আমাদের মহাবিশ্বে নানা ধরনের পদার্থ রয়েছে। এর বাইরেও এমন কিছু রয়েছে, যা চোখে দেখা যায় না। অথচ তার শক্তি এতটাই বেশি যে, সবকিছু পাল্টে দিতে পারে। ছোট্ট বন্ধুরা, ওই প্রবল শক্তি হল অ্যান্টি ম্যাটার বা প্রতি পদার্থ। একে প্রতি কণাও বলা যেতে পারে। আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণার একটা মহাবিস্ময় এই প্রতি কণা। আমরা চারদিকে কত কিছুই না দেখি। ঘরবাড়ি, মাটি-শিলা, মেঘ, নদী, পুকুর, মানুষ, পশুপাখি, যন্ত্র, গাছগাছালি, সমুদ্র— আরও অগণিত কত কিছু। তাহলে মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, এগুলি সব কী দিয়ে তৈরি? আশ্চর্য হলেও এই সমস্ত কিছুই তৈরি হয়েছে মাত্র ৯৮টি মৌলিক পদার্থ দিয়ে। যে পদার্থ ভাঙলে ওই পদার্থ ছাড়া অন্য কিছু পাওয়া যায় না, তাকে বলে মৌলিক পদার্থ। হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, লোহা, সোনা, রুপো, কার্বন, ক্লোরিন, অ্যালুমিনিয়াম— এই সব হল মৌলিক পদার্থের উদাহরণ। এই সমস্ত মৌলিক পদার্থ তৈরি হয়েছে পরমাণু দিয়ে। কোনও মৌলিক পদার্থের সবচেয়ে ক্ষুদ্র কণা হল পরমাণু। এটি আলাদা বা স্বাধীনভাবে থাকতে পারে না। সাধারণত একটি মৌলিক পদার্থ একই ধরনের অসংখ্য পরমাণু দিয়ে তৈরি। এক বা একাধিক পরমাণু নিয়ে গঠিত হয় অণু। আবার একাধিক মৌলিক পদার্থের অণু যুক্ত হয়ে গঠিত হয় যৌগিক পদার্থ। যেমন ধর জল। দু’অণু হাইড্রোজেনের সঙ্গে এক অণু অক্সিজেন যুক্ত হয়ে তৈরি হয় জল। তাই H2O জলের সংকেত।
এবার আসা যাক পরমাণুতে। এই পরমাণুগুলো তৈরি হয়েছে তিনটি কণা দিয়ে। সেগুলো হল— ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন। পরমাণুর একেবারে মাঝে থাকে প্রোটন ও নিউট্রন। এই দু’টি দিয়ে গঠিত হয় নিউক্লিয়াস। আর সেটিকে কেন্দ্র করে ঘোরে ইলেকট্রন। কত সহজেই না বলে দেওয়া গেল পরমাণুর গঠন। কিন্তু ভাবলে অবাক হয়ে যাবে, কত যুগের পর যুগ ধরে বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধায় পরমাণুর এই গঠন জানা সম্ভব হয়েছে। যখনই দেখবে কোনও কিছু ঘুরছে, তাহলে ভেবে নিতে হবে যে, কোনও বিশেষ বল তাকে নিজের দিকে টানছে। যেমন পৃথিবীর আকর্ষণে চাঁদ চারপাশে ঘুরছে। আবার সূর্যের টানে পৃথিবী তার চারপাশে ঘুরছে। একইভাবে পরমাণুর কেন্দ্রে নিউক্লিয়াস ইলেকট্রনকে নিজের দিকে টানছে। সেজন্যই ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের চারপাশে ঘুরছে। এর মূল কারণ হল বৈদ্যুতিক আকর্ষণ। ইলেকট্রনের বৈদ্যুতিক আধান বা চার্জ হল ঋণাত্মক, প্রোটনের ধনাত্মক। যা পরস্পরের বিপরীত ধর্মী। তবে নিউট্রনের কোনও চার্জ নেই।
বিজ্ঞানীরা বলেন, মহা বিস্ফোরণ বা বিগ ব্যাং থেকে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি। সেই থেকেই বস্তুকণা তৈরি হয়। কিন্তু বিজ্ঞানীরা অঙ্ক কষে বুঝতে পারেন, বিগ ব্যাংয়ের পরে যেমন বস্তুকণা সৃষ্টি হয়েছিল, ঠিক তেমনই প্রতি বস্তুকণা বা অ্যান্টিম্যাটারও ছিল। এই অ্যান্টিম্যাটার হল আমাদের চেনা পদার্থের সম্পূর্ণ উল্টো বা বিপরীত। কেমন উল্টো? তা সাধারণ কণার বিপরীতধর্মী। তা বিপরীত চার্জযুক্ত মৌলিক কণা দিয়ে গঠিত। অ্যান্টিপ্রোটন, অ্যান্টিনিউট্রন ও পজিট্রন (অ্যান্টি ইলেকট্রন) দিয়ে তৈরি প্রতি কণা। এখানে পজিট্রন ঋণাত্মক না হয়ে ধনাত্মক, আর প্রোটন ধনাত্মক না হয়ে ঋণাত্মক আধানযুক্ত।
কণা ও প্রতি কণা সংস্পর্শে এলে দু’য়েরই ধ্বংস অনিবার্য। আর তাতে উৎপন্ন হবে প্রভূত শক্তি। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। ভবিষ্যতে এই প্রতি কণাই হয়তো হয়ে উঠবে শক্তির বড় উৎস।