সংবাদদাতা, রানাঘাট: বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক স্কুল ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ উঠল এক যুবকের বিরুদ্ধে। ছাত্রীকে সাইকেল থেকে ফেলে মারধরও করা হয়। রানাঘাটের আনুলিয়ায় এই ঘটনায় ছাত্রীর মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই যুবককে মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। পুলিস জানিয়েছে, ধৃতের নাম রণজিৎ বর্মন। রানাঘাটের আনুলিয়াতেই তার বাড়ি।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রানাঘাটের আনুলিয়ার বাসিন্দা ওই ছাত্রী অন্যান্য দিনের মতো সোমবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ সাইকেলে চেপে স্কুলে যাচ্ছিল। স্কুল থেকে ৩০০ মিটার দূরে রণজিৎ তার পথ আটকে দাঁড়ায়। এরপর তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই যুবক ছাত্রীকে মারধর করে। তার শ্লীলতাহানিও করে অভিযোগ। স্থানীয়রা ছুটে এসে ওই যুবককে ধরে ফেলে। স্থানীয়রা যুবককে মারধরও করে। খবর পেয়ে পুলিস এসে যুবককে আটক করে নিয়ে যায়। মারধরের ঘটনায় সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে জখম হয় ওই ছাত্রী। তাকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসাও করানো হয়। ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
বিষয়টি নিয়ে আনুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজীব নিয়োগী বলেন, সোমবার স্কুলের গেটের বাইরে আমাদের স্কুল ছাত্রীর সঙ্গে এক যুবক এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে রানাঘাট থানায় আমরা খবর দিই। সমাজে এধরনের ঘটনা কখনই কাম্য নয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগেও অভিযুক্ত যুবক ওই ছাত্রীর সঙ্গে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু ছাত্রীটি তাতে রাজি না হওয়ায় বিভিন্ন সময় হুমকিও দিত ওই যুবক। এপ্রসঙ্গে ছাত্রীর মা বলেন, ওই ছেলেটি আমাদের পাড়াতেই থাকে। এর আগেও আমার মেয়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে। সেই সময় আমরা ছেলেটির পরিবারের লোকজনকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। ওকে বুঝিয়েছিলাম, এমন ঘটনা যেন আর না করে। কিন্তু আবারও ছেলেটি আমার মেয়েকে স্কুল যাওয়ার পথে রাস্তাতেই সাইকেল থেকে ফেলে দেয়। ওর শ্লীলতাহানি করে। বিয়ে করার জন্য চাপ দেয়। আমরা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। ওর শাস্তি চাই।
অভিযুক্ত যুবকের প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, এলাকায় মোটেই ভালো ছেলে বলে পরিচিত নয় রণজিৎ। বিভিন্ন অসামাজিক কাজের সঙ্গে সে যুক্ত। এর আগেও ওই যুবকের নামে এমন ঘটনার অভিযোগ রয়েছে। এমন ঘটনা চলতে থাকলে আগামী দিনে মেয়েদের রাস্তাঘাটে চলাচলে নিরাপত্তার প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
ঘটনার পর ওই ছাত্রী আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। সে বলে, স্কুলে যেতে এখন ভয় পাচ্ছি। ওই ছেলে এর আগেও আমাকে কুপ্রস্তাব দিয়েছে। বলেছিল, আমি ওর প্রস্তাবে রাজি না হলে আমার পরিবারের লোকজনকে প্রাণে মেরে ফেলবে। যদিও অভিযুক্ত যুবকের দাবি, ওই ছাত্রী আমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক রেখেছিল। আমাকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানো হয়েছে। এদিন ধৃত যুবককে রানাঘাট আদালতে তোলা হয়। ধৃতের বিরুদ্ধে জামিনযোগ্য‌ ধারায় মামলা থাকায়, বিচারক তার জামিন মঞ্জুর করেছেন।
এদিকে, ঘটনার পর আনুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দারা এলাকায় পুলিসি টহলদারির দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, স্কুল ছুটির আগে ও পরে বহিরাগত যুবকদের উৎপাত বাড়ছে। তাদের আচরণ শোভনীয় নয়। স্থানীয় বাসিন্দা বিভূতিভূষণ রায় বলেন, স্কুল সংলগ্ন এলাকাতেই আমার বাড়ি। প্রতিদিনই বাইরে থেকে বহু যুবক এসে এলাকায় ভিড় জমায়। তারা প্রবীণদের সম্মান দেয় না। স্থানীয় একটি ক্লাবের সদস্যরা নজরদারি চালালেও বহিরাগতদের আনাগোনা বন্ধ করা যায়নি। পুলিস জানিয়েছে, ওই ছাত্রীর মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।