নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: এম জি রামচন্দ্রন, জয়ললিতা, এম করুণানিধি, অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পাঁচজনই মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্যের দাবি আদায়ে বসেছেন ধর্না-অবস্থানে। কিন্তু কেন্দ্র বিরোধী আগ্রাসনে বাকিদের এক কদম পিছনে ফেলে দিলেন মমতা। রেড রোডে দু’দিনের ধর্নার শেষে তিনি ঘোষণা করলেন, এবার রাজ্যের দাবি আদায়ে অবস্থান হবে খোদ রাজধানীতে। ডাক দিলেন, ‘দিল্লি চলো’। ১০০ দিনের কাজ, আর আবাস যোজনার প্রাপ্য টাকা বন্ধের রাজনীতির বিরুদ্ধে দিল্লির মাটিতে দাঁড়িয়েই সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার রেড রোডের মঞ্চ থেকে মমতার দৃপ্ত ঘোষণা—‘কেন্দ্রের রাজনীতির শিকার সব রাজ্যের মানুষকে নিয়ে যাব। আমাদের ছাত্র-যুবরাও যাবে। ট্রেন ভাড়া করে যাব। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবি হাতে নিয়ে যাব। যদি ঢুকতে না দাও, যেখানে থামাবে, সেখানেই বসে যাব। নন্দলালকে হটাবে মানুষের জোট।’
বিজেপি বিরোধী সুর সপ্তমে চড়িয়ে ক্ষিপ্ত মমতা বলেন, ‘সারা দেশে তিন-চারটে বিজেপি শাসিত রাজ্য ছাড়া সবাই ক্ষুব্ধ। প্রত্যেক বিরোধী একজোট হবে। মানুষের সেই জোট আপনারা (বিজেপি) কিছুতেই ভাঙতে পারবেন না। ভাঙতে দেব না। দুর্যোধন-দুঃশাসনের থেকেও বেশি অপশাসন। সাধারণ মানুষকে বলব, অত্যাচারী এই সরকার বদলে দিন।’ কেন্দ্রের বঞ্চনা ও বৈষম্যমূলক আচরণ প্রসঙ্গে তৃণমূল সুপ্রিমোর বক্তব্য, ‘শুধু বাংলা নয়, ডাবল ইঞ্জিন সরকার না হলেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পে কোপ পড়ছে। আর বঞ্চনা-বৈষম্যের শীর্ষে রয়েছে বাংলা। দেশের অধিকাংশ মানুষ আজ অধিকার থেকে বঞ্চিত। এই অপশাসনের বিরুদ্ধে শুধু রাজনৈতিক দল নয়, দেশের নাগরিক সমাজ, ছাত্র-যুব, কৃষক এবং সর্বস্তরের মানুষকে জোটবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
কলকাতার ধর্না শেষে ‘দিল্লি চলো’ ডাক কেন? সে ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তাঁর কথায়, ‘আমি নিজে তিনবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি, কথা বলেছি। এমনকী চিঠিও দিয়েছি। দিল্লিতে ঝগড়া করতে যাইনি, বোঝাতে গিয়েছিলাম। তারপরও টাকা দেয়নি। ধর্না করতে বাধ্য হয়েছি, কারণ বারবার বলা সত্ত্বেও আমাদের প্রাপ্য টাকা ছাড়া হয়নি। আমরা বন্ডেড লেবার নই, চাকর নই। দেশের সম্মানিত নাগরিক। কাজ করেছি (১০০ দিনের), টাকা দিতে হবে। টাকা মারা যাবে না। দু’দিন অপেক্ষা করলাম। ভেবেছিলাম নায্য পাওনা মিলবে। কিন্তু একজন চুনোপুঁটি নেতাও ফোন করে বলেননি যে, আপনাদের টাকা দিয়ে দেওয়া হবে।’
কেন বাংলার প্রতি বিজেপির এত আক্রোশ? মমতা বলেন, ‘সব বিরোধী দলকে এক হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে একের বিরুদ্ধে এক ফর্মুলায় লড়াইয়ের ডাক দিয়েছি। এতেই ওদের ভয়। তারপর থেকেই সব বিরোধী চোর বলে দাবি করছে ওরা।’ স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় তৃণমূল নেত্রীর আক্রমণ—‘আন্দোলন থেকে জন্ম আমাদের। আন্দোলন করেই এগিয়ে যাব। যদি ভাবেন, সব বিরোধী দলকে দেশ থেকে বের করে দেবেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে দেবেন... তাহলে জেনে রাখুন, জনগণই এবার আপনাদের দেশছাড়া করে ছাড়বে।’