নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: জেলায় শিল্পের বিকাশে মুর্শিদাবাদ, নদীয়া ও বীরভূম তিনটি জেলাকে নিয়ে সিনার্জি হল বহরমপুরে। সেখানে শিল্প সমস্যার সমাধানের পথ খোঁজার পাশাপাশি সরকারি জমি বেদখলেরও অভিযোগ উঠল। নবগ্রামের বিধায়ক কানাইচন্দ্র মণ্ডল এই অভিযোগ তুলে মন্ত্রী ও প্রশাসনিক কর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। অন্যদিকে, সিনার্জির সাফল্যও নজরকাড়া। জানা গিয়েছে, তিনটি জেলা থেকে ২ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা লগ্নির প্রস্তাব এসেছে একাধিক শিল্পোদ্যোগীর কাছ থেকে। চলতি আর্থিক বছরে তিনটি জেলায় ১ হাজার ৬৩০টি নতুন শিল্প স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
ক্ষুদ্র মাঝারি এবং ছোট শিল্পের উদ্যোগপতিদের নিয়ে শুক্রবার সকালে বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা, তাজমুল হোসেন, আখরুজ্জামান সহ অন্যান্যরা। এছাড়াও ছিলেন এমএসএমই দপ্তরের সচিব রাজীব পাণ্ডে, মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র, সাংসদ খলিলুর রহমান সহ মুর্শিদাবাদ, বীরভূম এবং নদীয়ার প্রশাসনিক আধিকারিক এবং উদ্যোগপতিরাও।
রাজ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং ছোট শিল্পের কাজ করতে গিয়ে উদ্যোগপতিদের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। কোথাও বিদ্যুতের সমস্যা, কোথাও জমি জট। কোথাও আবার আর্থিক সমস্যা দেখা যায়। এইসব সমস্যার কারণেই ক্ষুদ্র এবং ছোট শিল্প কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে। জেলাস্তরে কীভাবে সেই সব সমস্যার সমাধান করা যায়, এদিনের এই ব্যবসায়িক সম্মেলনে তা নিয়েই আলোচনা হয়।
গত ডিসেম্বর মাসে জেলাজুড়ে রাজ্যের অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ ও বস্ত্র দফতরের উদ্যোগে ব্লক ও পুরসভা স্তরে শিল্পের সমাধান নামে একটি কর্মসূচি হয়েছে। তারপর জেলায় শিবির করে শিল্প উদ্যোগীদের সাহায্য করা হয়েছে। এবার সিনার্জির মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে শিল্প টানার উদ্যোগ নিল রাজ্য সরকার। মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা জানান, নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার থেকে অনেকটাই বেশি এগিয়ে রয়েছে মুর্শিদাবাদ। শিল্প তৈরির ক্ষেত্রে যে সমস্ত সমস্যাগুলি রয়েছে, সেগুলিকে দ্রুত মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি দুটি জেলার ক্ষুদ্র ছোট ও মাঝারি শিল্প সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে এদিন।
এদিন শিল্প সমস্যার কথা বলতে গিয়ে নবগ্রামের বিধায়ক কানাইচন্দ্র মণ্ডল প্রকাশ্যে জমি দখলের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, রেজিনগর এবং রঘুনাথগঞ্জের প্রচুর জমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে সেই তথ্যও আমি দিয়েছিলাম। বেশ কিছু জমি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। বেসরকারি জমির পাশাপাশি প্রচুর সরকারি খাস জমি অহেতুক পড়ে রয়েছে। এই সমস্ত জমিকে কাজে লাগিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীদের মাধ্যমে ক্ষুদ্র, মাঝারি এবং ছোট শিল্পের কাজ করা সম্ভব হবে। আগামী ২০ তারিখ এই সমস্ত জমির পূর্ণাঙ্গ চিত্র জেলাশাসকের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, আগামী সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লালবাগে এসে মুর্শিদাবাদের প্রশাসনিক সভা করবেন। তার আগে শিল্প সমস্যা নিয়ে এই আলোচনা সদর্থক হয়েছে। অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, মাঝারি উদ্যোগ ও বস্ত্র শিল্প সম্মেলনে মুর্শিদাবাদ ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের, চালকল মালিক সংগঠন, ফ্লাই অ্যাস ইটের মালিক সংগঠনের কর্মকর্তাদের যেমন ডাকা হয়েছে, তেমনই নতুন উদ্যোগীদেরও ডাকা হয়েছে।
ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার ভট্টাচার্য বলেন, শিল্পের পরিকাঠামো উন্নয়ন, সহজে শিল্পের জন্য ঋণ এবং জমির ব্যবস্থা করলেই জেলায় শিল্প বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, মাঝারি উদ্যোগ ও বস্ত্র শিল্পে রাজ্যে বিনিয়োগ হয়েছে। আমাদের জেলায়ও যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। শিল্প সম্মেলনে ডাক পেয়ে এসব ব্যাপারে আলোচনা করলাম।