অর্থকড়ি আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সাংসারিক সুখ বাড়বে। জটিল কর্ম সম্পাদনে সাফল্য ও ওপরওয়ালার আস্থালাভ। ... বিশদ
বিজ্ঞান গবেষণায় দেশের অগ্রগণ্য প্রতিষ্ঠান হল বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স। সেখানকারই এই দুই বিজ্ঞানী হলেন বিশিষ্ট মাইক্রোবায়োলজিস্ট ডঃ দীপশিখা চক্রবর্তী ও ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রির সহকারী অধ্যাপক ডঃ দেবাশিস দাস।
নেচার জার্নাল গোষ্ঠীর ‘বায়োফিল্ম অ্যান্ড মাইক্রোবায়োমস’ শীর্ষক পত্রিকায় অতিসম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাটি। নতুন আবিষ্কারের জন্য পেটেন্টও পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বর্তমানকে দীপশিখাদেবী বলেন, ‘সুগারের রোগীদের ফুট আলসার নিয়ে এইবার আমরা শুরু করছি হিউম্যান ট্রায়াল। সেখানে ডায়াবেটিকদের ক্লেবসিয়েলা সংক্রামিত পায়ের ক্ষতস্থানে দেওয়া হবে নতুন উৎসেচকটি।’ চিকিৎসক-বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নিউমোনিয়া, প্রস্রাবে সংক্রমণ (ইউটিআই), পিত্তনালীর ইনফেকশন, ক্ষতস্থান ও রক্তে সংক্রমণের মতো প্রাণঘাতী অসংখ্য বিপদের কারণ হল ক্লেবসিয়েলা নিউমোনি। এই ব্যাকটেরিয়ায় রোগীদের নিউমোনিয়া হলে, প্রতি ২ জনে ১ জন মারা যান!
সবচেয়ে চিন্তার ব্যাপার হল, সংক্রমণের জায়গায় দল বেঁধে ‘বায়োফিল্ম’ নামে এক ধরনের পদার্থ তৈরি করে এরা। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, নিউক্লিক অ্যাসিড প্রভৃতি দিয়ে তৈরি এই বায়োফিল্ম। তবে এতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণই বেশি।
প্রশ্ন হল, বায়োফিল্ম থাকায় এদের লাভ কী? বিজ্ঞানীরা বলেন, বায়োফিল্ম ক্লেবসিয়েলার চারপাশে গড়ে তোলে দুর্ভেদ্য প্রাচীর। তাই চিকিৎসকরা তাকে বধ করতে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দিলেও কিছুতেই সেটা কাজ করতে চায় না। আসলে তারা ভেদই করতে পারে না বায়োফিল্ম প্রাচীর। এভাবেই কালে কালেই ড্রাগ রেজিস্টেন্ট হয়ে, এখন প্রায় ‘অপরাজেয়’ চেহারা নিয়েছে ব্যাকটেরিয়াটি।
ডঃ চক্রবর্তী বলেন, ‘ঘাস, লতা-পাতা ও অন্যান্য শাকসব্জি হজম করার জন্য তৃণভোজী প্রাণীদের পাকস্থলীতে এক বিশেষ উৎসেচক বা এনজাইম থাকে। এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া এনজাইমটি তৈরি করে। এনজাইমের ভিতরে কী আছে, দেখতে গিয়ে আমরা এর এক আশ্চর্য গুণ লক্ষ করি। দেখি, এটি কার্বোহাইড্রেটকে ভেঙে ফেলছে।
তখনই মাথায় খেলে যায়, ক্লেবসিয়েলার বায়োফিল্মেও তো কার্বোহাইড্রেটেরই প্রাধান্য। দেখাই যাক না, সেখানে কেমন কাজ করে নতুন এনজাইম?’
এই ভাবনা থেকে গোরু, ছাগল প্রভৃতি তৃণভোজী প্রাণীর পাকস্থলীতে থাকা ব্যাকটেরিয়ার জিন বিশেষভাবে আলাদা করেন বিজ্ঞানীরা। তাকে অন্য একটি ব্যাকটেরিয়ার শরীরে প্রবেশ করান। তখন সেই ব্যাকটেরিয়াটিও নতুন উৎসেচক তৈরি করতে শুরু করে।
এইবার আসছে আসল পর্ব। আবিষ্কৃত উৎসেচকটি ক্লেবসিয়েলায় প্রয়োগ করতেই দেখা যায়, নতুন উৎসেচকটি ক্লেবসিয়েলার বায়োফিল্মের গঠন ভেঙে ফেলছে। ফলে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকেই তাকে বধ করা জলভাত হবে। চুরমার হবে মিথ। আইসিইউ-আইটিইউতে জীবন-মরণ যুদ্ধে বাঁচার আশা দেখবেন লক্ষ লক্ষ মানুষ।
পিজি হাসপাতালে ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুগত দাশগুপ্ত বলেন, ভারতে শেষ পাঁচবছরে প্রায় ১ লক্ষ মানুষ ক্লেবসিয়েলা সংক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন। আশা করছি, বিজ্ঞানীদের গবেষণার প্রত্যক্ষ সুফল মানুষ শীঘ্রই পাবে।