পাইকপাড়া থেকে টালা ব্রিজ ধরে মাত্র ৫-৬ মিনিটেই পৌঁছে যাওয়া যায় শ্যামবাজারে। কিন্তু ব্রিজ ভাঙার ফলে ঘুরপথে ওই রাস্তাটুকু যেতেই লেগে যেত ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা। অবশেষে বৃহস্পতিবার সেই ‘রাহুর দশা’ কাটল।
ত্রিধারা সম্মিলনীতে তখন তিল ধারণের জায়গা নেই। বিভিন্ন দেশের কনসাল জেনারেলরা পুজো পরিক্রমায় বেরিয়েছেন। পায়ে হেঁটেই তাঁরা দক্ষিণ কলকাতার ঠাকুর দেখছেন। তাঁদেরই একজন আপ্লুত হয়ে বলছিলেন, প্রতিটা মণ্ডপের একটা আলাদা আলাদা গল্প রয়েছে।
কলকাতার পুজো মানচিত্রে বৃহস্পতির মতো জ্বলজ্বলে উপস্থিতি আহিরীটোলা, কুমোরটুলি, হাতিবাগানের। আর কয়েক বছরের মধ্যেই এই তিনটি বনেদি পুজো শতবর্ষে পা দিতে চলেছে। এবার ৯২ বছরে পা দিল কুমোরটুলি সর্বজনীন দুর্গোৎসব।
সে এক সময় ছিল। বাঙালির জীবনজুড়ে তখন শুধুই যৌথ পরিবার, পাড়া-সংস্কৃতি। সময়ের সঙ্গেই ধীরে ধীরে বদলেছে ছবিটা। ফ্ল্যাট, আবাসনের ঘেরাটোপে আটকে পড়েছে জীবন। এসেছে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির ভাবনা। কিন্তু পরিবারকেন্দ্রিকতার সেই ভাবনা মুছে যায় দুর্গাপুজোর দিনগুলোয়।
রাজস্থানের গ্রাম, কেদারনাথের মন্দির, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ব্যবসায়ী ও হকারদের পসরায় সাজছে হাবড়ার বিভিন্ন পুজো মণ্ডপ। কোথাও আবার ক্ষুদ্র কুটিরশিল্পের চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। থিমের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে কোথাও প্রতিমা তৈরি হয়েছে, কোথাও আবার মা সাজবেন গ্রাম্য বধূর সাজে।
ভূতের রাজা দিল বর, জবর জবর তিন বর, এক দুই তিন’– গুপি গাইন বাঘা বাইন সিনেমার এই বিখ্যাত গানটি শুনলেই বিশ্ববরেণ্য পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ছবিটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এবারের পুজোয় সেই সত্যজিৎ রায়কেই শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত বাগনানের খালোড় দক্ষিণপল্লি।
যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কোথাও শিবলিঙ্গ, কোথাও চার ধামের মন্দির, কোথাওবা থিম স্বপ্নের স্বর্গ। এভাবেই নৈহাটি, হালিশহর, কাঁচরাপাড়ায় জোরকদমে চলছে পুজোর আয়োজন। যা দেখতে ভিড় উপচে পড়েছে। মণ্ডপে মণ্ডপে আলোর ঝর্নাধারা। তৃতীয়ার দিন থেকেই পথে নেমেছেন দর্শনার্থীরা। দিন যত এগচ্ছে, ভিড় ততই জমাট হচ্ছে। নৈহাটির বিজয়নগর সেবা সমিতি মণ্ডপসজ্জায় শিবলিঙ্গকে তুলে ধরেছে। মণ্ডপের উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। পুজো কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, এবার পুজো ৭১ বছরে পড়ল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচি। নৈহাটির রাজেন্দ্রপুর মৎস্যবাজার পুজো কমিটি এবার সিকিমের চার ধামকে মণ্ডপসজ্জায় তুলে ধরেছে। কমিটির অন্যতম কর্তা তপন চক্রবর্তী বলেন, মন্দিরে যে শিল্পশৈলী রয়েছে, তা তুলে ধরা হয়েছে মণ্ডপসজ্জায়। কাঁচরাপাড়া বাগমোড় ত্রিপর্ণ সর্বজনীন পুজো কমিটিও এবার থিম করেছে চারধামকে। পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা প্রবীর সরকার বলেন, দর্শনার্থীরা মণ্ডপে গঙ্গার ধারের সন্ধ্যারতি দেখতে পাবেন। এবার আমাদের পুজোর ৬০ বছর। হালিশহর খাসবাটি বলাকা শিশু মহল পুজো কমিটির থিম স্বপ্নের স্বর্গ। ফুল, আকাশ, জল, আলো— সব কিছুই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান শুভঙ্কর ঘোষ বলেন, আমাদের প্রতিমাতেই রয়েছে চমক। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে শান্তির বার্তা দিতেই গৌতম বুদ্ধের আদলে মূর্তি গড়া হয়েছে। বীজপুরের ১৬’র পল্লি দুর্গাপুজো কমিটির প্রধান উদ্যোক্তা কাঁচরাপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান কমল অধিকারী। এই মণ্ডপও নজরকাড়া।
