সিডনি, ১২ জানুয়ারি: দলের কঠিন সময়ে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে হাফ-সেঞ্চুরি করেও সমালোচনা এড়াতে পারছেন না মহেন্দ্র সিং ধোনি। মন্থর ব্যাটিংয়ের জন্য তাঁকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সমালোচকরা। তবে এই পরিস্থিতিতে মাহির পাশে দাঁড়ালেন সতীর্থ রহিত শর্মা। শনিবার ম্যাচ শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে ভারতের সহ-অধিনায়ক সাফ জানিয়ে দিলেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী ঠিক যেমন খেলা উচিত ছিল, সেটাই করেছেন ধোনি। শুধু তাই নয়, অধিনায়ক বিরাট কোহলির ভাবনার বিরোধিতা করে রহিত জানিয়েছেন, চার নম্বরে ব্যাট করার জন্য এই মুহূর্তে ভারতের সবচেয়ে উপযোগি ব্যাটসম্যান হচ্ছেন ধোনিই।
সামনে বিরাট লক্ষ্য। চার রানের মধ্যেই প্যাভিলিয়নে ফিরে গিয়েছেন দলের প্রথম সারির তিন ব্যাটসম্যান। সেই তালিকায় রয়েছেন স্বয়ং অধিনায়ক বিরাট কোহলিও। ধসের সেই মঞ্চেই বড় রানের লক্ষ্যে লড়াই চালিয়ে গেলেন সহ-অধিনায়ক রহিত শর্মা। জয়ের জন্য ২৮৯ রান তাড়া করতে নেমে পর পর তিন ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যাওয়ার পর ভরসা জুগিয়েছিলেন তিনি। আর সেই লড়াইয়ে তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে যান ধোনি। চতুর্থ উইকেট জুটিতে দু’জনে মিলে ১৩৭ রান যোগ করেন। প্রায় এক বছর পর হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পেলেন প্রাক্তন অধিনায়ক ধোনি। তবে ৫১ রান করতে গিয়ে তাঁর ৯৬ বল খরচ করাটা মানতে পারছেন না অনেকেই। এই প্রসঙ্গে রহিত বলছেন, ‘চার রানে তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার ফলে যে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ধৈর্য দেখানো ছাড়া আমাদের সামনে কোনও উপায় ছিল না। ওই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি জরুরি ছিল উইকেটে থিতু হয়ে ধীরে ধীরে পার্টনারশিপ গড়ে তোলা। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যাটিং করেছে এমএসডি। তাই বেশি বল খেলার হিসেব দিয়ে ওর এই ইনিংসের বিশ্লেষণ করলে ভুল হবে।’ সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘সামগ্রিক ভাবে ধোনির স্ট্রাইক রেট নব্বইয়ের কাছাকাছি। এতদিন ধরে ক্রিকেট খেলেও যে ব্যাটসম্যান এমন স্ট্রাইক রেট বজায় রাখতে পারে, তার ব্যাটের ধার নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা সমীচীন নয়। আমি অন্তত এটা মানতে পারছি না। বরং আমি বলব, ধোনি চার নম্বরে ব্যাটিং করলে দলের পক্ষে তা অধিক লাভদায়ক হবে। ওর ব্যাটিং স্টাইল অনুযায়ী আমার অন্তত তেমনটাই মনে হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অধিনায়ক এবং কোচের হতে রয়েছে। আমি শুধু আমার ব্যক্তিগত মতামতটা জানালাম।’
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের ওয়ান ডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে নিজের ২২তম সেঞ্চুরিটি সেরে ফেলেন রহিত শর্মা। তবে বিফলে যায় তাঁর ১৩৩ রানের লড়াকু ইনিংস। শেষ পর্যন্ত ৩৪ রানে দল হারলেও ব্যক্তিগত ভাবে এক অনন্য রেকর্ডের সান্তনা নিয়ে মাঠ ছাড়লেন রহিত। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এটা ছিল তাঁর চতুর্থ ওয়ান ডে সেঞ্চুরি। ডন ব্র্যাডম্যানের দেশে সফরকারী দলের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এটাই সর্বাধিক। এর আগে এই রেকর্ড ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি প্রাক্তন তারকা ভিভ রিচার্ডসের। তিনি করেছিলেন তিনটি সেঞ্চুরি। শনিবার ভিভকে ছাপিয়ে গেলেন রহিত। ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি এদিন মাত্র ৩ রানে আউট হলেন। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে একদিনের ক্রিকেটে তাঁর দখলে রয়েছে দুটি সেঞ্চুরি। এছাড়াও দুটি করে সেঞ্চুরি নিয়ে এই তালিকায় রয়েছেন আরও আট ব্যাটসম্যান। পাশাপাশি ওয়ান ডে সেঞ্চুরির হিসেবে রহিত এদিন স্পর্শ করলেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির ২২টি শতরানকেও। এখন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তাঁর সামনে রয়েছেন কেবলমাত্র শচীন তেন্ডুলকর (৪৯) ও বিরাট কোহলি (৩৮)।
তবে রহিত শর্মার ব্যক্তিগত রেকর্ডের আনন্দ ম্লান হয়ে গিয়েছে দল হেরে যাওয়ায়। তাঁর কথায়, ‘আমার কাছে দলীয় সাফল্যই সবার আগে। বড় রান করেও যদি দলকে জেতাতে না পারি, তবে সেই ইনিংস মূল্যহীন মনে হয়। রেকর্ড সততই সুখের হলেও তা যে সর্বদা আনন্দদায়ক হয় না, সেটা আজ আরও একবার অনুভব করলাম। আমার একটাই লক্ষ্য ছিল, শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়া। কিন্তু অনেকটা এগিয়েও সেটা পারলাম না। তাই মন তো খারাপ হবেই।’ তবে সিরিজের বাকি দুটি ম্যাচে ভারত সাফল্যের পথে আসবে বলে আশ্বস্ত করেছেন রহিত।