সংবাদদাতা, রামপুরহাট: মহাকুম্ভে শাহিস্নানে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে রামপুরহাটের এক প্রৌঢ়ার মৃত্যু হল। মৃতার নাম গায়ত্রী দে(৫২)। বাড়ি রামপুরহাট পুরসভার ১১নম্বর ওয়ার্ডের বাউরিপাড়ায়। চারদিন ধরে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। তাঁর মোবাইল বন্ধ থাকায় পরিবারের লোকজন যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। রামপুরহাট থানায় মিসিং ডায়েরিও করেছিল পরিবার। এদিকে কুম্ভে স্টিং অপারেশনের খবর পড়ে উৎকণ্ঠা আরও বাড়ে পরিবারের। শুক্রবার সকালে পুরসভার পক্ষ থেকে পরিবারের সঙ্গে দেখা করে প্রৌঢ়াকে খুঁজে বের করার আশ্বাস দেওয়া হয়। দুপুর ৩টে নাগাদ এলাকার একজনের কাছ থেকে কুম্ভমেলায় মৃতদের ছবি দেখে প্রৌঢ়াকে শনাক্ত করে পরিবার। তাঁরা দাবি করেন, পদপিষ্ট হয়ে গায়ত্রীদেবীর মৃত্যু হয়েছে। থানা ও মহকুমা শাসকের কাছে মৃত্যুর খবর লিখিতভাবে জানিয়ে দেহ ফিরিয়ে আনার আর্জি জানায় পরিবার। বিধায়ক তথা বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন সন্ধ্যায় পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। সেখান থেকে তিনি জেলাশাসক ও মুখ্যসচিবের সঙ্গে কথা বলেন। তার আগে মহকুমা শাসকের সঙ্গে দেখা করে প্রৌঢ়াকে খুঁজে পেতে তৎপর হওয়ার আবেদন জানান।জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, আমরা পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। এর সত্যতা সম্পর্কে নিঃসন্দিহান হওয়ার চেষ্টা করছি। রাজ্য সরকারের নির্দেশক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মহকুমা শাসক সৌরভ পাণ্ডে বলেন, প্রৌঢ়ার ছেলে আমার কাছে এসে মৃত্যুর খবর দেন। কোনওভাবে মৃত কয়েকজনের ছবি পেয়ে তিনি মাকে চিনতে পারেন। সেখানকার কোন থানার অধীনে দেহ রয়েছে সেব্যাপারে পুলিসকে খোঁজ নিতে বলেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেহ আনার ব্যবস্থা করা হবে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সোমবার গায়ত্রীদেবী বাপেরবাড়ি মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানের বাসিন্দা ৩১জনের দলের সঙ্গে ফরাক্কা স্টেশন থেকে ট্রেনে প্রয়াগরাজের উদ্দেশে রওনা দেন। মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত পরিবারের লোকজন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। পরদিন সকালে দলের বাকিরা তাঁর ছেলেকে ফোন করে গায়ত্রীদেবীকে খুঁজে পাচ্ছেন না বলে জানান। এরপরই দুশ্চিন্তা বাড়ে পরিবারের। বৃহস্পতিবার প্রৌঢ়ার ছেলে প্রতাপ দে রামপুরহাট থানায় মিসিং ডায়েরি করেন। প্রতাপ বলেন, মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ ভাগ্না যিশু দাসের সঙ্গে মায়ের কথা হয়েছিল। সেইসময় মা জানিয়েছিল, ১৭কিমি দূরে নামিয়ে দিয়েছে। মেলার দিকে যাচ্ছে। প্রচুর ভিড়। স্নান করার পর ফোন করবে বলেও জানিয়েছিল। তারপর থেকে মাকে ফোন করা হলেও মোবাইল বন্ধ। বাকিরা খুঁজতে থাকেন। কিন্তু তাঁরা মাকে খুঁজে না পেয়ে ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরছেন। এদিকে স্টিং অপারেশনের খবর পড়ে পরিবারের উৎকণ্ঠা বাড়ে। এদিন বিকেলে এলাকার বাসিন্দা তথা টিএমসিপি নেতা ঋত্বিক ধীবর মহাকুম্ভে মৃত কয়েকজনের ছবি পান। তিনি গায়ত্রীদেবীকে চিনতে পারেন। মৃতার বাড়িতে গিয়ে সেই ছবি দেখালে তাঁরা মাকে শনাক্ত করেন। কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের সঙ্গে দেখা করে পাশে থাকার আশ্বাস দেন পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন ভকত। বিজেপি নেতা ধ্রুব সাহাও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন।
মৃতার ছেলে প্রতাপ বলেন, মায়ের শাড়ি ও সোয়েটার দেখে চিনতে পেরেছি। ছবি দেখে মনে হচ্ছে পদপিষ্ট হয়ে মা মারা গিয়েছে। আমি ঠেলাগাড়িতে তেলেভাজা বিক্রি করি। মায়ের দেহ বাড়ি নিয়ে আসার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই। তাই দেহ আনার জন্য প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি। • (ইনসেটে) গায়ত্রী দে। শোকস্তব্ধ পরিবারের সদস্যরা। -নিজস্ব চিত্র