মানসিক অস্থিরতা দেখা দেবে। বন্ধু-বান্ধবদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা দরকার। কর্মে একাধিক শুভ যোগাযোগ আসবে। ... বিশদ
ভোটের ফলাফল নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে দলের নেতা-কর্মীদের ভোটারদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাওয়ার নিদান দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী। সেই নির্দেশ কার্যকর করতে প্রশান্ত কিশোরের (পিকে) দিদিকে বলো কর্মসূচি। ভোটারদের বাড়িতে রাত কাটানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন পিকে। এই প্রকল্পের হাত ধরে প্রথম পরীক্ষা ছিল এই তিন বিধানসভা উপনির্বাচন। তৃণমূলের এক সূত্রের মতে, তিন কেন্দ্রে তিন ধরণের বৈশিষ্টের দিকে পিকের নজর থাকলেও, জনসংযোগকে সর্বত্রই সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল।
উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ তফসিলি জাতি তথা রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যাধিক্য। বার দুয়েক বাদ দিলে কোনও দিনই ওই কেন্দ্রের ভোটাররা বিমুখ করেনি কংগ্রেসকে। গত লোকসভা ভোটে ভোল বদলে সেই সমর্থন ঝুঁকে গিয়েছিল বিজেপির দিকে। প্রায় ৫২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। তৃণমূল ছিল তৃতীয় স্থানে। এবার উল্টে গিয়েছে সব হিসেব। বিজেপির ভোট প্রপ্তির পরিমাণ প্রায় দশ শতাংশ কমেছে। আর তৃণমূল ৪৩.৬ শতাংশ ভোট পেয়ে কালিয়াগঞ্জে ঘাসফুল ফুটিয়েছে শুধু তাই নয়, মাস ছয়েক আগে লোকসভা ভোটে উত্তরবঙ্গে সাফ হয়ে যাওয়া তৃণমূলের কাছে এই জয় বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে। এনআরসি নিয়ে বিজেপির আক্রমণাত্মক প্রচারের পাল্টা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভয়বাণী— এই দুইয়ের লড়াই ভোটারদের মন বদলে দিয়েছে। মাত্র ছয়মাস আগে যারা পদ্মুমুখী হয়েছিল, তারাই এবার ঘাসফুলে আস্থা রেখেছে। ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তৃণমূল নেতারা এনআরসির আতঙ্কের কথা বারে বারে বলেছেন। নির্বাচনী প্রচারেও বিজেপিকে আক্রমণে তৃণমূলের প্রধান অস্ত্র ছিল এনআরসিকে ঘিরে জনমানসে তৈরি হওয়া আতঙ্কের পরিবেশ। দক্ষিণবঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া নদীয়ার করিমপুর সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। নাগরিকত্বকে ঘিরে যে বিতর্ক বিজেপি উস্কে দিয়েছে, তার প্রভাব করিমপুরে পড়া স্বাভাবিক। এবার ভোটের ব্যবধান বাড়িয়ে সহজ জয় পেয়েছে তৃণমূল। গেরুয়া শিবিরের ধারণা ছিল, এনআরসি বা প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে ঘিরে হিন্দু সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করলে তার ফসল তুলবে বিজেপি। কিন্তু অসমে এনআরসি থেকে বাদ যাওয়া বহু মানুষের অবস্থা বাংলার হিন্দুদের মনেও ত্রাস তৈরি করেছে। কালিয়াগঞ্জে তার প্রেক্ষিতেই মানুষ মাত্র ছয়মাসে তার রাজনৈতিক আনুগত্য বদলে ফেলেছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। করিমপুরে আরও সংহত হয়েছে তৃণমূলের জনসমর্থন। খড়্গপুর সদর অবশ্য একেবারেই ভিন্ন প্রকৃতির। অবাংলাভাষী এবং দক্ষিণী জনগোষ্টী অধ্যুষিত রেল শহর ভিত্তিক এই বিধানসভা কেন্দ্রে এনআরসি কোনও বিষয় নয়। স্থানীয়ভাবে বিধায়ক তথা রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও সার্বিকভাবে এনআরসি সেখানে প্রভাব ফেলেনি।
এই তিন কেন্দ্রের মধ্যে একমাত্র অভিন্ন সূত্র ছিল জনসংযোগ। কোথাও বিজেপির তোলা আতঙ্কের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীর এনআরসি বিরোধী অবস্থানের কথা বলে মানুষকে সাহস যোগানো। কোথাও উন্নয়নের কথা মানুষের দরবারে পৌঁছে দেওয়ার নামে জনসংযোগ বাড়ানোই ছিল এই নির্বাচনের প্রধান কৌশল। উল্লেখ্য, দলের একাংশের জনবিচ্ছিন্নতাকেই সপ্তদশ লোকসভা ভোটে ধাক্কা খাওয়ার কারণ বলে চিহ্নিত করেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নিদান ছিল, ভোটারদের ঘরের দাওয়ায় পৌঁছে যেতে হবে। এবার বিধানসভা ভিত্তিক পরিকল্পনা হয়েছিল। নির্দিষ্ট এলাকার নির্দিষ্ট দাবি দাওয়াকেই অগ্রাধিকার দেওয়া বস্তুত জনসংযোগ বৃদ্ধিরই সুফল বলে মনে করে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এই কৌশল যে ফল দিয়েছে, তা তিনটি ভিন্ন ধর্মী বিধানসভা ক্ষেত্রের সাফল্যেই প্রমাণ মেলে।