নিজস্ব প্রতিনিধি, মেদিনীপুর ও কলকাতা: প্রসূতি মৃত্যু ঠেকানো এখন রাজ্যের কাছে পাখির চোখ। নেওয়া হচ্ছে নানা কর্মসূচি। এমনই এক সময়ে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়ল রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বুধবার রাত ১০টা থেকে বৃহস্পতিবার ভোররাত—মাত্র ৪-৫ ঘণ্টার মধ্যে জেলারই বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা ৫ জন প্রসূতির গুরুতর অসুস্থ হওয়ার অভিযোগ উঠল। শুক্রবার ভোরে তার মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নাম মামণি রুইদাস (২২)। বাড়ি গড়বেতা থানা এলাকায়। গুরুতর অসুস্থ হয়ে আইটিইউতে ও বিভিন্ন আশঙ্কাজনক রোগীদের ইউনিটে ভর্তি আছেন বাকি চারজন। প্রত্যেকেরই সিজারিয়ান পদ্ধতিতে প্রসব হয়েছিল। কারও তারপরই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে, কারও রক্তচাপ হঠাৎ কমেছে। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই হাসপাতাল চত্বরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রসূতিদের বাড়ির লোকজন। তাঁদের অভিযোগ, নিম্নমানের স্যালাইন ব্যবহার করা হয়েছে। স্যালাইনের বোতলে ছত্রাক জাতীয় বস্তুও লক্ষ্য করা গিয়েছে। সেই বোতলের ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে (যদিও সে ছবি বা ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি বর্তমান)। স্যালাইনের মেয়াদ উত্তীর্ণ ছিল কিনা, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রের খবর, ৫ প্রসূতিকে স্যালাইন সহ ‘কমন’ পাঁচ ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়। যেমন অক্সিটোসিন, বমির ওষুধ, স্পাইনাল অ্যানাস্থেসিয়া দেওয়ার বুপিভ্যাকেন ইঞ্জেকশন ও অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে সেপট্রিয়াজোন ইঞ্জেকশন। সন্দেহের তালিকার রয়েছে সবগুলিই। পাশাপাশি কীভাবে সিজার হয়েছে, নিয়ম মানা হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে আজ মেদিনীপুর যাচ্ছে স্বাস্থ্যভবনের তৈরি ১৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি। পরিবার কল্যাণ ও মেডিক্যাল এডুকেশন শাখার শীর্ষকর্তাদের নেতৃত্বে গাইনি, মেডিসিন, হার্ট, মাইক্রোবায়োলজি প্রভৃতি শাখার বিশেষজ্ঞরা ছাড়াও মেডিক্যাল স্টোর্স ও ড্রাগ কন্ট্রোলের আধিকারিকরাও রয়েছেন সেখানে। হাসপাতালের তৈরি ১০ সদস্যের তদন্তকারী কমিটি প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিয়েছে। ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করার পাশাপাশি দ্রুত সত্য অনুসন্ধান এবং দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে চিকিৎসকদের যৌথ মঞ্চ এবং এসইউসি।
মৃত প্রসূতির পরিবারের সদস্য গৌতম দাসের অভিযোগ, ‘ভুল চিকিৎসায় বাড়ির সদস্য মারা গেলেন। মেয়াদ উত্তীর্ণ স্যালাইন ব্যবহার করা হয়েছে। দোষীদের দ্রুত শাস্তি চাই।’ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডাঃ জয়ন্ত রাউত বলেন, ‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বুধবার প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় প্রসূতিদের। সিজারের পর তাঁরা ভালো ছিলেন। বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন।