মানসিক অস্থিরতা দেখা দেবে। বন্ধু-বান্ধবদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। কর্মে একাধিক শুভ যোগাযোগ আসবে। ... বিশদ
বিজ্ঞানীদের মতে মাটির সম্পর্কে আমরা যদি এখনও সচেতন না হই তবে আগামী দিনে কৃষি ব্যবস্থায় কালো দিন আসতে পারে। রাসায়নিক সার প্রয়োগের পরিবর্তে জৈব সার প্রয়োগ করতে পারলে মাটির স্বাস্থ্য এবং উর্বরতা দুই ভালো থাকে। একটা গাছ কখনই রাসায়নিক পদার্থ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারে না। জৈব পদার্থ তাকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হয়। রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে মাটির নীচে থাকা জীবাণুরা তার থেকে জৈব পদার্থ তৈরি করতে সাহায্য করে।
জেলার এক মহিলা কৃষক শ্রাবণী বসু বলেন, আমাদের জমিতে ধান, লাউ, পেঁয়াজকলি, কুমড়ো সবকিছু চাষ করেছি। রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে দিন দিন জমির উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। আমরা চাই জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে। অপর এক চাষি মহেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, পটল, বিন, মটরশুটি জমিতে লাগিয়েছি। রাসায়নিক সার প্রয়োগে জমির ক্ষতি যেমন হচ্ছে, তেমনই খরচও বাড়ছে। তাই আমরা ঠিক করেছি চাষে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াব।
কৃষি অধিকর্তার চন্দন পাল বলেন, রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে জানানো হয়েছে প্রত্যেক পাঁচ সেকেন্ডে পৃথিবীর বুকে গড়ে প্রায় এক বিঘা জমির মাটি ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। এটা যদি চলতে থাকে রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসেব বলছে, ২০৯০ সালের মধ্যে সমস্ত মাটির ক্ষয় হয়ে যাবে। তখন আর চাইলেও সেই মাটিকে স্বাস্থ্যকর অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যাবে না। কারণ, আমার চাইলে নতুন করে মাটি তৈরি করতে পারি না। তাই মাটিকে যদি আমরা গুরুত্ব না দিই বা মাটির স্বাস্থ্যের দিকে আমরা না তাকাই তবে আগামী দিনে আমাদের অনাহারে থাকতে হবে। চাষের ক্ষেত্রে যতই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আসুক না কেন মাটির স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে তার কোনওটার প্রয়োগ সম্ভব হবে না। সেটা ঠিক রাখতে গেলে জৈব পদার্থের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
কৃষি বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, শাকসব্জির চাষে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে ভালো ফলন দেয়। কিন্তু মাটির যা অবস্থা, তাতে রাসায়নিক সার কতটা দিলে কতটা প্রতিক্রিয়া হবে, সেটা চাষিদের জানা দরকার। কারণ, মাটি সুস্থ না থাকলে রাসায়নিক সার প্রয়োগে ক্ষতি হবে মাটির। সেক্ষেত্রে জৈবসার প্রয়োগ করতে পারলে উর্বর ক্ষমতা বাড়বে। বিভিন্ন পচনশীল দ্রব্য মাটিতে গর্ত করে নির্দিষ্ট কয়েক দিন রেখে দিলে সেখান থেকে সহজেই জৈবসার পাওয়া যায়। তারসঙ্গে ফসফেট যোগ করতে পারলে সেই সারের গুণগত মান বেড়ে যায়। এছাড়া গোবর থেকেও জৈবসার পাওয়া যায়। সেই সারগুলি মাটিতে প্রয়োগ করতে পারলে জৈব পদার্থের পরিমাণ অনেকটাই বাড়বে।
এক কৃষি আধিকারিক বলেন, জৈবপদার্থ না থাকলে তাহলে মাটিতে যে জীবাণুরা রয়েছে তারা বাঁচতে পারবে না। সেই জীবাণুদের মূল খাদ্য হচ্ছে জৈব পদার্থ। মাটিতে জৈব পদার্থ যত কমে যাবে জীবাণুর সংখ্যাও তত কমে যাবে। জীবাণুর পরিমাণ যখন কমে যাবে তখন রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে সেগুলি পরিবর্তিত হয়। গাছের খাবার সেই পরিমাণ তৈরি করতে পারবে না জীবাণুরা। কোনও গাছ রাসায়নিক পদার্থ গ্রহণ করতে পারে না। তাকে খাবারের মতো উপযোগী করে দিলে তবেই সে খেতে পারে। আর রাসায়নিক সার থেকে গাছের উপযোগী খাবার তৈরি করতে জীবাণুরাই প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করে। জীবাণুদের বাঁচাতে তাই জৈব সার যোগ করা ভীষণ জরুরি। চাষের ক্ষেত্রে মাটিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে ৬০-৭০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। ৩০-৪০ শতাংশ কাজে লাগে।