মুক্তির অপেক্ষায় রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত ‘সন্তান’। একান্ত আড্ডায় কখনও পুত্র ও কন্যা, কখনও বা ছবি নিয়ে কথা বললেন অভিনেত্রী শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়।
দুই সন্তান জীবন বদলে দিয়েছে?
অবশ্যই। আমাদের দুই সন্তান ইউভান এবং ইয়ালিনি সত্যিই জীবন বদলে দিয়েছে। আগে শুনতাম সন্তান হলে জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়। শুনে তো অভিজ্ঞতা তৈরি হয় না। বাস্তবে ঘটনা ঘটলে তবেই অভিজ্ঞতা হয়। বাবা মা বলত, আগে মা হও, তখন বুঝবে। সেগুলো এখন বুঝতে পারছি।
ছবির নাম হিসেবে ‘সন্তান’ তো খুব আকর্ষক?
প্রথম দিন থেকে গল্পটা যতবার শুনেছি, চিত্রনাট্য যতবার পড়েছি, শেষটা আমাদের জানা সত্ত্বেও চোখ দিয়ে জল পড়েছে। ‘মাই হাজব্যান্ড ইজ নট ফর সেল’- অনসূয়াদি (মজুমদার) যে সংলাপ বলছেন, আমরা ট্রেলারে দেখেছি, সেটা শুনলেই চোখে জল আসে। এত স্পর্শকাতর একটা গল্প, সেই জায়গা থেকে নামটা তো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয় যাঁরা খুব স্পর্শকাতর, আবেগপ্রবণ তাঁদের মনে দাগ কাটার মতো একটা নাম। আবার অনেকের কাছে খুব ক্লিশে মনে হতে পারে। প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের কাছে ছবির নামটা খুব পজিটিভ ভাবে পৌঁছেছে।
এক্ষেত্রে গল্প, নাকি পরিচালকের নাম (রাজ চক্রবর্তী) গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
গল্পটাই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে তো জানতামই না এই ছবিতে অভিনয় করব। আমার কাস্টিং অনেক পরে হয়েছে। গল্পটা রাজের কাছে আগে শুনেছিলাম। অনেক পরে প্রযোজক এবং পরিচালক আমাকে অফার করেছিলেন।
সন্তান বৃদ্ধ বাবা, মায়ের দায়িত্ব নিচ্ছেন না, এই সমস্যা বাস্তবের...
(প্রশ্ন শেষ করার আগেই) এর থেকে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। কোনও সম্পর্কই কিন্তু প্রত্যাশা ছাড়া হয় না। বাবা, মা এবং সন্তানের সম্পর্কেও তো প্রত্যাশা থাকবে। আমি নিজে একজন মা হিসেবে এখন আরও ভালো করে বুঝতে পারি। আমাদের বাচ্চারা এখন সবকিছুতে বাবা, মাকে চাইছে। তাহলে আমাদের যখন দরকার হবে, তারা কেন থাকবে না? এটাতে যদি আমাদের স্বার্থপর মনে হয়, আমরা স্বার্থপর হতে রাজি আছি। নিজেদের পুঁজি খরচ করে সন্তানকে আমরা বড় করছি। যখন সে প্রতিষ্ঠিত, আমাদের আর কাজ করে উপার্জন করার বয়স নেই, তখন সে আমাদের দেখবে, সেটাই তো আশা। তাতে তো কোনও ভুল নেই। বাচ্চারা বড় হবে। তাদের নিজেদের পরিবার, জীবন হবে। তাতে আমাদের ইন্টারফেয়ারেন্স থাকবে না। কিন্তু সেই জীবন থেকে যেন বাবা, মায়েরা বাদ চলে না যান। বাবা, মায়েরা যেন সেই জীবনের অংশ হন। বাবা, মায়ের থেকে মূল্যবান তো আর কিছু নেই।
আইনজীবীর চরিত্র ‘ইন্দ্রাণী সেন’কে সাজানোর ক্ষেত্রে আপনার নিজস্ব ইনপুট ছিল?
যেকোনও ছবিতে ডিরেক্টর আমার মাস্টার। সিনেমা পরিচালকেরই মাধ্যম। পরিচালক কীভাবে গল্পটা ভাবছেন, সেটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরিচালক যেভাবে ভেবেছেন, তার উপর কিছু যোগ করে যদি চরিত্রটা আরও সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়, সে চেষ্টা করি, এখানেও করেছি।
‘সন্তান’ কি রাজ চক্রবর্তীর কাছে খুব ইমোশনাল প্রজেক্ট?
রাজ এমনিতেই খুব ইমোশনাল। ও যে শ্যুটিংয়ের সময় কতবার কেঁদেছে! আমার মনে আছে, ‘সন্তান’-এর শ্যুটিংয়ে কোর্ট সিন চলছে। আমি দেখছি, যতবার ইমোশনাল ডায়লগ বলা হচ্ছে, ততবার রাজ আর কাট বলতে পারছে না। মনিটরে বসে কাঁদছে।
সব প্রজন্মের দর্শকের জন্য এই ছবি?
অবশ্যই। সব জেনারেশনের ‘সন্তান’ ভালো লাগবে। সকলে রিলেট করতে পারবেন।
বছর শেষে ফিরে দেখলে সেরা প্রাপ্তি কী মনে হয়?
বছরের প্রতিটা দিন প্রাপ্তির। আমি ছোট ছোট জিনিসের জন্য ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ। তেমন নানা মুহূর্ত একসঙ্গে জড়ো করলে দেখা যাবে সারা বছরই আমার কাছে সেরা।
স্বরলিপি ভট্টাচার্য