নিজস্ব প্রতিনিধি, সিউড়ি: ছিনতাই ঠেকাতে গিয়ে খুন ডাম্পার মালিক। ধারাল অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে কোপানো হয় তাঁকে। মারা গেলে ধান জমিতে দেহ ফেলে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। বুধবার কাকভোরের ঘটনা। ঘটনাস্থল মহম্মদবাজারের সোঁতশাল। এলাকাটি পাথর শিল্পাঞ্চল বলে পরিচিত। এর আগেও দুষ্কৃতী তাণ্ডবের সাক্ষী থেকেছে এই শিল্পাঞ্চল। স্বভাবতই এদিনের ঘটনায় আতঙ্কিত স্থানীয় ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। পুলিস রাত পর্যন্ত দুষ্কৃতীদের কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তা নিয়ে ক্ষোভে ফঁসছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পুলিস জানিয়েছে, নিহত ওই ডাম্পার মালিকের নাম মনিরুদ্দিন মণ্ডল ওরফে শান্তি (২৪)। দিঘলগ্রাম এলাকাতে তাঁর বাড়ি। 
স্থানীয় ও পুলিস সূত্রে জানা যায়, বুধবার ভোররাতে সোঁতশালের একটি পেট্রল পাম্পের সামনে আসেন শান্তি সহ ডাম্পারের চালক, খালাসি সহ অন্যান্যরা। অনেকদিন ধরেই ওই এলাকায় ছিনতাই হচ্ছিল। হোটেলের সামনে বাইক নিয়ে কিংবা রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকে দুষ্কৃতীরা। সুযোগ বুঝে টাকা, মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে পালায়। এর আগেও বড়সড় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিল। সেই কারণে এদিন সতর্ক ছিলেন ডাম্পার মালিক ও চালকরা।  কাজের শেষে ওই পেট্রল পাম্প লাগোয়া একটি জায়গায় ব্যবসার হিসেব-নিকেশ করছিলেন তাঁরা। তখনই চোখে পড়ে কয়েকজন কমবয়সী যুবক তাঁদের ফলো করছে। তারা ছিনতাইয়ের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। জানতে পেরেই ব্যবসায়ীরা পিছু ধাওয়া করেন। দুষ্কৃতীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়। পিছনে পিছনে দৌড়চ্ছিলেন শান্ত। কিন্তু কোনও কারণে তিনি দলছুট হয়ে পিছিয়ে পড়েন। সেই সুযোগে শান্তকে ধরে ফেলে দুষ্কৃতীরা। অন্ধকার রাস্তায় তিনি বেশ বেকায়দায় পড়ে যান। ছিনতাইবাজরা ছুরি দিয়ে তাঁকে কোপাতে শুরু করে। পেটে ও পিঠে গভীর ক্ষত হয়ে যায়। মনিরুদ্দিন নিথর হয়ে পড়লে দেহটি পাশের ধান জমিতে ফেলে এলাকা ছাড়ে দুষ্কৃতীরা। 
এদিকে, অন্যান্য ডাম্পার মালিক, চালকরা শান্তকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। ভোর পাঁচটা নাগাদ তাঁরা দেখতে পান রক্তাক্ত শান্ত মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে জমিতে। তাঁকে উদ্ধার সিউড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। সকালে পুলিস ঘটনাস্থলে হাজির হয়। জেলার অতিরিক্ত পুলিস সুপার (হেডকোয়ার্টার) পরাগ ঘোষের নেতৃত্বে তদন্ত শুরু হয়। নিহতের দাদা মিন্টু মণ্ডল বলেন, ‘গত মাসের ২৫ তারিখ এখানে ছিনতাই হয়েছিল। আবার এদিনও ছিনতাই করতে এসেছিল। সেটা ঠেকাতে গিয়ে দাদাকে খুন হয়ে যেতে হল! যারা আমার ভাইকে মেরেছে, তাদের যেন কঠোর শাস্তি হয়। 
পুলিস তদন্তে নেমে ওই পেট্রল পাম্প ও অন্যান্য জায়গার সিসি ক্যামেরার  ফুটেজ সংগ্রহ করে। বিকেলের  পর পুলিস কুকুর নিয়ে আস হয়। ধান জমিতে পড়ে থাকা একটি জুতো ও মাস্ক ও শান্তর জামা শুঁকে ছিনতাইকারীদের পালানোর পথের হদিশ দেয় কুকুরটি। সেই মতো আলিনগর এলাকা থেকে বছর চল্লিশে একজনকে পুলিস আটক করে থানায় নিয়ে আসে। অতিরিক্ত পুলিস সুপার বলেন, তদন্ত শুরু হয়েছে। কে বা কারা যুক্ত রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঘটনার পর আতঙ্কিত পাথর শিল্পাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা। যেভাবে পুজোর মুখে দুষ্কৃতীদের হামলায় একজন ডাম্পার মালিক খুন হলেন তা দেখে নিরাপত্তা নিয়ে সকলেই উদ্বিগ্ন। নাম প্রকাশে  অনিচ্ছুক ওই এলাকার এক নামী ব্যবসায়ী বলছিলেন, ‘রাতের দিকে আমরা অনেকেই টাকা পয়সা নিয়ে বাড়ি ফিরি। যেভাবে পর পর কয়েকটা ঘটনা ঘটল, তাতে আমাদের চিন্তা বাড়ছে। পুলিস নিরাপত্তার বিষয়ে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালন করুক।