বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
ময়নাগুড়ি ব্লকের মৃৎশিল্পীদের মতে, তাঁদের এই শিল্প এখন টিকিয়ে রাখাই দায় হয়ে পড়েছে। কারণ এই অবস্থা দেখে নতুন করে কেউ আর এই কাজে আসতে চাইছে না। মৃৎশিল্পে এখন আর তেমন উপার্জন নেই বললেই চলে। তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আদৌ এই পেশা ধরে রাখবে কি না, তা নিয়েই দুচিন্তায় রয়েছেন ময়নাগুড়ির মৃৎশিল্পীরা।
৭০ বছর ছুঁই ছুঁই স্থানীয় মৃৎশিল্পী রতন দত্ত চোখে ঠিকমতো দেখতে পারেন না। শরীর সায় না দিলেও নেশার টানে তিনি এখনও প্রতিমা বানিয়ে চলেছেন। রতনবাবু বলেন, এখন আমাদের আর কদর নেই। বিগবাজেটের পুজো উদ্যোক্তারা দক্ষিণবঙ্গ থেকে প্রতিমা নিয়ে আসছেন। ওদিক থেকেই কারিগরদের এনে এখানে কাজ করাচ্ছেন। তাই আমাদের ভরসা ছোট পুজো বা বাড়ির পুজোগুলিই। পুজোর একমাস আগে থেকে রাত জাগতে হতো। এখন আর সেভাবে বরাত মেলে না।
ময়নাগুড়ির মৃৎশিল্পী সংগঠনের সম্পাদক গুণেশ্বর রায় বলেন, একথা সত্যি যে আগের তুলনায় এখন আমরা কম সংখ্যক প্রতিমা বানাই। যেভাবে প্রতিমা তৈরির সরঞ্জামের দাম বাড়ছে, সেভাবে ক্রেতারা দাম দেন না। আগে আমরা একটি বাঁশ কিনতাম ৫০-৬০ টাকায়। এখন তা দ্বিগুণের বেশি দাম হয়েছে। একইভাবে দু’বছর আগেও প্রতিমা বানানোর একগাড়ি কালোমাটির দাম ছিল ২০০০ টাকা। এখন ওই পরিমাণ মাটিই ৪০০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এছাড়াও জিএসটি চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিমার গয়না, অস্ত্র সবকিছুরই দামই আঁকাশছোঁয়া হয়েছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও আমরা দাম পাচ্ছি না। তার উপর বিগবাজেটের পুজো উদ্যোক্তারা এখন দক্ষিণবঙ্গ থেকে প্রতিমা কিংবা কারিগর নিয়ে আসছেন।
গত দশকেও ময়নাগুড়ির প্রতিমা বানানোর প্রতিটি কারখানায় দুর্গাপুজোর সময়ে ৩০টিরও বেশি প্রতিমা তৈরি হতো। কিন্তু এখন একেকজন বড়জোর পাঁচ-ছ’টির বেশি প্রতিমার বরাত পান না। কিন্তু ব্লকে পুজোর সংখ্যা কমেনি। সকলেই দক্ষিণবঙ্গ কিংবা শিলিগুড়ি, কোচবিহার থেকে প্রতিমা নিয়ে আসছেন কিংবা ওদিক থেকে শিল্পীদের এনে প্রতিমা গড়ছেন। কাজের অভাবে নতুন প্রজন্ম এখন আর প্রতিমা গড়ার দিকে না ঝুঁকে অন্য কাজে চলে যাচ্ছে। পূর্বপুরুষদের হাত ধরে শেখা এই শিল্পের ভবিষ্যত নিয়ে তাই প্রবীণ মৃৎশিল্পীরা চিন্তায় রয়েছেন। তাঁদের দাবি, নতুন কেউ আর এই পেশায় আসতে চাইছে না। কারণ এই কাজে এখন আর তেমন রোজগার নেই। একে দিন দিন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে অন্যদিকে থিম প্রতিমার দাপটও বেড়েছে।