সাংগঠনিক কর্মে বড় সাফল্য পেতে পারেন। উপস্থিত বুদ্ধি আর সাহসের জোরে কার্যোদ্ধার। বিদ্যায় সাফল্য। ... বিশদ
কী করে প্রার্থনা করতে হয় উপদেশ দিয়ে এখন খ্রীস্ট তাঁর স্বরচিত প্রার্থনার মন্ত্র আমাদের ব্যবহারের জন্য উচ্চারণ করছেন। সম্ভবতঃ ইহা পৃথিবীর মধ্যে একটি অধিক প্রচলিত প্রার্থনা এবং বহু মানুষ তাদের প্রাত্যহিক জীবনে এটি উচ্চারণ করে। খ্রীস্টের অন্যান্য বাণীর মতো এ প্রার্থনাটিও খুব সরল ও তাৎপর্যপূর্ণ। আমরা একে আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করলে মর্মার্থ হারাব। যারা সাধন-ভজন করে, এর অর্থ তাদের কাছে প্রতিভাত হয়; কারণ এতে সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছে মৌলিক উপাদানগুলি—যার উপর আধ্যাত্মিক জীবন ন্যস্ত। প্রার্থনার প্রতিটি অংশ আদর্শকে স্মরণ করিয়ে দেয়, আর প্রণালী পূর্বেই বলা হয়েছে। মানুষের প্রার্থনাকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়—একটি মানব-কেন্দ্রিক অপরটি ভগবৎ-কেন্দ্রিক। সে সব লোকের প্রার্থনা মানব-কেন্দ্রিক তারা ভগবানের কাছে চায় পার্থিব ধন-দৌলত, যন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি, সুখ-সম্পদ ও সফলতা। অপরপক্ষে ভগবৎকেন্দ্রিক প্রার্থনা আসে বিচার ও ভক্তিপ্রোণোদিত হয়ে। এ-সব মানুষ কেবল ভগবানকেই চায়, কারণ তারা জানে জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভগবান লাভ। খ্রীস্টের প্রার্থনা হল ভগবৎ-কেন্দ্রিক। এখানে যীশু আমাদের উপদেশ দিয়েছেন, কী ভাবে আমরা ঈশ্বরচৈতন্যে মগ্ন হয়ে শাশ্বত আনন্দ ও মুক্তি পেতে পারি। কেউ যদি আন্তরিকভাবে ভগবানকে চায় তবে সে খ্রীস্টের প্রার্থনাকে ব্যবহার করতে পারে। তার কোন ধর্মীয় বিশ্বাস বা মতবাদের ভিতর দিয়ে না গেলেও চলবে। সে যদি বিশ্বাস করে যে ভগবান আছেন ও তাঁকে দর্শন করা যায় এবং যথাযথভাবে খ্রীস্টের উপদেশ পালন করে, তাহলে সে পূর্ণতা লাভ করবে।
প্রার্থনা শুরু হচ্ছে: হে আমাদের প্রিয় পিতা—
খ্রীস্ট আমাদের শিক্ষা দিচ্ছেন প্রার্থনাকালে আমাদের কি ভাবে ভগবানকে চিন্তা করতে হবে। ঈশ্বরের নৈব্যক্তিক সত্তার উপর ধ্যান করা আমাদের অধিকাংশের পক্ষে দুরূহ। মনে হয় তিনি একটা ভাব বিশেষ; অথচ আমরা অনুভব করি যে আমরা কামনা-বাসনা বিজড়িত রক্তমাংসের শরীর। সুতরাং আমরা যেমন পূর্বের অধ্যায়ে দেখেছি, খ্রীস্ট অন্যান্য ধর্মাচার্যদের মতো ভক্তিযোগের উপর জোর দিয়েছেন—যাতে ঈশ্বরকে ব্যক্তিবিশেষরূপে পূজা করা হয়। ভগবানকে যাতে আমরা সমস্ত হৃদয় ও মন-প্রাণ দিয়ে ভালবাসতে পারি—যা খ্রীস্ট চেয়েছেন—সেজন্য আমাদের তাঁকে আপনার জন বলে বোধ করতে হবে। আর তাঁকে আপনার করতে গেলে আমাদের একটা নির্দিষ্ট সম্বন্ধ তাঁর সঙ্গে পাতাতে হবে। মানবিক স্তরে প্রেমের যে সব অভিব্যক্তি আছে দৈবী স্তরে তা একই রকম। হিন্দুদের একটা প্রার্থনায় আছে: ‘‘তুমি আমাদের স্নেহময়ী মাত্য, তুমি আমাদের করুণাময় পিতা, তুমি আমাদের প্রকৃত বন্ধু এবং নিত্য সঙ্গী। তুমি আমাদের জ্ঞান ও যথাসর্বস্ব।’’ প্রথমে ভগবানের সঙ্গে একটা সম্বন্ধ ঠিক করে এগুতে হবে; তারপর এ বোধ আসবে যে তিনিই সব। হিন্দুধর্মের ভক্তিযোগের আচার্যদের মতে মানুষের সঙ্গে ভগবানের পাঁচটি প্রধান সম্বন্ধ বিদ্যমান। প্রথম, শান্ত-স্রষ্টা ও সৃষ্ট প্রাণীর মধ্যে যে সম্বন্ধ; দ্বিতীয়, দাস্য—প্রভু ও ভৃত্য বা সন্তান ও পিতা-মাতার মধ্যে যে সম্বন্ধ; তৃতীয়, সখ্য—বন্ধুতে বন্ধুতে যে সম্বন্ধ; চতুর্থ, বাৎসল্য—মাতা-পিতা ও সন্তানের মধ্যে যে সম্বন্ধ; পঞ্চম, মধুর—স্বামী ও স্ত্রীর বা প্রেমিক ও প্রেমাস্পদের সম্বন্ধ।