নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: ঝাড়খণ্ড ও মহারাষ্ট্রের সদ্যসমাপ্ত বিধানসসভা ভোটের প্রচারে ‘এক হ্যায় তো সেফ হ্যায়’ স্লোগান তুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র। বিরোধীদের অভিযোগ, মেরুকরণে অস্ত্রে শান দিতেই মোদি ওই স্লোগান দিয়েছিলেন। ওই ভোটের প্রচার মেটার এক মাসের মধ্যে এবার মোদির মুখে ঐক্যের বাণী। শনিবার লোকসভায় তিনি বলেছেন, সংবিধানের প্রধান শিক্ষা বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য। সেই শিক্ষা একমাত্র আমিই পালন করি। কারণ আমি ঐক্যের পূজারি। গত ১০ বছরে যত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেগুলির সবই বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য রক্ষার প্রমাণ। এদিন সংবিধানের ৭৫তম বর্ষপূর্তির চর্চাশেষে সরকারের জবাবী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, বাবাসাহেব আম্বেদকর ঠিক যা যা বলে গিয়েছেন, আমরা তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। সংবিধানের প্রধান লক্ষ্য ও মন্ত্রই ছিল ঐক্য। অথচ স্বাধীনতার পর সবথেকে বড় যে আঘাত করা হয়েছে, সেটা হল বিভাজন তৈরি করা। বিকৃত মনস্ক ভারত বিরোধীরা বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য নয়, বিভেদের বীজ সৃষ্টি করেছে এবং করছে।
মোদির দাবি, আমাদের সিদ্ধান্তগুলি দেখলেই স্পষ্ট হবে যে, আমরা ১০ বছর ধরে শুধুই ঐক্যের সাধনা করে গিয়েছি। ৩৭০ অনুচ্ছেদ ছিল বিভাজনের একটি রেখা। তা অবলুপ্ত করে দিয়ে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করেছি। মোদির মতে ঐক্য কাকে বলে? তিনি উদাহরণ দিয়েছেন, ওয়ান নেশন ওয়ান ট্যাক্স, ওয়ান নেশন ওয়ান রেশন কার্ড, ওয়ান নেশন ওয়ান হেলথ কার্ড, ওয়ান নেশন ওয়ান গ্রিড, ওয়ান নেশন ওয়ান অপটিক্যাল ফাইবার।
মোদি তাঁর ভাষণে প্রত্যাশিতভাবেই জরুরি অবস্থা নিয়ে সরব হয়েছেন। তিনি বললেন, সংবিধানের ২৫ বছর বর্ষপূর্তিতে ১৯৭৫ সালে সংবিধানকেই তো ধ্বংস করার চেষ্টা হয়েছিল। দেশকে জেলে পর্যবসিত করা হয়। কংগ্রেসের মাথায় যে পাপ লেগে আছে, তা সাফ হবে না। গণতন্ত্রের শ্বাসরুদ্ধ করা কংগ্রেস গণতন্ত্রের কথা বলে কোন মুখে? বিরোধীরা মোদিকে সংবিধান বিরোধী আখ্যা দেওয়ার জবাবে মোদি শুনিয়েছেন যে, তাঁর সঙ্গে সংবিধানের কতটা অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক। বলেছেন, সংবিধানের ৫০ বছরের উৎসবের পূণ্যলগ্নে আমি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলাম। ইতিহাসে সেই প্রথমবার হয়েছিল যে, হাতির উপর সংবিধান রেখে তার পাশে মুখ্যমন্ত্রী পায়ে হাঁটছিলেন। সেই মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম আমি। আর এই যে লাগাতার তিনবার আমাকেই দেশ পরিচালনার ভার দিয়েছে দেশবাসী, সেটা কী প্রমাণ করে? প্রমাণ করে, আমি সংবিধানে নিবেদিতপ্রাণ।
ইন্দিরা গান্ধীর জমানা তো বটেই, জওহরলাল নেহরুরও সমালোচনায় সরব হয়েছেন মোদি। তাঁর প্রশ্ন, ১৯৫০ সালে সংবিধান গ্রহণের এক বছরের মধ্যেই কেন নেহরু সংশোধনী আনলেন? কেন ইন্দিরা গান্ধী একের পর এক সংশোধনী এনেছিলেন? মোদির ভাষণের মধ্যেই বিরোধীরা লোকসভায় প্রশ্ন করেছে, আপনি নিজে কতবার করেছেন সংবিধান সংশোধন? প্রসঙ্গত, ২০১৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মোদি সরকার ৯ বার সংবিধান সংশোধন করেছে। উত্তরে মোদি বলেছেন, আমাদের সংবিধান সংশোধনে দোষের কিছু নেই। আমি যা করি দেশের ভালোর জন্য করি!
সংবিধানের ৭৫ তম বর্ষপূর্তি নিয়ে ছিল আলোচনা। অথচ ১৯৪৬ সালে সংবিধান সভা প্রতিষ্ঠা। সেখানে কীভাবে গড়ে উঠল সংবিধানের ভিত? ভারতীয় সংবিধানের কোন শক্তি ৭৫ বছর পরও গণতন্ত্রকে অটুট রাখল? দলীয় রাজনীতির ঊর্ধে উঠে এসব নিয়ে কিন্তু কোনও গভীর আলোকপাত পাওয়া গেল না প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে! যা বললেন, সেটা ১০ বছরের তাবৎ রাজনৈতিক বক্তৃতারই পুনরাবৃত্তি!