সংবাদদাতা: কৃষিতে নিম দ্রবণের জৈব কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার বাড়ছে। এই উপকারি নিম দ্রবণ চাষিরা বাড়িতেই তৈরি করতে পারবেন। খরচ নেই বললেই চলে। এর জন্য লাগবে মাত্র ২০০ গ্রাম নিমপাতা। এই নিমপাতা ভালোভাবে থেঁতো করে তার পর বেঁটে নিতে হবে। এই বাঁটা নিমপাতা ১০ লিটার জলে মেশাতে হবে। এর পর তাতে মেশাতে হবে ৩-৫ গ্রাম নরম যেকোনও সাবান বা ডিটারজেন্ট মেশাতে হবে। তার পর ওই দ্রবণকে ভালোভাবে নাড়তে হবে। শেষে কাপড় দিয়ে দ্রবণটি ছেঁকে নিতে হবে। এভাবেই তৈরি হয়ে যাবে নিম দ্রবণ। এমনটাই জানিয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ব্লকের হরিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের হরেন্দ্রনাথ মণ্ডল। তাঁর বাড়ির প্রায় ১২টি নারকেল গাছের জন্য মাকড়ের আক্রমণ প্রতিরোধে তিনি এই নিম দ্রবণ ব্যবহার করে ভালো ফল পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। এছাড়া তাঁর ৪ বিঘার লঙ্কার খেত রয়েছে। সেখানেও মাকড়ের আক্রমণ হয়েছিল। প্রতিরোধে তিনি ওই নিম দ্রবণ ব্যবহার করেন। এবং সুফল পান। নামখানা ব্লক সহ কৃষি অধিকর্তার অফিস থেকে তিনি এই দ্রবণ তৈরি করার প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। শুঁয়োপোকা, ল্যাদাপোকা দমনেও এই নিম দ্রবণ বিশেষ কার্যকরী বলে জানিয়েছেন ওই কৃষক। জেলার শস্য সুরক্ষা অধিকর্তা অশোক শিট জানিয়েছেন, এই নিম দ্রবণ সরাসরি পোকা মারবে না। তবে যে কোনও পোকা তাড়াতে সাহায্য করবে বা তার নিয়ন্ত্রণ করবে। বাড়িতে তৈরি নিম দ্রবণের কাজ হল, পোকার খাদ্যগ্রহণে বাধা সৃষ্টি করা। পোকা বিতাড়ক হিসেবে কাজ করা। পোকার ডিমের উপর নিম দ্রবণ স্প্রে করলে তা ফুটতে অনেক দেরি হয়। এর ফলে পোকার অসম্পূর্ণ বা ছোট বাচ্চা তৈরি হবে। সেসব বাচ্চা হবে বিকলাঙ্গ। এইসব বিকলাঙ্গ বাচ্চা অল্পদিনেই মারা যাবে। এছাড়া নিম দ্রবণ পোকার ঘ্রাণশক্তি নষ্ট করে দিতে সক্ষম।
জেলার কুলপি ব্লকের বেলপুকুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার চাষি ঋষি হালদার জানিয়েছেন, তিনি তাঁর ৪ বিঘা ঢেঁড়সের খেতে শ্যামাপোকার আক্রমণ লক্ষ্য করেন। এর পর বাড়িতে নিম দ্রবণ তৈরি করে তাতে স্প্রে করেন। এতে ঢেঁড়সের গাছগুলি প্রচণ্ড তেঁতো হয়ে যায়। পরের দিন থেকে তিনি আর কোনও শ্যামাপোকা খেতে খুঁজে পাননি। তিনি বুঝতে পারেন, সব পোকা পালিয়েছে। ওই কৃষকের বক্তব্য, নিম দ্রবণ তৈরি করতে সেভাবে কোনও খরচই হয়নি। অথচ তিনি যে উপকার পেয়েছেন, তাতে তিনি দারুণ খুশি।