হস্তশিল্পীদের কর্মোন্নতি ও নতুন কর্মের সুযোগ লাভের সম্ভাবনা। পেশাদার ডাক্তার, আইনজীবী ও অধ্যাপকদের পক্ষে দিনটি ... বিশদ
ক্ষতি সেদিন শুধু অভয়ার বাবা-মায়ের হয়নি। ক্ষতির মুখে পড়েছিল গোটা বাংলা। তরতাজা, নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি এক ছাত্রীর প্রাণহানির ক্ষতি। শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলার সম্মান ধুলোয় মেশানোর ক্ষতি। কর্মবিরতির নামে রাজনীতির চোরাবালিতে ডুবে গিয়েছে এই রাজ্যেরই কোটি কোটি মানুষ। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসার আশায় বসে থাকা প্রাণগুলো কিন্তু আর ফিরবে না। মরিয়া হয়ে কাছের মানুষটাকে বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করিয়ে কোমর ভেঙে যাওয়া পরিবারগুলোও আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। ছোট্ট মুদি দোকানটা বিক্রি করে তাঁদের কেউ এখন হয়তো মাটি ফেলছেন। কেউ হয়তো কাজ খুঁজে নিয়েছেন ইটভাটায়। তাঁদের ক্ষতিপূরণ কে দেবে? চিকিৎসকদের একাংশ আন্দোলন শিখরে থাকার সময় দুনিয়াভর ‘ডোনেশন’ বাবদ যে অর্থ কামিয়েছিলেন, তার থেকে কি ওই মানুষগুলো ক্ষতিপূরণ পাবেন? নাকি সরকারি হাসপাতালের রোগীদের মরতে ছেড়ে দিয়ে বেসরকারি নার্সিংহোমে দেদার প্র্যাকটিসের টাকা তুলে দেবেন মামনি রুইদাসের পরিবারের হাতে?
সমাজের যে দিকটা আপনাদের নজরে আসে না... সেই শ্রেণির মানুষের ঘরে একবার উঁকি দিয়ে দেখুন। এই প্রশ্নগুলোই শুনতে পাবেন। ডাক্তারদের বিরুদ্ধে আমরা কেউ নই। কিন্তু আমরা অবশ্যই এই রাজনীতির বিরুদ্ধে। আম জনতার কাছে ডাক্তাররা ভগবানের থেকে কম নন। চোখ বন্ধ করে তাঁদের হাতে তুলে দেন প্রিয় মানুষটাকে। কিন্তু সেই ডাক্তারই যখন বলেন, ‘কর্মবিরতি চলছে। সব মিটলে আসুন’... অসহায় চোখগুলো দৃষ্টি হারায়। ক্ষতি এই চোখের জলও।
ছ’মাস খুব কম সময় নয়। আম আদমি হিসেবে অঙ্ক কষতে বসুন। ভেবে দেখুন, এই ১৬২ দিনে কী পেলেন, আর কী হারালেন। আর যদি পেয়েই থাকে, কারা পেল? কী স্বার্থ পূরণ হল তাদের? এই ১৬২ দিনে একদিকে বিচার চলেছে আর জি কর কাণ্ডের। আর অন্যদিকে স্রেফ রাজনীতির নামে বিচারের কাঠগড়ায় তুলে দেওয়া হয়েছে বাংলাকে। ঘটনাস্থলে সঞ্জয় একা ছিল না, বৃহত্তর ষড়যন্ত্র, সন্দীপ ঘোষ প্ল্যান করেছিলেন, কলকাতা পুলিস ঠিকমতো তদন্ত করেনি... এমন বহু তত্ত্ব এই ১৬২ দিনে সামনে আনা হয়েছে। শনিবার শিয়ালদহের বিশেষ আদালতের বিচারক যখন রায় ঘোষণা করছেন, এই সব থিওরি ততক্ষণে হাসপাতালের মর্গে শুয়ে পড়েছে। কারণ, আইন-আদালত তত্ত্বে বিশ্বাসী নয়। কোনওদিন ছিল না। ভবিষ্যতেও থাকবে না। মিডিয়া ট্রায়াল বা আন্দোলন মঞ্চ থেকে জন্ম নেওয়া তথাকথিত ‘বিচার’ তাই চায়ের সঙ্গে ‘টা’ হিসেবে ভালো লাগতে পারে। দিনের শেষে নিরামিষ তথ্য-প্রমাণই প্রকৃত দোষীকে সমাজের সামনে বেআব্রু করবে। এদিন সেটাই হয়েছে। আর ‘বর্তমান’ আরও একবার প্রমাণ করেছে, গল্প লেখা, আর খবর করা এক জিনিস নয়।
জাস্টিস প্রত্যেক শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিক চায়। আর জি করের মর্মান্তিক খুনের ঘটনাতেও চেয়েছিল। এখনও চাইছে। এবং পেয়েছে। গোটা বাংলা মনেপ্রাণে প্রার্থনা করছে, কাল দোষীর যেন ফাঁসির সাজাই হয়। কিন্তু জাস্টিসের নামে যদি সমাজের দুর্বল অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়? আগামী কাল সঞ্জয়ের ফাঁসির সাজা হলেও কিন্তু বিচার সম্পূর্ণ হবে না।