যে কোনও ব্যবসায় শুভ ফল লাভ। বিশেষ কোনও ভুল বোঝাবুঝিতে পারিবারিক ক্ষেত্রে চাপ। অর্থপ্রাপ্তি হবে। ... বিশদ
অতীতে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম-সহ অনেক বিরোধী নেতা এজন্য সরকারকে সমালোচনায় বিদ্ধ করেছেন। এই পরিস্থিতিকে চিদম্বরম ‘ট্যাক্স টেররিজম’ আখ্যা দিয়েছেন বারবার। বুধবার কলকাতায় বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন মঞ্চ থেকে এই ‘ক্ষতিকর’ কেন্দ্রীয় ব্যবস্থার নিন্দা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। নিয়ম মেনে কর প্রদানে তাঁর আপত্তি নেই। তিনি বলেন, ‘সকলেই কর দিচ্ছেন। শিল্প করতে হলে কর দিতেও হবে। তাতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু অতিরিক্ত কর আদায়ের নামে কেন্দ্রীয় এজেন্সি লেলিয়ে দিয়ে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। শিল্পপতিদের মানসিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি।’ আর্থিক অপরাধ (মানি লন্ডারিং, বিদেশি মুদ্রা আইন লঙ্ঘন ইত্যাদি) দমনে ব্যবহৃত কেন্দ্রীয় এজেন্সি ইডি এবং আয়কর বিভাগের অতিসক্রিয়তা নিয়েই আপত্তি মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর অভিযোগ, এজেন্সিরাজের পিছনে কাজ করছে প্রতিহিংসার রাজনীতি। অনিয়ম, বেনিয়ম বা দুর্নীতির তদন্তের নামে শিল্পপতিদের টুঁটি চেপে ধরা হচ্ছে। এর ফলে বহু শিল্পপতি বাধ্য হচ্ছেন দেশ ছেড়ে যেতে। দিনের শেষে ক্ষতি হচ্ছে ব্যবসার, কর্মসংস্থানের এবং সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতির।
কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস-সহ অনেক বিরোধী নেতৃত্বের এই অভিযোগেরই তাৎপর্যের প্রতিফলন কি আজ সামাজিক প্রেক্ষাপটেও? মাঝেমধ্যেই সামনে আসে ভুয়ো সিবিআই অফিসারদের কীর্তিকলাপ। এই জালিয়াতদের কেউ কেউ ধরা পড়ে এবং অনেকে গাঢাকা দেয় সফলভাবেই। টাটকা ঘটনা শ্রীরামপুরে। আয়কর অফিসার সেজে তিন দুষ্কৃতী হানা দেয় এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর দোকানে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই ভুয়ো ‘আয়কর হানা’ যেখানে হয়েছে সেখানে সোনা গলানোর কাজ হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর পক্ষে ওই হানাদারদের অবিশ্বাস করা শক্তই ছিল। কারণ ধোপদুরস্ত পোশাকে সেজে আসা লোকগুলির গলায় ঝোলানো ছিল আইটি ডিপার্টমেন্টের আইডি কার্ড (অনুমান যে পরিচয়পত্রগুলি ভুয়োই ছিল)! তার উপর এমন হানা তো হামেশা হয় দেশের নানা প্রান্তে। কাকতালীয়ই হয়তো, একই দিনে একই সময়ে হুগলি জেলারই অন্য এক প্রান্তে চলছিল সত্যিকার আইটি রেইড। শ্রীরামপুর থেকে ৩০ কিমি দূরে পোলবায়, সত্যিকার আয়কর অভিযানটি চলছিল একটি মদের কারখানায়। এছাড়া গত দু’বছরে সারা বাংলায় এত ইডি, সিবিআই এবং আইটি রেইড হয়েছে তা এককথায় বেনজির। স্বভাবতই কেন্দ্রীয় এজেন্সির মতিগতি সবকিছু বোধের অতীত। ব্যাপারটা একদা ‘বর্গি এল দেশে’ বা ‘গব্বর আ যায়ে গা’র মতোই জুজুতে পরিণত হয়েছে! আইনের শাসন এবং সমস্ত ধরনের অসাধু ব্যবসায় লাগাম অবশ্যই দরকার। কিন্তু ইদানীংকালের অকারণ বাড়াবাড়ি একেবারেই কাম্য নয়। সুশাসন এবং ত্রাসসৃষ্টি কখনওই সমার্থক হতে পারে না। এতে প্রশাসনিক ব্যর্থতাই বেশি মাত্রায় প্রকট হচ্ছে। এর ফল হিতে বিপরীত হতে পারে। ঘোলা জলে মাছ ধরার সুযোগ নিতে আরও উৎসাহিত হতে পারে রকমারি জালিয়াত চক্র। তাতে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কাই প্রবল হয়। ব্যাপারটি ভবিষ্যতে সত্যিকার সরকারি টিমের পক্ষেও বিপদের কারণ হতে পারে।