শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহবৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে মানসিক ... বিশদ
কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, জমিতে দু’ধরণের বীজতলা তৈরি হয়। কাদা মাটির বীজতলা এবং ধূলো মাটির বীজতলা। কাদামাটির বীজতলা তৈরির জন্য প্রথমদিন থেকে শেষদিন পর্যন্ত পর্যাপ্ত জলের প্রয়োজন হয়। ধূলো মাটির জমিতে প্রথমে জল না লাগলেও পরে পর্যাপ্ত জল লাগে। দ্বিতীয়ত, এই দুই ধরণের বীজতলা অনেক আগে থেকে তৈরি করতে হয়। ফলে, শ্রম বেশি লাগে। খরচও বেশি হয়। তাই ট্রে-র মাধ্যমে ধানের চারা তৈরির কারখানার পরিকল্পনা করে কৃষিদপ্তর। যার নাম-‘প্যাডি সিডিং ফ্যাক্টরি’। বাংলায় নাম দেওয়া হয়েছে- ‘ট্রেতে ধানের চারা তৈরির কারখানা’।
উত্তরবঙ্গে প্রথম এই ধরণের কারখানা তৈরি হয়। সেখানকার বিশেষজ্ঞরাই পূর্ব বর্ধমানে এসে এই কারখানা তৈরির টেকনিক্যাল পরামর্শ দিয়ে গিয়েছেন। এরপর স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা সদস্যদের নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে কারখানা তৈরির বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তারপরই এই খরিফ মরশুমে এই জেলার মন্তেশ্বর, কেতুগ্রাম-১, জামালপুর, খণ্ডঘোষ এবং কাটোয়া-১ নিয়ে পাঁচটি ব্লকে এই কারখানা শুরু হয়েছে। জেলার ২৩টি ব্লকেই এই কারখানা তৈরি হবে। প্রয়োজনে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের সঙ্গে স্থানীয় ক্লাবগুলিকেও যুক্ত করা হবে। তাই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের দ্বারা এত ব্যাপকভাবে চারা তৈরির কারখানা কার্যত দক্ষিণবঙ্গের প্রথম।
কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রেতে ধানের চারা তৈরি কারখানা তৈরির জন্য প্রশিক্ষণের পাশাপাশি, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের বীজ কেনার টাকা, ট্রে কেনার টাকা এবং মেশিন, কৃষিযন্ত্র প্রভৃতি দেওয়া হয়েছে। বীজ ফেলার আগে ট্রে’তে এক ইঞ্চি মাটি দিতে হবে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ মাটি থাকবে এবং ২০ শতাংশ গোবরসার। তারপর মেশিন দিয়েই ট্রে’তে বীজ ফেলা হবে। সাধারণ বীজতলায় প্রচুর জল লাগলেও ট্রে’তে প্রয়োজন মতো স্প্রে করেই জল দেওয়া হবে। এর ফলে, জল কম লাগবে এবং জলের অপচয়ও হবে না। ২৫ দিনের মধ্যেই চারা তৈরি হবে। তিন পাতা বা চারপাতা হলেই মাঠে রোপণ করা যাবে।
কৃষকদের উপকার, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের স্বনির্ভর করা ছাড়াও এই কারখানা তৈরিতে আরও একটি বড় উদ্দেশ্য রয়েছে। তা হল চাষের কাজে কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার। ধানের চারা রোপণ করার জন্য এখন কৃষিযন্ত্র বাজারে এসেছে। সরকারি ভর্তুকিতে ওই কৃষিযন্ত্র পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু, সাধারণ বীজতলায় তৈরি ধানের চারা ওই কৃষিযন্ত্রে ব্যবহার করা যাবে না। একমাত্র ট্রেতে তৈরি ধানের চারা এই কৃষিযন্ত্রে ব্যবহার করা হবে। ফলে, জেলায় কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানোরও উদ্দেশ্য রয়েছে। কৃষিযন্ত্র ব্যবহার করা হলে শ্রমিক অনেক কম লাগবে। ফলে, কৃষকেরা আরও উপকৃত হবেন।
এই ‘আতমা’ প্রকল্পের পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রজেক্ট ডিরেক্টার আবদুস সালাম বলেন, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের দিয়ে এই কারখানা আমাদের জেলায় প্রথম। আতমা প্রকল্পে করা হচ্ছে। পাঁচটি ব্লকে শুরু হয়েছে। সব ব্লকেই হবে। প্রতিটি ব্লককে ২০ একর জমিতে ধানের চারা লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। ওই কারখানা থেকে এখন কৃষকদের বিনামূল্যেই চারা দেওয়া হচ্ছে। তবে, পরবর্তী পর্যায়ে কৃষকেরা টাকা দিয়ে কারখানা থেকে চারা কিনতে পারবেন। প্রয়োজনে কৃষিদপ্তরের সহায়তা নিয়ে কৃষকেরা ব্যক্তিগতভাবেও ওই ধরণের কারখানা তৈরি করতে পারবেন। তিনি বলেন, যাঁরা কারখানা করেছেন, সেই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের কৃষিযন্ত্র দেওয়া হয়েছে। কৃষকেরা তাঁদের কাছ থেকে ওই যন্ত্র ভাড়া নিতে পারবেন। ব্যক্তিগতভাবে কৃষিযন্ত্র কিনতে গেলে আবেদন করতে হবে। এই কারখানা তৈরিতে ভালো সাফল্য মিলছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা যেমন আর্থিকভাবে উপকৃত হবেন, তেমনই কৃষকেরাও উৎসাহিত হচ্ছেন।