নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আবিষ্কার প্রায় ১০০ বছর আগে। কালের নিয়মে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য অ্যান্টিবায়োটিক বেরিয়েছে। পুরনো বহু অ্যান্টিবায়োটিক ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট হওয়ায় তলানিতে ঠেকেছে ব্যবহার। কিন্তু আজও রিউম্যাটিক হার্ট ডিজিজ-সহ বেশকিছু রোগে চিকিৎসকদের বড় ভরসার জায়গায় আলেকজান্ডার ফ্লেমিংয়ের পেনিসিলিন। যতই ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট হোক না কেন, বর্তমানে রাজ্যজুড়ে ব্যাপক আকাল চলছে এই অ্যান্টিবায়োটিকের। ফলে রীতিমতো জীবনসংশয় পরিস্থিতি হওয়ার জোগাড় হাজার হাজার রোগীর। বিশেষত, রিউম্যাটিক হার্ট ডিজিজের রোগীদের অসুখের কারণে এক-দু’বার হৃদযন্ত্রের ভালভ খারাপ হয়ে যাওয়ার মতো বড়সড় বিপদ হলে তাঁকে প্রতিষেধক হিসেবে পেনিসিলিন দেন চিকিৎসকরা, যাতে দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার আর এই ধরনের প্রাণঘাতী অসুখ না-হয়। এছাড়া বুকে, কানে সংক্রমণসহ বেশকিছু ইনফেকশনেও আজও পেনিসিলিনের ব্যবহার চলছে। সেই পেনিসিলিন ট্যাবলেট বা ইঞ্জেকশনই এখন মাথা কুটেও পাচ্ছেন না হাজার হাজার রোগী ও বাড়ির লোকজন। ফলে রীতিমতো সঙ্কটের মধ্যে পড়েছেন তাঁরা। ডানলপের বাসিন্দা অভিজিৎ কর্মকার বলেন, ‘বড় বিপদের মধ্যে পড়েছি। রিউম্যাটিক ফিভার বা বাতজ্বর থেকে আমার রিউম্যাটিক হার্ট ডিজিজ হয়েছিল। হার্টের দুটো ভালভই খারাপ হয়ে যায়। এরপর আর এই রোগ হলে বাঁচব না। কিন্তু আমার যে পেনিসিলিন ট্যাবলেটের খুবই দরকার। আগে ডাক্তারবাবু ইঞ্জেকশন দিতেন। সহ্য করতে পারছি না দেখে পেনিসিলিন ট্যাবলেট দিয়েছেন। আশপাশের অসংখ্য দোকানে খুঁজেছি। পাচ্ছি না। ওষুধের দোকানদাররা বলছেন, সাপ্লাই নেই।’
বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের মতো গরিব দেশে হাজার হাজার মানুষ বাতজ্বরে আক্রান্ত হন। প্রথমে জ্বর, গাঁটে গাঁটে ব্যথা, তারপর হার্ট, বা মস্তিষ্ক বা অন্যকোনও অঙ্গে আক্রমণ করে রোগটি। হার্টে হলে ভালভ নষ্ট হতে পারে। হার্টের ছন্দপতনের কারণে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।’
আর জি করের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ডাঃ বিশ্বজিৎ মজুমদার বলেন, ‘অসংখ্য রোগী বলছেন তাঁরা পেনিসিলিন ইঞ্জেকশন বা ট্যাবলেট কোনোটাই পাচ্ছেন না।’ রাজ্যের ওষুধের দোকানদারদের শীর্ষ সংগঠন হল বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিসিডিএ)। তাদের মুখপাত্র শঙ্খ রায়চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সংগঠনভুক্ত খুচরো দোকানে সাধারণত পেনিসিলিন রাখে না।’ রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘আমাদের তালিকাভুক্ত ওষুধের মধ্যে পেনিসিলিন নেই।’ চারদিকে ‘না’, ‘না’ এই পরিস্থিতির মধ্যে কিছুটা আশার খবর শোনালেন ইএম বাইপাস এলাকার এক জনপ্রিয় ওষুধের দোকান গোষ্ঠীর কর্তা অর্মত্যলোক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বললেন, ‘দু’বছর ধরে পেনিসিলিন ছিল না। সদ্য এসেছে। সরবরাহ অবশ্য আবার যেকোনও সময় আটকেও যেতে পারে। জানি, বহু রোগীর জীবন নির্ভর করে এই ওষুধেরই উপর।’