বিমা, মেয়াদি সঞ্চয় বা শেয়ার থেকে অর্থকড়ি আয় বাড়বে। ঝামেলা থেকে দূরে থাকুন। ধর্মে মতি। ... বিশদ
ঘড়িতে তখন ৫টা ৪৫ মিনিট। মুখ্যমন্ত্রীর কপ্টার ল্যান্ড পানাগড় হেলিপ্যাডে। সেখান থেকে রওনা দেন গাড়িতে। ততক্ষণে গাঁ-গঞ্জ উজাড় করে জনস্রোত জিটি রোড মুখী। রাস্তার দু’পাশে কাতারে কাতারে মানুষ। তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের ভিড়ে সাধারণ মানুষও। তাঁদের সিংহভাগই মহিলা। দিদিকে একবার সবাই চোখের দেখা দেখবেন। প্রখর রোদে তেতে-পুড়ে গিয়েও ঠায় দাঁড়িয়ে সকলেই।
মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় ছুটছে। পানাগড় ছাড়িয়ে গুরুদ্বার। সেখানে থিক থিক করছে মানুষ। আট থেকে আশির অধীর অপেক্ষা। নিজেকে আর সামলে রাখতে পারেননি মমতা। যাবতীয় প্রোটোকল ভেঙে গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন তিনি। রইলেন না আর বিশেষ রাজনৈতিক দলের নেত্রী কিংবা রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। মমতা তখন জননেত্রী। রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন তিনি। পিছনে দলের একঝাঁক নেতা-কর্মী। তাঁদের পিছনে উদ্বেল জনতার ঢল। সামাল দিচ্ছেন অরূপ বিশ্বাস, নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, প্রদীপ মজুমদাররা। কিন্তু পারছেন আর কোথায়! মমতাকে কাছ থেকে একটু দেখার, একটু আশিস পাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছেন না কেউই। হিমশিম অবস্থা তখন নিরাপত্তারক্ষীদেরও। মমতাও ইশারায় জানিয়ে দিচ্ছেন—বাধা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। বাধার প্রাচীর সরিয়ে নিচ্ছেন তৃণমূল নেতা থেকে রক্ষীরা।
মমতা চলেছেন। কখনও হাত নাড়ছেন জনতার উদ্দেশ্যে। কখনও হাত জড়ো করে প্রণাম করছেন। আবার কখনও মহিলার কোলে থাকা শিশুকে আদর করছেন। এমন সময় হঠাৎ মুখ্যমন্ত্রীর সামনে চলে আসেন এক যুবক। নাম অমিত পাত্র। আমলাজোড়া থেকে এসেছেন তিনি। মমতার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে যেতেই নিরাপত্তারক্ষীরা ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেন। সেখানেই থমকে দাঁড়িয়ে পড়েন মমতা। পিলে চমকে যায় রক্ষীদের। কিছু একটা ঘটতে চলেছে! কিছু থ মেরে দাড়িয়ে থেকে রক্ষীদেরই নির্দেশ দেন, অমিতকে কাছে ডেকে আনতে। গর্বে বুক চওড়া অমিতের। গরম পিচ রাস্তায় শুয়ে মমতাকে প্রণাম করেন তিনি। জননেত্রীর আশীর্বাদ নিয়ে আবেগাপ্লুত অমিত। বললেন—‘আমার জীবনে সবচেয়ে বড় পাওয়া।’
মুখ্যমন্ত্রী হাঁটছেন। তাঁর হাঁটা মানেই ‘দৌড়’। যেখানেই ভিড় সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়ছেন। সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। নিরাপত্তা রক্ষীরা আর সাহস করেননি বাধা দেওয়ার। প্রায় দু’ কিলোমিটার হেঁটে কনভয়ে নিজের গাড়িতে ওঠেন মমতা। ওঠার আগে পাশে থাকা নরেন্দ্রনাথকে বললেন—‘তোর কথা রাখলাম কিন্তু।’
মমতার কনভয় ছুটছে। গন্তব্য দুর্গাপুর। ছুটতে ছুটতে থামতে হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে। যেমন, দার্জিলিং মোড়। বিপুল সংখ্যক মানুষের উচ্ছ্বাস দেখে গাড়ি থামানোর নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সবার উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন। বাঁশকোপা টোল প্লাজাতেও ছিল শাসকদলের কর্মী-সমর্থকের ঠাসা ভিড়। তাঁদের অভিবাদন গ্রহণ করেন দলনেত্রী। আজ, সোমবার দুর্গাপুরের গ্যামন ব্রিজের মোড়ে কল্পতরু মাঠে জনসভা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। তার আগে পদযাত্রায় জনস্রোতকে ‘ট্রেলার’ হিসেবে দেখছেন ভোট-যুদ্ধে শামিল আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল নেতারা। অন্যদিকে, স্নায়ুর চাপ বেড়েছে বিজেপি নেতাদের। আজ, সোমবার অমিত শাহ সভা করবেন দুর্গাপুরের তিলক ময়দানে। মমতার ‘জননেত্রী’ ইমেজকে টেক্কা দিতে পারবেন তো? প্রশ্নটি ঘুরপাক খাচ্ছে পানাগড় থেকে দুর্গাপুর।
ভ্রূক্ষেপহীন জননেত্রী কিন্তু ছুটছেনই। মঙ্গলবার প্রান্তিকা থেকে ভিরিঙ্গি মোড় পর্যন্ত বর্ণাঢ্য রোড শোয়ে অংশ নেবেন মুখ্যমন্ত্রী।