রবীন রায়, আলিপুরদুয়ার: ১৯৯৮ সালে চা বাগানকে পঞ্চায়েতের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও পঞ্চায়েতের কোনও পরিষেবা বাগানগুলিতে পৌঁছত না। পরিষেবা পাওয়ার জন্য শ্রমিকদের বাগানের উপর নির্ভর করতে হতো। রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৯ সাল থেকে বাগানে এখন পঞ্চায়েত পরিষেবার খোলা হাওয়া বইছে। চা শ্রমিকরাও এখন নিজেদের সহ নাগরিক ভাবতে শুরু করেছেন।
এই পরিবর্তনের জন্য এবারের লোকসভা ভোটে চা বলয়ে তাঁদের দল অভাবনীয় ভালো ফল করবে বলে তৃণমূল চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের দাবি। ভোট পরবর্তী মূল্যায়নের পর এই দাবি করেছেন তৃণমূলের চা শ্রমিক সংগঠনের তাবড় নেতারা।
আলিপুরদুয়ার লোকসভা আসনের সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে নাগরাকাটা, মাদারিহাট, কালচিনি ও কুমারগ্রাম চারটি এলাকাই চা বলয়ের মধ্যে পড়ে। জেলায় ১১৬টি চা বাগানে ৪৭৫টি বুথ আছে। ভোটার আছে ৩ লক্ষ ৭৫ হাজারের মতো। তৃণমূল চা শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের দাবি, ১৯৯৮ সালে পঞ্চায়েতে যুক্ত হওয়ার পরেও পানীয় জল, রাস্তা, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য ও রেশন এই সব দৈনন্দিন পরিষেবা ছিল বাগান নির্ভর। পরিষেবা পেতে শ্রমিকদের বাগান কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হতে হতো। কিন্তু ২০১৯ সালের পর রাজ্য সরকারই শ্রমিকদের এই সব পরিষেবা পৌঁছে দিচ্ছে। এই পরিষেবার জন্য শ্রমিকদের এখন আর বাগান কর্তৃপক্ষের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয় না। 
তৃণমূল চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান নকুল সোনার বলেন, শ্রমিকদের জমির পাট্টা ও ঘর তৈরির জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। তার সঙ্গে রাজ্যের উদ্যোগে প্রতিটি বাগানে ক্রেশ তৈরি হয়েছে। প্রায় সব বাগানে অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা দেওয়া হয়েছে। উন্নয়নের এই নিরিখেই আমাদের দল এবারের লোকসভা ভোটে চা বলয়ে অভাবনীয় ফল করতে চলেছে।
তৃণমূল চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের আরও দাবি, এই পরিষেবার সঙ্গে এবারের ভোটে চা বাগানে দলের পক্ষে বিপ্লব আনবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। এবার চা বলয়ের বুথগুলিতে মহিলা ভোটারদের ভোট পড়ার প্রবণতাও সেই ইঙ্গিতই জানান দিচ্ছে। তৃণমূলের চা শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বলেন, গত এক বছর ধরে চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া ও সমস্যা নিয়ে একমাত্র তাঁদের দলই ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন করে এসেছে। শ্রমিকদের সমস্যা মেটাতে পিএফ অফিস ঘেরাও থেকে দু’বার বাগানে বাগানে পদযাত্রা সবটাই করেছে তৃণমূল। কীভাবে নিজেদের দাবি আদায় করতে হয়, তার জন্য প্রতিটি বাগানে সংগঠনের ইউনিট কমিটির সদস্যদের ট্রেড ইউনিয়নগত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। 
তৃণমূল চা শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীরেন্দ্র বরা ওরাওঁ বলেন, চা শ্রমিকদের জন্য বিজেপি কী করেছে, সেটা একবার দেখুন। চা শ্রমিকদের জন্য বিজেপি তো কিছুই করেনি। শ্রমিকরাও সেটা এখন বুঝে গিয়েছে। ফলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি উন্নয়নের নিরিখে এবারের ভোটে চা বলয়ে আমাদের দল অভাবনীয় সাফল্য পেতে চলেছে।