বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
সুদীপ এবার সোনামুখী বিধানচন্দ্র হাইস্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়েছিল। সুদীপের বাবা সাতকড়ি দে’র নির্দিষ্ট কোনও রোজগার নেই। কখনও মিষ্টির দোকানে, কখনও চায়ের দোকানে কাজ করে সংসার চালান। মা সর্বাণী দে গৃহবধূ। সংসারে নিত্য অভাব। তারমধ্যেও সুদীপ কঠিন পরিশ্রম আর অধ্যাবসায়ের জোরে এবার মাধ্যমিকে ৬৬১ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সে বাংলায় ৯৪, ইংরেজিতে ৯৪, অঙ্কে ৯৮, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৬, জীবনবিজ্ঞানে ৯৯, ইতিহাসে ৯০ ও ভূগোলে ৯০ পেয়েছে। বড় হয়ে সে ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। কিন্তু, পরিবারের আর্থিক সঙ্কট তার স্বপ্নে বাধা হয়ে দাঁড়ায় কি না তা নিয়ে সুদীপের চিন্তা বেড়েছে।
সোনামুখী বিধানচন্দ্র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিপ্লব কুমার ঘোষ বলেন, স্কুল থেকে সুদীপকে বই সহ পড়াশোনার বিষয়ে সাহায্য করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা স্কুলের সময় ছাড়াও তাকে পৃথকভাবে দেখিয়ে দিয়েছেন। ভবিষ্যতেও আমরা ওকে সাহায্য করব।
সুদীপ বলে, তিনটে টিউশনি ছিল। তবে গৃহশিক্ষকরা বেতন নিতেন না। রোজ গড়ে ১০ঘণ্টা পড়াশোনা করেছি। আপাতত উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে নিজের স্কুলেই পড়তে চাই। ভবিষ্যতে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।
সুদীপের বাবা বলেন, বিভিন্ন দোকানে কাজ করে কোনওদিন ৯০টাকা, তো কোনও দিন ১০০টাকা রোজগার হয়। তা দিয়ে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। তার উপর ছেলে ও মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানোই মুশকিল।
সুদীপের মা সর্বাণী দে বলেন, আমি ও আমার স্বামী দু’জনেই লেখাপড়া জানি না। আমাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ওদের দু’জনকেই উচ্চশিক্ষিত করব। মেয়ে সবে কলেজ পাশ করেছে। আর্থিক সঙ্কটের কথা ভেবে মেয়ে টিউশনি পড়িয়ে নিজের পাশাপাশি ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ চালিয়েছে।
এদিকে, দরিদ্র তাঁতশিল্পীর মেয়ে বিষ্ণুপুরের শ্রেয়া চন্দ এবার মাধ্যমিকে ৬৪৯পেয়েছে। বিষ্ণুপুর শহরের শিবদাস সেন্ট্রাল হাইস্কুল থেকে সে পরীক্ষা দিয়েছিল। সে বাংলায় ৯১, ইংরেজিতে ৯০, অঙ্কে ১০০, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৬, জীবনবিজ্ঞানে ৯২, ইতিহাসে ৮২ ও ভূগোলে ৯৮ পেয়েছে।
বিষ্ণুপুর পুরসভার ১৭নম্বর ওয়ার্ডের পাটরাপাড়ার বাসিন্দা শ্রেয়া বলে, বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। তাই সব বিষয়ে টিউশনি নিতে পারিনি। মোট তিনটি ব্যাচে টিউশনি পড়েছি। পর্যাপ্ত বই কিনতে পারিনি। স্কুলের শিক্ষকরা কিছু বই দিয়েছিলেন। রোজ গড়ে ১০ ঘণ্টা পড়াশোনা করেছি। অবসর সময়ে মায়ের সঙ্গে বাড়ির কাজ করতে হয়। আমার অঙ্ক ভালো লাগে। তবে ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চাই। কিন্তু, পরিবারের আর্থিক অবস্থা বাধা হয়ে দাঁড়ায় কি না তা নিয়ে চিন্তা তো রয়েছেই।
শ্রেয়ার বাবা চন্দন চন্দ বলেন, মহাজনের কাছ থেকে সুতো নিয়ে মজুরিতে বালুচরি শাড়ি বুনে মাসে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা রোজগার হয়। তা দিয়ে এই শহরে সংসার চালানোই মুশকিল হয়। তার উপর দুই মেয়ে ও এক ছেলের পড়াশোনার খরচ টানতে হয়। তাই চাহিদা মতো বই ও টিউশনি দিতে পারিনি। তা পেলে মেয়ে হয়তো আরও ভালো ফল করত। এখন মাধ্যমিকে তবু তুলনামূলক খরচ কম। কিন্তু, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে খরচের কথা ভেবে চিন্তা হচ্ছে।
শ্রেয়ার মা মালা চন্দ গৃহবধূ। তিনি বলেন, মেয়েদের মধ্যে শ্রেয়া ছোট। বড় মেয়ে কলেজে ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করছে। ছেলে দীপ নবম শ্রেণীতে পড়ে। তাদের পড়াশোনা সহ গোটা সংসারের খরচ একজনের রোজগারে চলে। তাই স্বামীকে সাহায্য করতে তাঁতের সুতো গোটানোর কাজে হাত লাগাই।
বিষ্ণুপুর শিবদাস সেন্ট্রাল গার্লস হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা মৌসুমি মালস বলেন, শ্রেয়া বরাবর মেধাবী ছাত্রী। ওর পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। আমরা ওকে বই দিয়ে সাহায্য করেছি। তার সাফল্যে আমরা খুশি।