বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
ভোটের ফলাফল পর্যালোচনা করতে গিয়ে মমতা নিজেই দলের জনবিচ্ছিন্নতাকে অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। জেলাভিত্তিক বৈঠক থেকে শুরু করে দলের বিধায়কদের নিয়ে সভাতেও তাই জনসংযোগ বাড়ানোর উপর জোর দেন তিনি। আসনের হিসেবে আশানুরূপ ফল না হলেও মোট ভোট বেড়েছে তৃণমূলের। যদিও প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে আসা বিজেপির ভোটবৃদ্ধির হার অস্বস্তি বাড়িয়েছে রাজ্যের শাসকদলের। রাজ্যে নজিরবিহীন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সাফল্য সত্ত্বেও কেন ভোটারদের মধ্যে তার প্রভাব আরও বাড়ানো গেল না, তা নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। দলের অন্দরে দুর্নীতির আগ্রাসন থেকে এক শ্রেণীর নেতৃত্বের মধ্যে অতিরিক্ত আত্মতুষ্টি এবং ঔদ্ধত্যই যে আমজনতার থেকে তাদের দূরে ঠেলে দিয়েছে, তা দলীয় ফলাফল পর্যালোচনায় প্রকট হয়েছে। আগামী ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে, দলকে বিজেপির মতো প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় তৈরি করতে পেশাদার সংস্থায় আস্থা রেখেছেন মমতা। নরেন্দ্র মোদি সহ দেশের তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে জয়ের রাস্তা দেখানোয় সফল ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোরের উপরেই আস্থা রেখেছেন তৃণমূল নেত্রী।
সেই সুবাদে ইতিমধ্যেই মমতা ও অভিষেকের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন প্রশান্ত। দলের একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে একান্তে কথাও বলেছেন। পাশাপাশি তাঁর সংস্থা আই-প্যাক (ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি)-এর দু’শো জন পেশাদার কর্মী রাজ্য চষে তৃণমূলের নির্বাচনী ফলাফলের কারণ বিশ্লেষণে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। বৃহস্পতিবার দলের বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকের আগে মমতা নিজেও তৃণমূল ভবনে আলাদা করে প্রশান্তের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। এদিন কালীঘাটের বৈঠকে জেলা সভাপতিদের সরাসরি কোনও নির্দেশ না দিলেও আলাপচারিতায় তাঁদের জীবনযাপন বদলের উপর জোর দেন তিনি। বিধায়কদের নিজের এলাকায় মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ আরও বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছেন। জেলার বিধায়কদের মধ্যে সদরে কিংবা কলকাতায় সময় কাটানোর প্রবণতা ধরা পড়েছে প্রশান্তের নিজস্ব সমীক্ষায়। দলের বিধায়কদের অনেকেই স্বীকার করেছেন, ‘হোম ওয়ার্ক’ করেই এসেছিলেন তিনি। তাঁদের মধ্যে কারও দেওয়া তথ্যে ভুলচুক হলেই তা যেভাবে শুধরে দিয়েছেন প্রশান্ত, তাতেই তটস্থ হয়ে পড়েছেন জেলার নেতারা। প্রশান্তের ফর্মুলা, প্রত্যেক বিধায়ককে নিজের বিধানসভা এলাকায় অন্তত মাসে একদিন থাকতে হবে। প্রত্যেক জেলায় ১৫ জনের একটি তথ্য সংগ্রাহক টিম তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রশান্ত। যে এলাকায় তফসিলি জাতি, উপজাতি বা সংখ্যালঘু মানুষের সংখ্যা বেশি, সেখানে কমিটিতে তাদের প্রতিনিধি রাখা আবশ্যিক। এই টিমের সদস্যদের কাছ থেকে আই-প্যাকের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইবে। প্রয়োজনে তাদের কিছু জানানোর থাকলে, তারা তা আই-প্যাককে জানাবে। সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রভিত্তিক রণকৌশল স্থির করতে তা কার্যকর করা হবে বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রশান্ত। সূত্রের মতে, জেলার নেতাদের সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে চলতে বলেছেন প্রশান্ত কিশোর। দলের হয়ে কিছু বলতে হলে, তা সর্বোচ্চ নেত্রী বা মুখপাত্র বলবেন। কোনও মন্তব্য করে বিতর্কে না জড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি বাম বা কংগ্রেসের মতো অ-বিজেপি বিরোধীদের সঙ্গে সংঘাতে না যাওয়া কিংবা প্রশাসনকে দলের কাজে ব্যবহার না করার ব্যাপারে সজাগ থাকতে বলেছেন।