প্রায় সম্পূর্ণ কাজে শেষ মুহূর্তে বাধা পড়ায় বিচলিত হয়ে পড়তে পারেন। সন্তানের বিদ্যা শিক্ষার বিষয়ে ... বিশদ
আধপেট খেয়ে দিন গুজরান করা কোটি কোটি ভারতবাসীর পক্ষ থেকে আপনাকে অভিনন্দন। আজ আপনি আরও একটি বাজেট পেশ করতে চলেছেন। রেকর্ড অষ্টমবার। এর জন্য বাড়তি একথালা অভিনন্দন অবশ্যই আপনার প্রাপ্য। হাজার হাজার কোটি টাকার হিসেব, পরিসংখ্যান, বরাদ্দ এবং অবশ্যই প্রতিশ্রুতি... এতকিছু আজ আবার আমরা শুনব আপনার মুখে। প্রবল উৎকণ্ঠা নিয়ে বসে দেখব, কোন কোন পণ্যের দাম বাড়ল। টেনশনে থাকব, আপনি সত্যিই কি মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীদের জন্য আয়করে সুরাহা করলেন? নাকি প্রতিবারের মতো এবারও আম জনতার হাতে লজেঞ্চুস ছাড়া কিছু থাকল না? বাজেটে এই দু’টিই তো বাস্তব। কারণ, এর বাইরে যা আপনি ঘোষণা করবেন, তা আদৌ দিনের আলো দেখবে কি না, সে নিয়ে বিস্তর সন্দেহ আছে। সাধারণ মানুষ বাজেটের কচকচি বোঝে না। বাজেট তাদের কাছে প্রাপ্তি এবং অপ্রাপ্তির ঘোষণা ছাড়া কিচ্ছু না। আজও বাজেট শুরুর আগে তারা ভাবতে বসবে, গত বছর যা যা ঘোষণা আপনি করেছিলেন, তার কতটুকু প্রলেপ রোজকার জীবন যাপনের ক্ষতে লেগেছে? মূল্যবৃদ্ধির জ্বালায় এবার কি অন্তত বার্নল লাগানোর সুযোগ হবে? বাড়ির বেকার ছেলেটা চাকরি পাবে? প্রশ্ন তো এগুলোই।
গত বাজেটেও আপনার ঘোষণার বেশিরভাগটা জুড়ে ছিল কর্মসংস্থান, একের পর এক প্রকল্প। জানেন তো, আমাদের বাংলায় রকের ভাষায় একটা কথা খুব চলে... লোকটা স্কিম করছে। মানে, সোজা ভাষায় ধাপ্পাবাজি। আপনি মাননীয়া অর্থমন্ত্রী। এমন শব্দ আপনার জন্য ব্যবহার করা যায় না। করবও না। কিন্তু সরকার যদি পাহাড়প্রমাণ প্রতিশ্রুতি দিয়ে, তারপর তা বেমালুম চেপে যায়, তাকে এই ‘ভিন্ন অর্থের স্কিম’ ছাড়া অন্য কিছু বলা যায় কি? দয়া করে আপনিই উত্তরটা বলে দেবেন। বুঝলেন না? উদাহরণ দেওয়া যাক। প্রধানমন্ত্রী ইন্টার্নশিপ স্কিমের ঘোষণা করেছিলেন আপনি। ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ। তার মধ্যে কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রকের ৮০০ কোটি। তারপর? প্রতিশ্রুতির সমাধি বাজেট পুস্তিকার পাতাতেই। আপনি ঘোষণা করেছিলেন, ব্লু-চিপ সংস্থায় ইন্টার্নশিপের সুযোগ পাবেন যুবক-যুবতীরা। তারপরই বাঘা বাঘা চাকরির লাইন পড়ে যাবে। কিন্তু এই ইন্টার্নশিপের সুযোগ কতজন পেয়েছেন? আপনি নিজেও বলতে পারবেন তো? আর জিএসটির নানাবিধ শর্তের জ্বালায় ছোট ছোট সংস্থাগুলির তো শিরে সংক্রান্তি। বহু কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন পথে বসছে হাজার হাজার মানুষ। আর আপনি কী করছেন? শুধুই ঘোষণা! গত বাজেটেও তিনটি স্কিমে ২ কোটি ৯০ লক্ষ কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কতজন চাকরি পেয়েছে? একজনও নয়। কারণ, ওই প্রকল্পগুলিকে বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্য যে সরকারি কাজকর্ম করতে হয়, তার অর্ধেকও হয়নি। ছেলেমেয়েরা চাকরির আশায় বসে থাকছে, তারপর বাধ্য হয়ে চলে যাচ্ছে অসংগঠিত সেক্টরে। আপনার ভারতে এটাই বোধহয় নিয়তি।
পরিকাঠামো খাতে ১১ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলেন আপনি। অথচ, ৪৫ শতাংশই খরচ করতে পারেননি। স্কিল ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলির উন্নয়নে ১ হাজার কোটি টাকা খরচ করবেন বলেছিলেন। কোন আইটিআই, কোন ইনস্টিটিউটের পিছনে করেছেন? ফেলে রাখা টাকা নিয়ে কী করবেন নির্মলাজি? রেখে দেবেন? নাকি স্রেফ চেপে দিয়ে বাজেট ঘাটতি কম দেখাবেন? বহু প্রকল্প এবং বহু বরাদ্দের সঙ্গেই এই ‘আচরণ’ করছে আপনার সরকার। এটাই আপনাদের হ্যাপেনিং ট্রেন্ড। আপনার স্লোগান তো হওয়া উচিত, ‘প্রচার প্রচার প্রচার চাই, প্রচার করেই বাঁচতে চাই’। চুলোয় যাক উন্নয়ন। ভুখা মরুক দেশবাসী।
অধিকারের দাবিতে অবস্থানে বসা কৃষকের প্রতিশ্রুতি ধোয়া জল খেয়ে জীবন চলে না। বরং আইন মারফত ফসলের সহায়ক মূল্য নিশ্চিত করলে তাঁর শান্তি হয়। অসুস্থ বাবার চিকিৎসার খরচ জোগাতে না পারা বেকার ছেলেটি খোঁজে একটা ভদ্রস্থ চাকরি। ‘আসল ভারত’ এটাই। আজও আপনি হয়তো আর একটা নতুন কাঞ্জীভরম শাড়ি পরবেন। ‘লাল শালুতে’ মোড়া ট্যাব হাতে তামিল কবির লাইন আউড়াবেন। প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরির আলোয় দেদার টেবল বাজাবেন শাসক এমপিরা। কিন্তু ১৪০ কোটি দেশবাসীর তরফে একটা কথা বলতে চাই—আমরা আপনার প্রতিশ্রুতির গল্প শুনতে টিভির সামনে বসব না। কারণ, প্রতিশ্রুতি আমাদের চাই না। বাস্তব চাই। মূল্যবৃদ্ধি থেকে মুক্তি চাই। তাই আজ বাজেট যেন আম আদমির ভারতের জন্য হয়। আপনার ভারত নয়।