উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে বাধার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে শুভ যোগ। ব্যবসায় যুক্ত হলে ... বিশদ
সিপিএম ছেড়ে ওঁর অন্য কোনও রাজনৈতিক দলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতেই শিলিগুড়ির রাজনীতিতে আবার ‘গুরু-শিষ্যের’ লড়াই হতে চলেছে বলে মনে করছেন অনেকে। এরআগে নান্টু পাল সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর গুরু-শিষ্যের লড়াই দেখেছে শিলিগুড়ি। এবার অশোক ভট্টাচার্য ও শঙ্কর ঘোষের মধ্যে গুরু-শিষ্যের নতুন লড়াই হতে পারে। তিন দশক ধরে বামপন্থী আন্দোলনের কর্মী ছিলেন শঙ্কর। ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় ৩০ বছর আগে। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যও হন। স্কুলের চাকরি, ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি বামপন্থী রাজনীতিতে নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরেছিলেন। রাজনৈতিক মহলে তিনি অশোক ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ট হিসেবেই পরিচিত।
এদিন দল ছাড়ার কারণ জানাতে গিয়ে নাম না করে ‘গুরু’ সেই অশোক ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধেই তোপ দেগেছেন। তিনি বলেন, বাম আন্দোলনে দেখে এসেছি বহু মতবাদকে গুরুত্ব দেওয়ার দিকটি। কিন্তু চারবছর ধরে শিলিগুড়িতে একজন ও তাঁর সঙ্গে থাকা কয়েকজনের কথাই শেষ কথা। এটা মেনে নিতে পরিনি। পরিস্থিতি পরিবর্তনের অনেক চেষ্টা করেছি, কাজ হয়নি। গত চারবছর ধরে রক্তক্ষরণের যন্ত্রণা আর সহ্য করতে না পেরেই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিতে হল।
এতদিন বাদে ভোটের মুখে কেন তিনি দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন? বলেন, ঘটনাচক্রে আমার সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়টা ভোটের মধ্যে পড়ে গিয়েছে। জেলা বামফ্রন্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, গতবার ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি আসনে শঙ্করবাবু টিকিটের দাবি জানিয়ে আশাবাদী ছিলেন। শেষপর্যন্ত টিকিট পাননি। তখন থেকেই তিনি বেসুরো হয়ে ওঠেন। কিন্তু তাঁকে শিলিগুড়ি পুরসভায় কাউন্সিলারের টিকিট দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছিল। কাউন্সিলার নির্বাচিত হওয়ার পর বামফ্রন্ট পরিচালিত পুরবোর্ডে মেয়র পরিষদ সদস্য হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে অশোক ভট্টাচার্য তাঁকে নিজের ছায়াসঙ্গী করেছিলেন।
এবারও টিকিটের দাবি জানিয়ে ছিলেন শঙ্করবাবু। কিন্তু সিপিএম শিলিগুড়ি কেন্দ্রে অশোক ভট্টাচার্যের নাম ঘোষণা করেছে। ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি কেন্দ্রে বাম প্রার্থী হয়েছেন দিলীপ সিং। এটা আগাম জানতে পেরেই তিনি সিপিএম ছেড়ে টিকিটের প্রত্যাশায় গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন। সূত্রের খবর, গেরুয়া শিবিরের উত্তরবঙ্গের এক এমপি দলের তরফে সবুজ সঙ্কেত দিতেই শঙ্কর ঘোষ সিপিএম ছাড়ার কথা ঘোষণা করেন। যদিও শঙ্করবাবু এসব ‘আলোচনা’ মানতে নারাজ। এদিকে শঙ্কর ঘোষ বিজেপির টিকিট পেতে পারেন এমন সম্ভাবনা দেখা দিতেই গেরুয়া শিবিরের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে বিদ্রোহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে। ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এবং শিলিগুড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপির সাধারণ নেতা-কর্মীরা ক্ষোভের সঙ্গে জানিয়েছেন, শঙ্কর ঘোষকে দল টিকিট দিলে তাঁরা ভোট দেবেন না, ভোট করাবেনও না।
দার্জিলিং জেলার সিপিএমের সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, শঙ্কর ঘোষের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে দলের সঙ্গে ব্ল্যাকমেল করেছেন। দলের শৃঙ্খলা ভেঙে ব্যক্তিগত একটি চিঠিকে তিনি প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছেন। দলবিরোধী কাজের জন্য ওঁকে এদিন দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি দলের সর্বক্ষণের কর্মী না হয়েও খুব অল্প বয়সেই দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছিলেন। কাজেই তিনি যেসব অভিযোগ করছেন তার কোনও ভিত্তি নেই।