বর্তমান পত্রিকা : Bartaman Patrika | West Bengal's frontliner Newspaper | Latest Bengali News, এই মুহূর্তে বাংলা খবর
দেশ

‘অযান্ত্রিক’ সঙ্গী নিয়েই কুম্ভমেলায় অ্যাম্বাসাডর বাবা

সুদীপ্ত রায়চৌধুরী, প্রয়াগরাজ: দুটো রাস্তা। সমান্তরাল। কিন্তু একটা থেকে অন্য রাস্তায় যাওয়ার শর্টকাট নেই। চার মাথার মোড় ঘুরে যাওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই। প্রয়াগরাজে গঙ্গাতীরে সুবিশাল কুম্ভমেলার প্রতিটি সেক্টরের একই ছবি। ভিড়ে ঠাসা রাস্তায় অটো-টোটো কিছুই চলছে না। এই মহাযজ্ঞের মধ্যে সেক্টর, ব্লক বা নিদেনপক্ষে রাস্তার নাম না জেনে কাউকে খোঁজার চেষ্টার অর্থ একটাই—খড়ের গাদায় সূঁচ খোঁজা।
যে বিশ্বাসে মানুষ হুইলচেয়ারকে ভরসা করে কয়েক হাজার কিলোমিটার পাড়ি দেয়, যে বিশ্বাসে অশক্ত শরীরেও হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসেন সঙ্গমে পুণ্যস্নানের ডুব দিতে, সেই বিশ্বাসেই হাঁটতে হয় সেক্টর ১৯-এ। দেখা পেতেই হবে মোহন্ত রাজগীর নাগা বাবার। এ নাম বললে হয়তো কেউ চিনবেন না। কারণ উনি বিখ্যাত ‘অ্যাম্বাসাডর বাবা’ নামে। বিশ্বাসের একটা অদ্ভুত বিষয় আছে। পথে পথে ঘুরতে হয় প্রচুর। তবেই পথ মেলে। ঘুরতে ঘুরতে রেলব্রিজের নীচ। তাঁবুর পর্দা সরাতেই ভেসে এল হুঙ্কার, ‘বাহার সে ক্যায়া দেখ রাহা হ্যায়, অন্দর আজা।’ সাধুর আদেশ। অমান্য করে কার সাধ্যি! ‘কী খুঁজতে এসেছিস?’ বললাম। হা হা করে হেসে বললেন, ‘এটাই উপরওয়ালার খেলা রে বেটা। ঠিক লোকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। বস এখানে চুপটি করে। আমি তোকে রাজগীরের কাছে নিয়ে যাব।’ চেলাদের কাউকে ধুনির কাঠ আনতে, কাউকে আরও বাড়তি তাঁবু টাঙাতে নির্দেশ দিয়ে ডেকে নিলেন উল্টোদিকের আখড়ার এক নাগাবাবাকে। বললেন, ‘গাড়ি বের কর।’ যাঁর বিভূতি মাখা শরীরে একটা সুতো পর্যন্ত নেই, একটু পরে তিনিই এলেন হাতে গাড়ির চাবি ঘোরাতে ঘোরাতে। কী সাংঘাতিক বৈপরীত্য! নাগাবাবা চালকের আসনে। গাড়ি ছুটল তিনজনকে নিয়ে। রাস্তায় নো-এন্ট্রি! কিন্তু বাবা তো বাবা-ই। এক ধমকে সরে গেল ব্যারিকেড। পর পর দু’বার বাঁদিকে ঘুরে প্রথম পুলের নীচ দিয়ে গাড়িটা থামল। গাড়ি থেকে নামতেই চোখে পড়ল গেরুয়া রঙের অ্যাম্বাসাডরটা। হাতে লেখা নম্বরপ্লেট, ইউপি ২১সি ৪৩০০। আখড়ার ঠিক পাশেই দাঁড় করানো। বাঁ পাশে কয়েকজন সঙ্গীর সঙ্গে বসে আছেন তিনি।
ভিতরে নিয়ে গিয়ে রমেশ গিরি বললেন, ‘দেখ টারজান, তোর জন্য বাঙ্গাল থেকে এসেছে।’ ‘ওম নমো নারায়ণ’ বলে আশীর্বাদ করলেন রাজগীর ওরফে টারজান বাবা। আদতে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের এই বাসিন্দা আপাতত মাসদেড়েকের জন্য ডেরা বেঁধেছেন সেক্টর ১৯-এ। সঙ্গী ১৯৭২ সালের এই ‘ভিন্টেজ’ গেরুয়া অ্যাম্বাসাডর। তিনি অবশ্য এই গাড়িকে ‘গাড়ি’ বলতে রাজি নন। তাঁর কাছে এ তাঁর ‘মা’। একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না? ঠোঁটের কোণায় হাসি ঝুলিয়ে বললেন, ‘একেবারেই না। আমি এই গাড়িতে থাকি, খাই, শুয়ে থাকি। যেখানেই যাই, এই গাড়ির সঙ্গেই যাই। মায়ের সঙ্গে তো ছেলে এভাবেই থাকে। তাই না?’
কথায় যুক্তি আছে। কিন্তু গাড়ি কেনার টাকা পেলেন কোথায়? ‘এক ভক্ত দিয়েছিল। সেই ৩৫-৪০ বছর ধরে এই ভিন্টেজ গাড়ি চালাচ্ছি। এর মধ্যে একটা অদ্ভুত শান্তি পাই। আমার চলমান আশ্রম। আমার মা।’ আর বিগড়ে গেলে? ‘ও আমাকে বোঝে। আমি যদি এখান থেকে মুম্বইও চলে যাই, কোনও অসুবিধা হবে না। যতক্ষণ আশপাশে একটাও গ্যারেজ না আসবে, ততক্ষণ একটুও সমস্যা হবে না। ছোটখাট কিছু হলে তো নিজেই সরিয়ে ফেলি। আমি এই নিয়ে চারবার কুম্ভমেলায় এলাম এই গাড়ি নিয়ে। এখান থেকে বেনারস যাব। শিবরাত্রি পর্যন্ত ওখানেই থাকব। সেখান থেকে গঙ্গাসাগর যেতে পারি। এই গাড়ি নিয়েই।’
মনে হল যেন ‘জগদ্দল’-এর গল্প শুনছি। আর চোখের সামনে দেখছি বিমলকে। ছোট একটা মফস্বলের ট্যাক্সি ড্রাইভার বিমল গাড়ি চালাতে চলাতে কথা বলত ১৯২০ শেভ্রোলে জালোপি ট্যাক্সি জগদ্দলের সঙ্গে। তেষ্টা পেয়েছে বুঝে জগদ্দলকে রাস্তার পাশে একটা বড় বটগাছের ছায়ায় থামিয়ে কুয়ো থেকে বালতি ভরে ঠান্ডা জল আনত। রেডিয়েটরের মুখে ঢেলে দিত। অনেকে সন্দেহ করতেন, ‘বিমল তো জগদ্দলকে ডাকে, কিন্তু সাড়া পায় কি?’ আসলে এই অনুভূতি অন্যের পক্ষে বোঝা কঠিন। কিন্তু বিমল জগদ্দলের প্রতিটি সাধ-আহ্লাদ, আবদার-অভিমান এক পলকে বুঝে নিত। যেমন বোঝেন রাজগীর নাগা বাবা।
যেদিন গাড়ি থাকবে না? ‘আমার সঙ্গে শেষ দিন পর্যন্ত থাকবে আমার মা।’ বিশ্বাস ঝরে পড়ে টারজান বাবার কণ্ঠে। ঠিক বিমলের মতো।
24d ago
কলকাতা
রাজ্য
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

উত্তম ধনোযোগ পরিলক্ষিত হয়। পারিবারিক ক্ষেত্রে দিনটি ভালো বলা যায়। কাজকর্মে শুভফল লাভ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৬.৬৩ টাকা৮৮.৩৭ টাকা
পাউন্ড১০৬.৯২ টাকা১১০.৬৭ টাকা
ইউরো৮৯.১৭ টাকা৯২.৫৫ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা