সাংগঠনিক কর্মে বড় সাফল্য পেতে পারেন। উপস্থিত বুদ্ধি আর সাহসের জোরে কার্যোদ্ধার। বিদ্যায় সাফল্য। ... বিশদ
নারীর পরিচালনাই শুধু নয়, নাটকগুলোর বিষয়ও ছিল নারীকেন্দ্রিক। যেমন ভূমিসূতা দলের পরিচালনায় ‘ইয়েস’ নাটকটি একটি মেয়ের গল্প। এটি একক নাটক। এই নাটকে এমন একটি মেয়ের জীবন তুলে ধরা হয় যে পুরুষশাসিত পরিবারে বড় হয়ে উঠেছে। মহিলা হওয়ার অপরাধে তাকে বাড়ির অন্যান্য পুরুষের মতো বাইরের কাজ করতে দেওয়া হয় না। বরং তাকে বোঝানো হয় যে সংসার করা, সন্তানপালন ইত্যাদি নিয়েই তাকে থাকতে হবে। কিন্তু এই মেয়েটি সংসারের চার দেওয়ালের বাইরে বেরিয়ে সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। শুরু হয় তার জীবনের লড়াই। শেষ পর্যন্ত মেয়েটির লক্ষ্যপূরণ হয় কি না সেই গল্প নিয়েই নাটক ‘ইয়েস’।
‘সূত্রপাত’ দলটি ১৯৯০ সাল থেকে সামাজিক নাটক পরিচালনা করছেন। এই নারীদিবসে তাদের পরিচালক জয়তী বসুর নিবেদন ‘এলাটিং বেলাটিং সই লো’। পরিচালক এখানে এমনই একটি নারী চরিত্র এঁকেছেন, যিনি সংসারের মধ্যে থেকেই স্বতন্ত্র। সাধারণের মধ্যেই যে অসাধারণের বীজ লুকিয়ে থাকে সেটা পরিচালক প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন। এখানে নাটকের মধ্যে কল্পনা ও বাস্তবের মিলন ঘটিয়েছেন নাট্যকার। একজন সাধারণ গৃহবধূ স্বপ্ন দেখে অসাধারণ হওয়ার। সেই স্বপ্নই তাঁর কল্পনায় বাস্তব রূপ পায়। নাটকের ভিতর আর একটি নাটক দেখানো হয়েছে এখানে। সেই নাটকের একটি চরিত্র মৃণালের সঙ্গে বাস্তবিক নিজের মিল খুঁজে পান সাধারণ ওই গৃহবধূটি। এই মিলই তাঁর জীবনে এক নতুন আবিষ্কারের মতো হয়ে দাঁড়ায়। নাটকের চরিত্রটি অজান্তেই গৃহবধূটির সই হয়ে ওঠে। মেয়েরা একে অপরের মধ্যেই নিজেদের নতুন করে আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়।
মা বাবা আর সন্তানের জীবনের গল্পগুলো স্বপ্ন আর প্রত্যাশার বিনিসুতোয় বাঁধা। সেখানে আনুপাতিক বিশ্লেষণে স্বপ্নপূরণ আর হারানোর গল্প তৈরি হয়। দুষ্টু নামে চরিত্রটির জীবনও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। তার প্রত্যাশা ভাঙার নেপথ্যে সেই চিরাচরিত সমস্যা— সময়ের অভাব। ব্যস্ত জীবনের দৌড়ে পাল্লা দিতে গিয়ে সন্তানের জীবনের শিকড়টা মাটির সঙ্গে গেঁথে দেওয়ার অক্ষমতা। ফলে দুষ্টু আধুনিক নারী হয়ে স্বাধীনতার ডানা মেলে উড়তে শেখে ঠিকই, কিন্তু শান্তি পায় না। বুঝতে পারে না এই অনন্ত স্বাধীন উড়ানের শেষ কোথায়? এইভাবে বিভিন্ন সামাজিক সম্পর্কের গল্প, নারীর অবস্থানের গল্প বলে ‘দুষ্টুকথা’ নাটকটি। শ্যামবাজার নাট্যচর্চা দলের নিবেদন এই নাটকটি পরিচালনা করেছেন মৃত্তিকা বসু।
‘তৃষ্ণা’ নাটকটি লিখেছেন মাম্পি রায়। পরিচালনা করেছেন শ্রাবন্তী পাল। একাঙ্ক এই নাটকটি রূপান্তরকামী এক মানুষের জীবনের কাহিনি। এমন জীবনের বিচিত্র কিছু ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে এখানে। এবং সেই সূত্রে নাট্যকার বুঝিয়েছেন আমাদের সমাজে সব মানুষই কোনও না কোনও সময় লিঙ্গবৈষম্যের শিকার হয়ে থাকেন। কিন্তু সেই বৈষম্যের ঊর্ধ্বে উঠে সমানাধিকার পাওয়ার লড়াইটাই জীবনের প্রতিপাদ্য। অনেকেই এই লড়াইটাকে জীবন দর্শনের পর্যায় নিয়ে যায়। সেই লড়াইটাই অভিনয় ও সংলাপের মাধ্যমে তুলে ধরতে চেয়েছেন নাট্যকার ও পরিচালক।
‘দলছুট’ সংস্থার তরফে মিঠু হালদার বলেন, প্রতি বছরের মতোই এবছরও মেয়েদের কথা সমাজের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি। তাঁর এই প্রয়াস আগামী দিনেও চলবে। নারী কণ্ঠ সমাজের কাছে তুলে ধরার কাজে তিনি ব্রতী।