অর্থকড়ি আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সাংসারিক সুখ বাড়বে। জটিল কর্ম সম্পাদনে সাফল্য ও ওপরওয়ালার আস্থালাভ। ... বিশদ
উশ্রীর ধারে হাঁটতে বেরিয়ে খুব বেশি বাঙালি নজরে আসে না। পাহাড়-জঙ্গল ঘেরা গিরিডি শহর বরং এখন দূষণের সঙ্গে সংসার পেতেছে। উশ্রী জলপ্রপাত থেকে নদীর নেমে আসা ধারার সঙ্গে বাড়ছে দূষণের মাত্রা। দু’দিক থেকে এসে মিশছে তরল বর্জ্য... কলকাতারখানার।
বহু বছর আগে কিছু সিমেন্টের বেঞ্চ তৈরি হয়েছিল। এখন তার ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে দিকে দিকে। শিশুদের জন্য দোলনা, স্লিপ কাত হয়ে পড়ে ইতিহাসের পাতায় জায়গা খুঁজছে। পাবলিক টয়লেট নেই। এমনকী পাহাড়ে উঠে জিরিয়ে নেওয়ার ন্যূনতম সুবিধাটুকুও নিরুদ্দেশ। আছে বলতে গিরিডি থেকে টুন্ডি মার্গ (বড় রাস্তা) হয়ে উশ্রী জলপ্রপাত যাওয়ার রাস্তায় ভেঙে পড়া এক কংক্রিটের তোরণ। উশ্রীর নাম তাতেও নেই। শুধু জ্বলজ্বল করছে বিধায়কের নাম। সত্যজিৎ রায়ের নামে ফলক? কিংবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর? হতাশ হতেই হবে। এই গিরিডি আর যে বাঙালিদের নেই! একের পর এক পরিবার দোঁ-আশলা এবং অবাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে সম্পত্তি বিক্রি করে চলে গিয়েছে বাঙালিয়ানার খোঁজে। বলতে গেলে কোনও স্কুলেই আর বাংলা পড়ানো হয় না। গার্ডেনার্স গলির দীর্ঘদিনের বাঙালি বাসিন্দা নন্দা ভট্টাচার্য। স্কুল শিক্ষিকা ছিলেন। অবসর নিয়েছেন সদ্য। বলছিলেন, ‘জানেন... এই শহরের মকতপুরে বাঙালি বিদ্যালয় তৈরি করেছিলেন আমার বাবা অমূল্যকুমার ভট্টাচার্য। সেখানেই আজ আর বাংলায় পড়ানো হয় না। অথচ আমরা এই স্কুলে বাংলা পড়ে বড় হয়েছি। এখন ঝাড়খণ্ড সরকার স্কুলটা চালায়। বাংলা পড়ানো তুলে দিয়েছে। এমনকী এই মাঠে যুগ যুগ ধরে চলে আসা বাঙালিদের কালীপুজো নিয়েও ওদের আপত্তি। মামলা পর্যন্ত হয়েছে। এই গিরিডি তো আমরা চিতে পারি না!’
রাস্তার নাম সুপ্রকাশ ব্যানার্জি রোড। বাঙালির দেওয়া জমি। তাই তাঁর ছেলের নামে রাস্তা। কিন্তু রাস্তার নাম লেখা হিন্দিতে। বাংলার চিহ্নমাত্র নেই। একদল টুরিস্ট এসেছে উশ্রীর ধারে। পিকনিক পার্টি। বাংলা শুনে কৌতূহল হল। জানা গেল, মেদিনীপুর পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে এসেছেন। তারাপীঠ গিয়েছিলেন। তারপর অন্য বেশ কিছু জায়গা ঘুরে উশ্রী জলপ্রপাত দেখতে এসেছেন। একেবারে প্যাকেজ ট্যুর। এরপর ঝাড়খণ্ডের অন্য সব পর্যটনের জায়গাতেও যাবেন। তাঁদের জন্য রান্নার কাঠ কেটে এনেছেন আদিবাসী জনজাতির দুই প্রতিনিধি। এই কাজই করেন তাঁরা। পিকনিক পার্টিকে রান্নার কাঠের জোগান দেওয়া। জঙ্গলই তাঁদের বাঁচিয়ে রেখেছে। এখনও। যত্রতত্র ময়লা পড়ে। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঢাকা পড়ছে আবর্জনায়।
পর্যটনস্থল হয়েও এখন গিরিডি আর পর্যটকদের নয়। বাঙালির তো নয়ই। অথচ, এই গিরিডিতে বসেই রবি ঠাকুর ডাক দিয়েছিলেন বিপ্লবের। বাঙালিকে বলেছিলেন, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে...।’ সেই গিরিডিতেই বাঙালি সত্যি আজ একা। গুটিকয় পরিবার ইতিহাস আর ঐতিহ্য ধরে হেঁটে চলেছে। একলা।