হস্তশিল্পীদের কর্মোন্নতি ও নতুন কর্মের সুযোগ লাভের সম্ভাবনা। পেশাদার ডাক্তার, আইনজীবী ও অধ্যাপকদের পক্ষে দিনটি ... বিশদ
গত রবিবার থেকে রাইকা, ভাঁড়ারিয়া পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকাতেই বিচরণ করছিল রয়্যাল বেঙ্গল। শুক্রবার সন্ধ্যার পর সে হঠাৎ করেই ভাঁড়ারিয়ার জঙ্গল ছাড়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওইদিন পৌনে ৮টা নাগাদ বাঘটিকে বান্দোয়ান-কুইলাপাল রাস্তা পার হতে দেখেন এক বাইক আরোহী। ওই এলাকার একটি জলাশয়ের পাশে বাঘের পায়ের ছাপও দেখতে পাওয়া যায়। একেবারে লোকালয়ের উপর দিয়েই হেঁটে যায় বাঘটি। নেকড়া, বিক্রমডি হয়ে বোরোর কাছেও বাঘের পায়ের ছাপ মেলে। রাত থেকেই আশেপাশের গ্রামবাসীদের সতর্ক করার কাজও শুরু হয়। বাঘটি যাতে কোনওভাবেই লোকালয়ে না ঢুকে পড়ে, তার জন্য সবরকম চেষ্টা করতে থাকেন বনকর্মীরা। পটকা ফাটিয়ে বাঘের গতিপথ পরিবর্তনের প্রবল চেষ্টা করতে থাকেন বনকর্মীরা। ভোরবেলা বাঘটি ফের ভাঁড়ারিয়ার জঙ্গলেই ফিরে আসে। তখনই ট্র্যাপ ক্যামেরায় ছবি ধরা পড়ে। বাঘের অবস্থান নিশ্চিত হতেই বনদপ্তরের কর্মী ও কর্তাদের তত্পরতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
শনিবার সকাল থেকেই বাঘকে বাগে আনতে সবরকম চেষ্টা শুরু করেন বনকর্তারা। ভাঁড়ারিয়া পাহাড়ের একদিকের প্রায় পাঁচ কিলোমিটারের বেশি অংশ জাল দিয়ে ঘেরা হয়। জঙ্গলের পার্শ্ববর্তী প্রতিটি গ্রামের ৩০ থেকে ৩৫জন করে লোক নেওয়া হয়। বনদপ্তরের কর্মী ও স্থানীয় বাসিন্দা মিলিয়ে প্রায় ৪০০ জন ১৪টি টিমে ভাগ হয়ে যায়। তাঁদের নির্দেশ দেওয়ার জন্য ছিলেন বনদপ্তরের পদস্থ আধিকারিকরাও। স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে ছিল লাঠিসোঁটা, হুলা, কুড়ুল, তির ধনুক, বল্লমের মতো অস্ত্র। শুরু হয় জঙ্গল অভিযান। জঙ্গলের একদিক থেকে চিত্কার চেঁচামেচি, হল্লা করতে করতে করতে তাঁরা এগতে থাকেন। বাঘের অবস্থান নিশ্চিত করতে মুহুর্মুহু ফাটানো হয় পটকা। বাঘ বের হলেই তাকে ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করার জন্য প্রস্তুত থাকেন শার্প শ্যুটাররা। বিকেল পর্যন্ত এই অভিযান চলে। যদিও সারাদিনের নিট ফল ‘জিরো’! তবে, বনদপ্তরের এই পদক্ষেপ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বনকর্মীদের এই কাণ্ড কারখানায় অন্যান্য বন্যজন্তুদের ব্যাপক আতঙ্কের মধ্যে পড়তে হয়। জঙ্গলের বাইরে থেকে অন্যান্য বন্যাজন্তুর আর্তনাদ শোনা যায়।
রাজ্যের মুখ্য বনপাল(কেন্দ্রীয় চক্র)এস কুলান ডাইভাল বলেন, বাঘকে ধরার সবরকম চেষ্টাই আমরা করছি। কংসাবতী দক্ষিণের ডিএফও পূরবী মাহাত বলেন, শনিবার দিনভর বাঘকে খোঁজা হচ্ছিল। তবে বাঘের দেখা মেলেনি। বাঘটিকে ধরতে একাধিক খাঁচা পাতা হচ্ছে। রাতে বনকর্মীরা পাহারায় থাকবেন। বনদপ্তর সূত্রের খবর, বাঘকে খাঁচাবন্দি করতে সবরকম চেষ্টাই করছেন বনদপ্তরের আধিকারিকরা। এক বনকর্তার দাবি, বাঘটি সঙ্গমের তীব্র বাসনাতেই অভিসারে বেরিয়েছিল। সে সঙ্গিনীকে খুঁজছে। তাকে ফাঁদে ফেলতে চিড়িয়াখানা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে বাঘিনির প্রস্রাব। এদিন তা ছড়ানো হয় খাঁচার আশেপাশে। যাতে বাঘ তাতে আকৃষ্ট হয়ে খাঁচায় প্রবেশ করে। তাছাড়া টোপ হিসেবে শুধু গবাদি পশুই নয়, বরং থাকছে এক বিশেষ ‘রেসিপি’। পচা মাংসের সঙ্গে ডিম সহ আরও কিছু মিশিয়ে তা প্রস্তুত করা হয়েছে। এসবের টানে বাঘ খাঁচাবন্দি হয় কি না, তাই এখন দেখার।
(ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়েছে বাঘ। )