পারিবারিক ক্ষেত্রে বহু প্রচেষ্টার পর শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা। সন্তানের কর্ম উন্নতিতে আনন্দ লাভ। অর্থকর্মে শুভ। ... বিশদ
এনকাউন্টারের প্রস্তুতিটা শুরু হয়েছিল ২৪ ঘণ্টা আগে থেকে। গোয়ালপোখরের বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় ঘোরাঘুরি করছে সাজ্জাক, এই তথ্য পাওয়ার পরই রেডি করে ফেলা হয় এই টিমকে। তদন্তকারীদের কাছে খবর আসে, সাজ্জাক তার সঙ্গী আব্দুল মারফত যোগাযোগ করেছে সীমান্ত পারাপারে জড়িত এক ‘দালাল’এর সঙ্গে। মোবাইলে আড়ি পেতে অফিসাররা জানতে পারেন, তার সহযোগীর বাড়ি আব্দুলের বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডিঙ্গিতে যাওয়ার চেষ্টা করছে সাজ্জাক। এদিন সাহাপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের কিচকটোলা গ্রামে সেরানি নদীর ধারে পুলিসি ঘেরাটোপে এলেও, সাজ্জাক যে গুলি চালিয়ে পালানোর চেষ্টা করবে, তাও জানা যায়। কোনওভাবেই সে ধরা দেবে না। একবার বাংলাদেশে পালাতে পারলেই তাকে ধরা সম্ভব নয় ফোনে একথা বলেছে আব্দুল সহ বাকি সহযোগীদের।
সাজ্জাক কোন এলাকায় রয়েছে, তা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পর কীভাবে অপারেশন করা হবে রাজ্য পুলিসের শীর্ষ কর্তাদের নিয়ে শুক্রবার সকাল দশটা থেকেই দফায় দফায় বৈঠক করেন উত্তরবঙ্গ সফররত ডিজি। সীমান্ত লাগোয়া বিভিন্ন গ্রামে বিকেল থেকেই পুলিস ক্যাম্প করতে শুরু করে। এলাকার কারা আসছে, তার উপর নজরদরির জন্য বাইনোকুলার ব্যবহার হয়। ড্রোন উড়িয়ে এলাকায় নজরদারি চলে। গোটা সীমান্ত এলাকায় তখন যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। রাজ্য পুলিসের শীর্ষ কর্তারা দুটি টিম তৈরি করেন। একটি টিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রযুক্তির ব্যবহার করে সাজ্জাকের লোকেশন জানতে। অন্য একটি টিমকে তার গতিবিধির উপর নিরবিচ্ছিন্নভাবে নজরদারি চালাতে বলা হয়। ভোর রাতেই টেকনিক্যাল টিম জানতে পারে, সাজ্জাকের ‘লোকেশন’ বাংলাদেশ লাগায়ো কিচকটোলায়। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে আর একে সিরিজের রাইফেল নিয়ে রেডি হয়ে যায় এসটিফের স্পেশাল টিম। তাদের সঙ্গী হয় রায়গঞ্জ পুলিসের বিশেষ ফোর্স। আটজনের ওই কোর টিমের সকলের কাছে ছিল নাইন এমএম পিস্তল। সকলের কাছে ছিল সাজ্জাকের ছবি। ভোর পাঁচটে নাগাদ টিম রওনা দেয়। সকাল সাতটার আগেই ডিআইজি (রায়গঞ্জ) সুধীর নীলকান্তমের নেতৃত্বে টিম পৌঁছে যায় কিচকটোলায়। ঘন কুয়াশার বাধা সত্ত্বেও যৌথ টিম পজিশন নিয়ে নেয়। বাকি ফোর্স গোটা এলাকা ঘিরে রাখে। যাতে কোনওভাবেই জাল কেটে বেরোতে না পারে অভিযুক্ত। ওয়াররুমে বসে গোটা টিমের উপর নজরদারি চালাচ্ছিলেন রাজ্য পুলিসের চার শীর্ষ কর্তা। প্রতিটা সেকেন্ড তাঁরা হিসেব করে এগচ্ছিলেন। আর নজর রাখছিলেন, শেষ মুহূর্তে কোনওভাবে সাজ্জাক প্ল্যান বদলাচ্ছে না তো! পলাতক অভিযুক্তকে স্পেশাল টিমের এক সদস্য চিহ্নিত করতেই ঘিরে ধরা হয়। আত্মসমর্পণের প্রস্তাব দেওয়া হয় বারবার। উল্টে গুলি ছুড়ে পুলিসকে চ্যালেঞ্জ জানায় সাজ্জাক। পাল্টা জবাব দেয় পুলিসও। একে সিরিজের রাইফেল থেকে প্রথমে হাঁটুতে ‘ওয়ার্নিং শট’। তাতেও কাজ না হওয়ায় আরও দুটি গুলি। একটা লাগে ঘাড়ে আরেকটা পিঠে। লুটিয়ে পড়ে গ্যাংস্টার সাজ্জাক। তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও, ৮টা ১০ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে।