শীতে টবেই ফলবে লাল টুকটুকে স্ট্রবেরি

ব্রতীন দাস: লাল টুকটুকে স্ট্রবেরি। দেখতে যেমন সুন্দর। খেতেও তেমনই সুস্বাদু। বাড়ির সামনে এক চিলতে উঠোন থাকলে অনায়াসেই নিজে হাতে সেই স্ট্রবেরি ফলাতে পারেন আপনিও। এই শীতে ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে টবেও ফলবে নজরকাড়া এই সুমিষ্ট ফল। 
উদ্যানপালনবিদরা বলছেন, চারা লাগানোর পর থেকে মাত্র ৪০ দিনেই স্ট্রবেরি পাওয়া যায়। যত ঘন শীত পড়বে, ততই ভালো হবে ফলন। ফলে সময় নষ্ট না করে আজই স্ট্রবেরি  চারা লাগিয়ে ফেলতে পারেন উৎসাহীরা। বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ, টিস্যু কালচার চারা বসানো উচিত। নার্সারি থেকে দেখেশুনে  চারা কিনতে হবে। একাধিক প্রজাতি রয়েছে। তবে একটু গরম সহনশীল জাত নির্বাচন করাই ভালো। মোটামুটি এপ্রিল পর্যন্ত স্ট্রবেরি পাওয়া যেতে পারে। সঠিক পদ্ধতি মেনে চাষ করলে একটি গাছ থেকে গড়ে ৬০০ গ্রাম স্ট্রবেরি পাওয়া যায়। 
কেমন হবে স্ট্রবেরি চাষের টব ও সেই টবের মাটি? 
উত্তর ২৪ পরগনার সহকারী উদ্যানপালন অধিকর্তা ড. শুভদীপ নাথ বলছেন, আট ইঞ্চির টব হলেই  চলবে। একভাগ বালি, একভাগ দোঁয়াশ মাটি ও একভাগ পাতাপচা সার কিংবা ভার্মিকম্পোস্ট দিয়ে তৈরি করতে হবে টবের মাটির মিশ্রণ। টবে জল নিকাশি ব্যবস্থা ভালো রাখতে কোকোপিট (নারকেলের ছোবড়া) ব্যবহার করা যেতে পারে। টবের ঠিক মাঝখানে এক-দেড় ইঞ্চি গভীরতায় একটিই চারা বসাতে হবে। জলে দ্রবণীয় সার ব্যবহার করতে পারলে ভালো। সমুদ্র শৈবাল প্রয়োগে গাছের স্বাস্থ্য ভালো হয়। ব্যবহার করতে হবে বায়ো এনপিকে। পোকামাকড় মারতে নিমতেল স্প্রে করা যেতে পারে। ফুল ধরার পর থেকে নিয়মিত জল দিতে হবে গাছে। তবে জল যেন উপচে না পড়ে। তাতে গাছের ক্ষতি হবে। স্ট্রবেরি ধরার পর সেগুলি যেন মাটির সঙ্গে লেগে না থাকে। তাতে তা পচে যেতে পারে। সেজন্য টবে খড় বা শুকনো পাতা দিয়ে মালচিং করে নিতে পারলে ভালো। যাঁরা বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষ করতে চান, তাঁদের হাতে আর সময় নেই। এখনই  চারা লাগিয়ে ফেলতে হবে বলে জানাচ্ছেন উদ্যানপালন বিশেষজ্ঞরা। ‘আতমা’ প্রকল্পের আর্থিক সহযোগিতায় উন্নত প্রযুক্তিতে স্ট্রবেরি চাষ শুরু হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য, সঠিকমাত্রায় জৈবসার প্রয়োগ ও জাত নির্বাচনের মাধ্যমে স্ট্রবেরি চাষের প্রসার ঘটানো। একইসঙ্গে চাষের গুণগত মানের উন্নতি ঘটানো। এজন্য একদিকে যেমন প্রদর্শনী ক্ষেত্র করা হচ্ছে, তেমনই কৃষকদের নতুন ধরনের ফসল চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। উদ্যানপালন আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সঠিক জাত নির্বাচন করে ঠিকমতো পরিচর্যা করতে পারলে সাফল্যের সঙ্গে স্ট্রবেরি চাষ করা সম্ভব। অন্য ফসলের তুলনায় কম সময়ে স্ট্রবেরি ফলানো যায়। ফলে কৃষক এই ফল চাষের মাধ্যমে বেশি লাভ পেতে পারেন। 
স্ট্রবেরি নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের ফল। এর বেশ কয়েকটি জাত রয়েছে, যেমন সুইট  চার্লি, উইন্টার ডন, কামা রোজা প্রভৃতি। এগুলি একটু গরম আবহাওয়াতেও সাফল্যের সঙ্গে চাষ করা যায়। জৈবপদার্থ সমৃদ্ধ উপযুক্ত জলনিকাশি ব্যবস্থাযুক্ত দোঁয়াশ মাটি, যার অম্লত্ব ৫.৬ থেকে ৬.৫-এর মধ্যে, সেখানে স্ট্রবেরি চাষ খুব ভালোভাবে হতে পারে। 
উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরের স্ট্রবেরি চাষি আবুল বাসার। গত চার বছর ধরে তিনি সাফল্যের সঙ্গে স্ট্রবেরি ফলিয়ে চলেছেন। এবারও চাষ করেছেন প্রায় সাড়ে সাত কাঠা জমিতে। বললেন, স্ট্রবেরি চাষে পলি মালচিং জরুরি। এতে বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, জমিতে আগাছার উপদ্রব থাকে না। তাছাড়া মালচিংয়ের পলিথিনের উপরের দিকটা সিলভার রঙের হয়। এতে আলোর প্রতিফলন ঘটে। বেশকিছু পোকা থাকে, যারা স্ট্রবেরি গাছের পাতার নীচে বাসা বাঁধে। এক্ষেত্রে মালঞ্চিংয়ের পলিথিন থেকে প্রতিফলিত হয়ে গাছের পাতায় আলো পড়ায় পোকার দাপট অনেকটাই কমে যায়। ওই কৃষক জমিতে ভার্মিকম্পোস্ট ও নিমখোল দিয়ে স্ট্রবেরি গাছ বসিয়েছেন। ব্যবস্থা রেখেছেন ড্রিপ ইরিগেশনের। গত মাসে উইন্টার ডন প্রজাতির টিস্যু কালচার চারা বসিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যেই গাছে ফুল আসতে শুরু করেছে। কিন্তু ভালো ফলন পাওয়ার জন্য এখন ফুলগুলি ভেঙে দিচ্ছেন। চলতি মাসের শেষ থেকে ফল নেবেন। রোগপোকা দমনে তিনি ব্যবহার করে থাকেন নিমতেল ও জৈব কীটনাশক। স্ট্রবেরি দেখতে যেমন আকর্ষনীয়, তেমনই পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে ভিটামিন, আয়রন ও ফাইবার। এর সুমিষ্ট গন্ধের জন্য আইসক্রিম, কেক, কুকিজ, জ্যাম, জেলি প্রভৃতি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এই ফলের ভেষজ গুণও রয়েছে। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধে স্ট্রবেরি উপকারি বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। উদ্যানপালনবিদরা বলছেন, ১৭৪০ সালে ফ্রান্সের ব্রিটানি অঞ্চলে সর্বপ্রথম স্ট্রবেরি চাষ হয়। পরবর্তীতে চিলি, আর্জেন্টিনা ও অন্যান্য জায়গায় এটি ছড়িয়ে পড়ে। এ রাজ্যে চাষে স্ট্রবেরির উপযোগী জাত বলতে চান্দলার, থিয়োগা, সুইট চার্লি, সেলভা। চাষে অল্প মাত্রায় হলেও ঘনঘন সেচ দেওয়া দরকার। খোলা জায়গায় চাষের জন্য একটু উঁচু জমি দরকার। যাতে গাছের গোড়ায় জল দাঁড়াতে না পারে। অ্যানথ্রাকনোস কিংবা ধসা রোগে ফল পচে যায়। ছত্রাকজনিত রোগে গাছের পাতা শুকিয়ে যেতে পারে। প্রতিরোধে ব্যবহার করা যেতে পারে ট্রায়ডিমেফন প্রতি লিটার জলে ১ গ্রাম মাত্রায়। পাতায় ধূসর দাগ রোধে দিতে হবে স্ট্রেপটোসাইক্লিন, ১০ লিটার জলে ১ গ্রাম। 
45Months ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

উপস্থিত বুদ্ধি ও প্রখর অনুমান ক্ষমতার গুণে কার্যোদ্ধার। ব্যবসা, বিদ্যা, দাম্পত্য ক্ষেত্রগুলি শুভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৩.১৩ টাকা৮৪.৮৭ টাকা
পাউন্ড১০৮.৩২ টাকা১১১.৮৭ টাকা
ইউরো৯১.২৫ টাকা৯৪.৪৩ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
5th     September,   2024
দিন পঞ্জিকা