও দৃঢ় করার চেষ্টা করছেন মার্থিনি।
ইন্দোনেশিয়া পর্যটন বিভাগের একটা বড় অংশ হোম স্টে। এগুলো অধিকাংশই মহিলা পরিচালিত। মেয়েদের মধ্যে আন্তরিকতা বেশি। অভ্যর্থনার কায়দা তাঁরা অনেক বেশি জানেন। এই সূত্রেই মার্থিনি মনে করেন মহিলারা স্বভাব বা আচরণগত দিক দিয়ে পুরুষদের তুলনায় অনেক উষ্ণ এবং আন্তরিক। সেই কারণে পর্যটন বিভাগে আরও বেশি মাত্রায় মহিলা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে এই প্রয়াস আরও অনেকটাই বাড়ানো হবে বলেও মার্থিনি আশাবাদী।
ভারতে ইন্দোনেশিয়ার অ্যামবাসাডর ইনা এইচ কৃষ্ণমূর্তি এই বিষয়ে বললেন, থাকার সঙ্গে খাওয়া দাওয়াও পর্যটনের একটা বড় অংশ। ইন্দোনেশিয়ায় বেশিরভাগ রেস্তরাঁই মহিলারা চালান। পর্যটন যত বাড়বে মহিলাদের হাতও ততই শক্ত হবে বলে মনে করেন ইনা। তিনি জানালেন, ইন্দোনেশিয়ার সংস্কৃতির একটা বড় অংশ এখানকার খাবার। এই খাবারগুলো আঞ্চলিক। কিছু খাবার এমনও রয়েছে যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। এমন খাবার রাঁধা ও পরিবেশনের কায়দা একেবারেই আলাদা। পর্যটকদের কাছে এই ধরনের খাবার পরিবেশন করার কাজে মেয়েরাই সবচেয়ে বেশি পারদর্শী। তাই পর্যটন দপ্তরে মেয়েদের প্রাধান্য।’
যে কোনও দেশের মতোই ইন্দোনেশিয়াতেও পর্যটনের কিছু ইউএসপি রয়েছে বলে মনে করেন ইনা। তিনি বললেন, পর্যটকদের একটা ওয়ার্ম ওয়েলকাম বা সাদর আমন্ত্রণ জানাতে না পারলে বিদেশে তাঁদের আড়ষ্ট লাগে। আর এই সাদর আমন্ত্রণ জানানোর ক্ষেত্রে মহিলাদের ভূমিকা চিরকালই পুরুষদের চেয়ে কিছুটা অন্যরকম। যাকে বলা যায়, স্বস্তিদায়ক। এছাড়া মেয়েদের হাসিমুখেরও কদর সর্বত্র! ইন্দোনেশিয়াও সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। ইনা আরও বলেন, যুগ যত এগচ্ছে মহিলারা ততই ঘরে বাইরে কাজ করছেন অবাধে। শুধুই মহিলা পর্যটকদের জন্য নির্দিষ্ট ভ্রমণ সূচি তৈরি হচ্ছে। সেক্ষেত্রেও ফিমেল অ্যাটেন্ডেন্টদের কদর ক্রমশ বাড়ছে। ফলে নিজের দেশেও পর্যটন বিভাগে আরও বেশি মহিলা নিয়োগ করতে চান তিনি।