পাটনা, ২১ এপ্রিল: বিহারের ‘বাহুবলী’ নেতা রাজেশ রঞ্জন ওরফে পাপ্পু যাদবের দৌলতে বরাবরই চর্চায় সুপৌল। এবারও এই কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন গতবারের জয়ী কংগ্রেসের রঞ্জিত রঞ্জন। যাঁর আর এক পরিচয় তিনি মাধেপুরার বিদায়ী সাংসদ তথা ‘বাহুবলী’ রাজেশ রঞ্জন ওরফে পাপ্পু যাদবের স্ত্রী। তাঁকে এবার লড়াই করতে হচ্ছে এনডিএ প্রার্থী দীলেশ্বর কামাথের বিরুদ্ধে। কংগ্রেস-আরজেডি জোটের প্রার্থী হলেও রঞ্জিত রঞ্জনকে এবার পড়তে হচ্ছে চ্যালেঞ্জের মুখে। পাশাপাশি কৃষকদের অসন্তোষও তাঁকে মাথায় রাখতে হচ্ছে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তুমুল মোদি হাওয়ার মধ্যেও কংগ্রেসের গড় অক্ষুণ্ণ রেখেছিলেন রঞ্জিত। গতবার তাঁর প্রাপ্য ভোট ছিল ৩ লক্ষ ৩২ হাজার ৯২৭টি। তিনি দিলেশ্বর কামাথকে প্রায় ৬০ হাজার ভোটে পরাজিত করেছিলেন। গত বারের মার্জিন খুব বেশি না থাকায় এবারও দিলেশ্বরকে প্রার্থী করেছে জেডি(ইউ)। কিন্তু এবার স্থানীয় আরজেডি নেতাদের অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনার মধ্যে রঞ্জিত রঞ্জন কতটা সফল হতে পারবেন, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। মহাজোট হলেও একক লড়াইতেই ভরসা রাখতে হচ্ছে এই হেভিওয়েট রাজনৈতিক নেতার স্ত্রীকে। কারণ, এই আসনে আরজেডি নেতারা নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করতে পারেন বলেও জল্পনা শুরু হয়েছে। মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরেই সুপৌলের আরজেডি বিধায়ক যদুংশু কুমার যাদবের নেতৃত্বে স্থানীয় নেতারা সাফ জানিয়ে দেন যে, তাঁকে সমর্থন করা হবে না। সুপৌল লোকসভার অধীন পিঁপরা বিধানসভার আরজেডি বিধায়কও রঞ্জিত রঞ্জনকে সমর্থন করবেন না বলে হুমকি দিয়েছেন। তিনি নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। জেলার দুই আরজেডি নেতা প্রকাশ যাদব এবং ভূপেন নারায়ণও বিদায়ী সাংসদের উপর খেপে রয়েছেন। দলীয় কর্মীদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখেন না বলে তাঁদের অভিযোগ। যদিও শনিবার রঞ্জিত রঞ্জনের হয়ে প্রচার করে গিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। তাতে কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের মনোবল কিছুটা চাঙ্গা হলেও রঞ্জনের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে আরজেডির ভোটব্যাঙ্ক। তবে পাপ্পুর ‘বাহুবল’ এবারও কতটা কাজে আসবে তার দিকেও তাকিয়ে রয়েছে গোটা রাজনৈতিক মহল। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে রঞ্জিত রঞ্জনকে হারিয়ে সংসদে গিয়েছিলেন জেডি(ইউ) প্রার্থী বিশ্বমোহন কুমার।
কোশি নদীর তীরবর্তী সুপৌল কেন্দ্রটি মূলত কৃষিপ্রধান। বিশেষ করে পাট চাষের জন বিখ্যাত। প্রায় প্রত্যেক বছর বন্যা দেখা হয়। ফলে চাষে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় চাষিদের। ২০০৮ সালের ভয়াবহ বন্যার মাশুল এখনও দিয়ে চলেছেন এখানকার কৃষকরা। সরকারি সহায্য না মেলায় হেক্টরের পর হেক্টর জমি চাষ না হয়ে পড়ে রয়েছে। আজও এই জেলার ৩৫টি, ২৩১ পঞ্চায়েত এবং ১ হাজার ৬৭টি গ্রামের লক্ষ লক্ষ মানুষের কান্না আজও পৌঁছয় না কোনও প্রতিনিধির কানে। শিরপুরের পাট চাষি হরি ঝা। ২০০৮ সালের ভয়াবহ বন্যার স্মৃতি তাঁকে এখনও তাড়া করে বেড়ায়। তাঁর কয়েক হেক্টর জমিতে আজও চাষ হয় না। ২০১২ সালে মাত্র ১০ হাজার সরকারি সাহায্য পেয়েছিলেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই। তারপর আরও কেটে গিয়েছে সাতটা বছর। তাঁদের মতো কৃষকদের দিকে ফিরেও তাকাননি কোনও জনপ্রতিনিধি। পাপ্পু পাণ্ডে নামে এক পাট চাষি বলেন, প্রতিদিনই শুনতে পাই কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী কৃষকদের জন্য কত প্রকল্প ঘোষণা করে চলেছেন। অথচ পাটের উপযুক্ত দাম পেতে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে আমাদের। এদিকে চাষিদের উন্নয়নে বর্তমান সাংসদ প্রায় কিছুই করেননি বলে বিরোধীদের অভিযোগ। জন অধিকারী পার্টির (লোকতান্ত্রিক) এক নেতা বলেন, এমপিকে তো দেখাই যায় না। তিনি মানুষের কাছ থেকে কয়েক যোজন দূরে সরে গিয়েছেন।
তবে আশার কথা একটাই যে, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ওই অঞ্চলের কৃষকদের দুরাবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সাহায্যের ব্যবস্থা করেছেন। কৃষক পরিবারগুলিকে যাতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করা হয়, তার জন্য জেলা প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।