বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
বৃষ্টির ফলে আলু সহ অন্যান্য সব্জির যে বিপুল ক্ষতি হবে, তা মেনে নিয়েছেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, রোদ ওঠার পর প্রকৃত পরিস্থিতি জানা যাবে। ক্ষতির পরিমাণ জানার জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা যাতে শস্যবিমার ক্ষতিপূরণ ঠিকঠাক পান, তার জন্য দপ্তরের আধিকারিকদের তৎপর হতে বলা হয়েছে।
লম্বা শীতের হাত ধরে এবার রাজ্যে বাম্পার আলু ফলবে বলে সকলেই আশা করেছিলেন। অধিক ফলনের ধাক্কায় চাষিরা যাতে ক্ষতির মুখে না পড়েন, তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাষিদের কাছ থেকে সরকারি উদ্যোগে আলু কেনার কথাও ঘোষণা করেছিলেন। ঘোষণার পর কৃষি বিপণন দপ্তরের অফিসাররা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু, ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় ব্যাপক বৃষ্টি। তারপর তিনদিনের লাগাতার বৃষ্টিতে সমস্ত জমিতে জল দাঁড়িয়ে যায়। চাষিরা প্রথমদিকে পাম্প চালিয়ে জমির জল বের করে আলু বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টা চালালেও দ্বিতীয় দিনের প্রবল বৃষ্টির পর তাঁরা হাল ছেড়ে দেন। কারণ, দফায় দফায় মুষলধারে বৃষ্টি নামায় পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যায়।
জেলায় জেলায় চাষি পরিবারে এখন শুধুই হা-হুতাশ। চোখের সামনে আলুগাছ পচে যাচ্ছে। পচা গন্ধে টেকা যাচ্ছে না। তবুও চাষিরা আলের ধারে দাঁড়িয়ে হিসেব কষছেন। সর্বনাশের হিসেব, লোকসানের হিসেব। বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ থানার লোদনা গ্রামের চাষি মদন বীট পাঁচ বিঘা জমিতে আলুচাষ করেছিলেন। কথা বলতে গিয়ে তাঁর গলার স্বর বুজে আসছে। বললেন, ধান চাষের সময় সমবায় থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। তা শোধ করতে না পারায় এবার ধার করে বীজ, সার নিয়ে আলুচাষ করেছিলাম। টাকার জন্য শস্যবিমাও করাইনি। ভেবেছিলাম, আলু বিক্রি করে ঋণ শোধ করে লোন রিন্যুউ করিয়ে নেব। কিন্তু, সব শেষ হয়ে গেল!
এই পঞ্চায়েতের সানিঘাট গোলা সমবায় সমিতির ম্যানেজার মহানন্দ বীট ২০বিঘে জমিতে আলুচাষ করেছিলেন। চাষ করতে গিয়ে খরচ সাড়ে তিন লক্ষ ছাড়িয়েছে। কিন্তু, এখন এমন অবস্থা যে জমির আলু জমিতেই পচে যাবে। সমবায়ে দেড় লক্ষ টাকা ঋণ থাকায় তিনিও আলুচাষের জন্য কোনও ঋণ নেননি। করাননি বিমাও। ফলে এখন হাত কামড়াচ্ছেন। বলেন, এবার বরাবর আবহাওয়া ভালো ছিল। কিন্তু একটা নিম্নচাপ সব শেষ করে দিল।
ধান সহ বিভিন্ন চাষে শস্যবিমার জন্য প্রিমিয়ামের সব টাকাই রাজ্য সরকার দেয়। আলুর জন্য বিমার প্রিমিয়ামের অর্ধেকেরও বেশি টাকা দেয় রাজ্য সরকার। তবুও রাজ্যের হাজার হাজার আলুচাষি শস্যবিমা করাননি বলে জানা গিয়েছে। কারণ, বকেয়া মেটালেই পাওয়া যায় নতুন করে ঋণ। চাষি মহলে হাওয়া ছিল, ভোটের বাজারে কেন্দ্রীয় সরকার কৃষিঋণ মকুব করবে। সেই আশাতেই অনেকে ব্যাঙ্কের ঋণ মেটাননি। বিমাও করেননি। বাজার থেকে টাকা ধার করে চাষ করেছেন। আর তা করতে গিয়েই নিম্নচাপের টানা বৃষ্টিতে তাঁরা ডুবেছেন।
লোদনা পঞ্চায়েতের নবগ্রামের সুকুমার বীট ১২বিঘা জমিতে আলুচাষ করতে গিয়ে সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে দেড় লক্ষ টাকা এবং একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে এক লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছেন। শস্যবিমাও করিয়েছেন। অতিবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় এখন তাঁর একটাই ভাবনা, শস্যবিমার ক্ষতিপূরণ ঠিকঠাক মিলবে তো? এই ভাবনার পিছনে কারণও আছে। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে আমি ও আমার স্ত্রী এক লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে চাষ করেছিলাম। শস্যবিমা বাবদ মোট ৪৮৫০ টাকা জমা দিয়েও কোনও ক্ষতিপূরণ পাইনি। অথচ ওই বছরই আমাদের সমবায়ে যাঁরা বিমা করিয়েছিলেন, তাঁরা ৩৪ শতাংশ ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন। তাই এবারও শেষ পর্যন্ত কী হবে সেই চিন্তায় রয়েছি।