নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে টানা ৪১ দিন পূর্ণ কর্মবিরতি চালিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। যার জেরে জোর ধাক্কা খেয়েছে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। কিন্তু সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা অচল করে দেওয়ার পিছনে একশ্রেণির বেসরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকদের হাত রয়েছে উল্লেখ করে বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘরের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উষ্মা প্রকাশ করেছে বলেই সূত্রের খবর। জানা গিয়েছে, এদিন তিনি বলেন, অচলাবস্থার জেরে বেসরকারি হাসপাতালগুলির ৪০ শতাংশ ব্যবসা বৃদ্ধি হয়েছে। অথচ সরকারি হাসপতালে এসে চিকিৎসা না পেয়ে গরিব মানুষের প্রাণ গিয়েছে। আসলে সকালে যে চিকিৎসকরা কর্মবিরতিকে ইন্ধন জুগিয়েছেন, তাঁরাই রাতে প্রাইভেট চেম্বার বা হাসপাতালে গিয়ে প্র্যাকটিস করেছেন। তাঁদের নাম ফোন নম্বর সব আমাদের জানা। তবে অচলাবস্থা কাটিয়ে দ্রুত স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার প্রয়োজনীয়তার কথাও উঠে এসেছে তাঁর এদিনের বার্তায়। কারণ, এদিন একেবারে স্নেহমিশ্রিত কন্ঠে বৈঠকে উপস্থিত চিকিৎসকদের তিনি প্রশ্ন করেন, আপনাদের কি অভিমান কমেছে? জানা গিয়েছে, উত্তরে একটি মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপ্যাল বলেন, ম্যাডাম ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। তার উত্তর শেষ হওয়ার আগেই, কিছুটা ভর্ৎসনা সুরেই মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাফ কথা, দেখুন মানুষের হার্ট অ্যাট্যাক কিন্তু ধীরে ধীরে আসে না। ওটা চট করে হয়। তখন তাঁর প্রাণ বাঁচাতে পরিবার পরিজনেরা আপনাদের কাছে নিয়ে আসে। কারণ, আপনারা ভগবানের রূপ। ফলে পরিষেবা দিন। আপনাদের পরামর্শ অনুযায়ী, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সমস্ত পরিকাঠামো তৈরি করে দেওয়ার দায়িত্ব আমার।
এদিন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বাস্থ্যসচিব নারায়ন স্বরূপ নিগম সহ সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপ্যাল, হেড অব দি ডিপার্টমেন্ট, সিএমওএইচদের নিয়ে নবান্ন সভাঘরে প্রায় দু’ঘন্টা বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি জানান, আজকের বৈঠক খুব পজিটিভ হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সমস্ত পরিকাঠামো ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার কাজ শুরু হয়েছে। পূর্ত দপ্তর ছাড়াও এই সমস্ত কাজ মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপালদের নিজেদের করিয়ে নিতে বলা হয়েছে। যারা রাজমিস্ত্রির কাজ করতে আসবেন, আগাম তাঁদের নাম ঠিকানা জেনে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমস্ত রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। নতুন সমিতিতে চেয়ারম্যান করা হয়েছে অধ্যক্ষদের। সূত্রের খবর, এই সমিতিতে এবার থেকে জায়গা পাবেন জুনিয়র ডাক্তাররাও। জানা গিয়েছে, এদিন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে এমসিএইচ ইউনিট, চিত্তরঞ্জন সেবা সদন হাসপতালে হস্টেল সহ একাধিক পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রস্তাব আসেন। জানা গিয়েছে, চিত্তরঞ্জন সেবা সদন হাসপাতালে হস্টেলের বিষয়টি পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে দেখে নেওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে এবার ডেঙ্গু কম থাকলেও, ম্যালেরিয়া নিয়ে সতর্কমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।