বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
রানাঘাট থানার পূর্ণনগর পূর্ণচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়েছে বিপ্লব। তার সাফল্যে স্বাভাবিকভাবেই খুশি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা। বিপ্লব সিংহের বাবা বিজন সিংহ পেশায় দিনমজুর। টালির দোচালা মাটির ঘরেই থেকে পড়াশোনা চালিয়ে বিপ্লব এবার ৯৩.৫৭ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাকে সবরকমভাবে সহযোগিতার করেছেন। অন্যদিকে, পাঁচজন গৃহশিক্ষকের কাছ থেকেও পড়াশোনা করেছে। বিপ্লব বলে, আমি স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে স্কুলের বিভিন্ন অবসর সময়ে ও ছুটির পরেও পড়াশোনার বিষয়ে সাহায্য নিয়েছি। আমি যে সকল গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তাম তাঁদের মধ্যে দু’জন শিক্ষক কোনও দিনই আমার কাছ থেকে বেতন নেননি। বাকি তিনজন শিক্ষককে যখন যেমন পেরেছি বেতন দিয়েছি। আগামী দিনে আমি ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। কিন্তু সেক্ষেত্রে সরকারি বেসরকারি কোনও সুযোগ-সুবিধা না পেলে পড়াশোনা থমকে যেতে পারে।
মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় তার নম্বর ছিল ৬৫২। পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে বাবার সঙ্গে মাঝে মধ্যেই চাষের জমিতে গিয়ে কাজ করে এই ছাত্র। মেধাবী ছাত্রের মা শারীরিক অসুস্থতা জন্য এদিন কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যান। বাড়িতে দাদার সঙ্গে ছিল এই ছাত্র।
বিপ্লবের বাবা বলেন, আমার একার যা রোজগার তাতে মাস গেলে সাত হাজার টাকাও আয় হয় না। তাই দিয়ে চারটি পেট চালানো খুবই কষ্টের। তার মধ্যেই বড় ছেলেকে কলেজ পাস করানোর পরেও ছোট ছেলের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। সরকার যদি আমার এই ছেলের পড়াশোনার জন্য কিছু সাহায্য করলে অনেক সুবিধা হবে। ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে এই পরিবারকে একটি ইন্দিরা আবাসনের ঘর দেওয়া হয়। তবে সেই ঘরটি এখনও অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আগাছায় ভরে গিয়েছে।
কৃতী ছাত্রের দাদা বিধানবাবু নিজে স্নাতক হওয়ার পর ওই গ্রামে গৃহশিক্ষকতার কাজ করেন। নিজে সরকারি চাকরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে ভাইয়ের এই সাফল্যে সে খুশি। বিপ্লব এবার গণিতে ১০০ মধ্যে ১০০ নম্বর পেয়েছে। অন্যদিকে, ভূগোলে ৯৯, জীবন বিজ্ঞানে ৯৮, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৪, বাংলায় ৯২, ইংরেজিতে ৮৫, ইতিহাসে ৮৭ নম্বর পেয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমীর সরকার ও সৌগত ঘোষ বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামের অভাবি ঘরের এই ছেলে অনেক সময় নিজেও চাষের জমিতে কাজ করেছে। তার মধ্য পড়াশোনা চালিয়ে ভালো নম্বর পেয়েছে। আগামী দিনে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ওই কৃতী ছাত্রের পড়াশোনার বিষয় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। ছাত্রের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিপ্লবের পড়াশোনার কোনও নির্দিষ্ট সময় ছিল না। যখন যেমন সময় পেত তখনই পড়াশোনা করত। তবে রাতের দিকেই সে পড়াশোনায় বেশি জোর দিত।
ছাত্রের মা সুশীলা দেবী বলেন, আমরা কোনও দিনও নিজেদের নাম লেখা ছাড়া অন্য কিছু লিখতে শিখিনি। ছেলেদের ভালোভাবে পড়াশোনায় সাহায্য করতে পারিনি। তার মধ্যেও ওরা সফল হচ্ছে। বড় ছেলে স্নাতক পাস করেছে। ছোট ছেলেও মাধ্যমিকে ভালো ফল করেছে। কিন্তু ওর ইচ্ছেকে সফল করতে আমাদের আর্থিক সামর্থ্য নেই। তাই সরকারি-বেসরকারি সাহায্য পেলে খুব সুবিধা হবে।