নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাঘাযতীনে বিদ্যাসাগর কলোনির হেলে পড়া বাড়িটির কোনও কমপ্লিশন সার্টিফিকেট বা সিসি নেই। এর অর্থ, বেআইনিভাবে নির্মিত হয়েছে বাড়িটি। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই বেআইনি বহুতলের প্রতিটি ফ্ল্যাটের আলাদা ‘অ্যাসেসি নম্বর’ কিন্তু রয়েছে! ফ্ল্যাটের মালিকদের থেকে নিয়মিত সম্পত্তি কর আদায় করছে পুরসভা। হয়েছে মিউটেশনও। তবে শুধু এই বহুতলই নয়, যাদবপুর, কসবা ও টালিগঞ্জ এলাকার কলোনি অধ্যুষিত ১৯-২০টি ওয়ার্ডে এমন উদাহরণ ভূরি ভূরি। এসব এলাকায় উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দপ্তরের জমিতে গজিয়ে ওঠা ৯০ শতাংশ নির্মাণেরই সিসি নেই। বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন না হলেও কলোনি এলাকার এই বাড়িগুলির প্রায় ৩৫ হাজার বাসিন্দার থেকে সম্পত্তি কর মূল্যায়ন ও রাজস্ব আদায় বিভাগ নিয়মিত কর আদায় করে। এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, অবৈধ নির্মাণ কীভাবে মিউটেশন বা অ্যাসেসি নম্বর পেয়ে যাচ্ছে? কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানাচ্ছে, আইনে কোনও বাধা নেই।
পুরসভা সূত্রের খবর, সম্পত্তি কর মূল্যায়ন বিভাগের নথিতে হেলে যাওয়া বাড়িটির ঠিকানা ৬৯/১/৩/৮৯/১ রাজা এস সি মল্লিক রোড। আর ভূমিরাজস্ব দপ্তরের নথি অনুযায়ী বাড়িটির ঠিকানা ৩/৪৭/ডি, বিদ্যাসাগর। সেখানে আটটি ফ্ল্যাটের মিউটেশন ও অ্যাসেসমেন্ট হয়েছে। বাসিন্দারা প্রত্যেকে নিয়মিত কর প্রদান করেন। এহেন একটি বহুতল সম্পর্কে পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের খাতায় বিস্তারিত কিছুই নেই। কারণ, বিল্ডিং প্ল্যান অনুমোদন না করিয়েই উঠে গিয়েছে বহুতল। কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, যাদবপুর, টালিগঞ্জ, কসবা এলাকার ৬৬, ৮১, ৯১, ৯২, ৯৩, ৯৪, ৯৫, ৯৬, ৯৭, ৯৮, ৯৯, ১০০, ১০১, ১০২, ১০৩, ১০৪, ১০৫, ১০৬, ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে অনেক কলোনি। এসব এলাকায় এভাবেই দশকের পর দশক ধরে বেআইনি নির্মাণ হয়েছে। আইনের ফাঁক গলে মিউটেশন সার্টিফিকেটও পেয়ে গিয়েছে তারা। এক পুরকর্তা বলেন, ‘কলোনি এলাকার অনেকেই আইনি পদ্ধতি মেনে বাড়ি বানিয়েছেন। বিল্ডিং আইনের সঙ্গে অ্যাসেসমেন্টের কোনও সম্পর্ক নেই। পুর আইনের ১৭৮/৫ ধারায় বলা হয়েছে, যে বাড়ি তৈরি হয়েছে বা বসবাস চলছে, সেখানে সিসি না থাকলেও অকুপেন্সি সার্টিফিকেট দেখে কিংবা পার্সোনাল লায়বেল করে মিউটেশন করা যেতে পারে। করও নেওয়া যাবে। ঠিকানার প্রমাণ হিসেবে বিদ্যুতের বিলের সাম্প্রতিক কপি জমা দিতে হয়।’ ওই কর্তার আরও জানান, রঘুবংশী বনাম কলকাতা পুরসভার এক মামলায় আদালত রায় দিয়েছিল, বেআইনি বাড়ির মিউটেশন হলেও সেটিকে আইনি বলে গণ্য করা যায় না। কিন্তু সংশিষ্ট বাড়ির বাসিন্দারা পুরসভা থেকে পানীয় জল, নিকাশি সহ বিভিন্ন পরিষেবা পান। তাই সিসি ছাড়া সম্পত্তি কর নেওয়ার মধ্যে কোনও আইনি বাধা নেই। বিদ্যাসাগর কলোনির ঘটনার পর এসব নিয়মে কোনও বদল আসে কি না, সেটাই এখন দেখার।