বিশেষ নিবন্ধ

একনায়কতন্ত্রকে হারিয়ে জয় গণতন্ত্রের
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

ঔদ্ধত্য আর অহঙ্কারের কোমর ভেঙে দিয়েছে বাংলা। আর্থিক বঞ্চনা, হকের টাকা আটকানো আর কেন্দ্রীয় বৈষম্যের প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে পাহাড় থেকে সাগর। সমুচিত জবাব পেয়েছে বিজেপি। যে দল দেশে একনায়কতন্ত্র কায়েম করতে চেয়েছিল, যারা চেয়েছিল সংবিধানকে বদল করতে, যারা চেয়েছিল বাংলাকে পদানত করতে। মেরুকরণ, বঞ্চনা-বৈষম্য ও মিথ্যাচারের জবাব এমনই হয়। হিটলারি কায়দায় প্রচারিত ‘অব কি বার ৪০০’ পার’ বা ‘মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’ স্লোগান অস্তমিত। কোটি কোটি টাকা খরচ করে দেশজুড়ে ‘অব কি বার ফির মোদি সরকার’-এর ঢক্কানিনাদ গণতন্ত্রের মন্দিরের সামনে ধুলিসাৎ হয়েছে। একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে লোকসভায় ২৭২ আসনের ম্যাজিক ফিগারই ছুঁতে পারেনি বিজেপি। আর তাদের এই দম্ভের প্রত্যাখ্যান শুরু হয়েছে বাংলার মাটি থেকেই। সেই স্রোতে ভেসেছে গোটা দেশ। এখন তাই আর আমিত্ব নেই, মুখে শুধুই ‘এনডিএ সরকার’! তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসার প্রত্যাশায় নরেন্দ্র মোদি আজ চন্দ্রবাবু নাইডু এবং নীতীশ কুমারের মুখাপেক্ষী। কয়েক মাস আগে তেলুগু দেশম প্রধানকে ‘ভ্রষ্টাচারী’ আখ্যা দিয়ে ইডি, সিবিআই আর আয়কর লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। জেল খাটতে হয় চন্দ্রবাবু নাইডুকে। এখন গদি বাঁচাতে সেই চন্দ্রবাবুর ১৬ জন সাংসদকে ‘পাখির চোখ’ করা হয়েছে। বাংলা তথা দেশের মানুষ মহারণ-২৪’এ বুঝিয়ে দিয়েছে, দেশের রাজনীতিতে কোনও ‘একনায়ক’এর ঠাঁই নেই! কেউ অপরিহার্য নয়! 
***
এক ‘অসম’ লড়াই এবার লড়তে হয়েছে বাংলায়। গ্রাম থেকে শহর প্রাণপাত পরিশ্রম করেছেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। তাঁদের আন্তরিক সমর্থন জুগিয়েছেন আম জনতা। বাংলা দখলের লক্ষ্যে ‘বহিরাগত’রা দাঁত-নখ বের করে ঝাঁপিয়েছিল। কী ছিল না? গোটা রাষ্ট্রশক্তি, ইডি-সিবিআই এবং আয়কর দপ্তরের মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সি, ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করা প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আর ডাবল ইঞ্জিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা। সঙ্গে দোসর হয়েছিল নির্বাচন কমিশন ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর একটা অংশ। কী করে তাদের নিরপেক্ষ বলব? বারবার বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা দেখেছি। কোথাও বাহুবল, আবার কোথাও অথর্বল দিয়ে মানুষকে নানা প্রলোভনে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলেছে সমানে। বাংলার সাধারণ মানুষের জন্য চালু থাকা ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিও সরাসরি প্রচারমঞ্চ থেকে দিয়েছিল বিজেপি। কারও ক্ষমতা নেই, তা বন্ধ করার—পাল্টা ভরসা দিতে হয়েছিল গোটা রাজ্যে। এখম মনে হচ্ছে, মা-বোনেরা সে ভরসায়  বিশ্বাস রেখেছেন। যে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভরসায় ভোট কেন্দ্র ছাড়া হয়েছিল, তাদের জওয়ানদের একাংশ আবার সরাসরি বিজেপির পক্ষে ভোট দিতে মানুষকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালিয়েছে। তমলুক, রানাঘাট সহ কয়েকটি কেন্দ্রে অবাধে ‘রিগিং’ করেছে গেরুয়া বাহিনী। বারবার কমিশনকে জানিয়েও ফল মেলেনি। এমনকী ভোট গণনা পর্বে ‘বিজেপির পর্যবেক্ষক’ উপযাজক হয়ে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার জন্য পরাস্ত হতে হয়েছে আমাদের চার-পাঁচজন প্রার্থীকে। ভোট পর্বে কেউ আবার বাংলার মহিলা সম্মানকে ‘ভূলুণ্ঠিত’ করার চেষ্টাও চালিয়েছে। সন্দেশখালির কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনাকে সামনে এনে, মিথ্যা চিত্রনাট্য তৈরি করে লোকসভা ভোটপর্বে বাংলার সম্মানকে কলুষিত করার মরিয়া চেষ্টাও চালানো হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে মা-বোনেদের সম্মানহানি করার নোংরা খেলায় মেতেছিল বহিরাগতরা। ভিন রাজ্য থেকে লোক ঢুকিয়ে হয়েছে ষড়যন্ত্র বৈঠক। এসবের জবাব দিয়েছে সন্দেশখালি তথা বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের ভোটাররা, বিশেষ করে মা-বোনেরা। 
***
এবারের কঠিন লড়াইয়ে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিল সংবাদমাধ্যমের সিংহভাগ। ভোট ঘোষণার অনেক আগে থেকে লাগাতার কুৎসা, মিথ্যাচার আর ফেক নিউজ ছড়িয়ে কালিমালিপ্ত করার প্রয়াস শুরু হয়ে যায়। সরাসরি মোদিবাবুর হয়ে প্রচারে নেমে পড়েছিল গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলে পরিচিতরা। ‘ওপিনিয়ন পোল’ থেকেই একপেশে সংবাদ প্রকাশের ইজারা নিয়েছিল তারা। ভোটের প্রচারপর্বে তো বটেও, তথাকথিত ‘এক্সিট পোলে’ও সেই ধারা অব্যাহত রাখা হয়েছিল। এমনকী ফল ঘোষণার দিন যতটা সম্ভব গেরুয়া শিবিরকে ‘এগিয়ে’ রাখার মরিয়া চেষ্টাও চালানো হয় এহেন সংবাদমাধ্যমের সাহায্যে। ভয়, ভক্তি নাকি কাঞ্চনমূল্য? কীসের বিনিময়ে এ মিথ্যাচার, তার বিচারের ভার বাংলার মানুষের উপরেই ছেড়েছিলাম। ফলাফল হাতনাতে পেল অপশাসক বিজেপি আর তার দোসররা।  এখন বলতে বাধা নেই, বাংলাকে দখল করার মরিয়া চেষ্টা রুখতে যে লড়াই আমরা শুরু করেছিলাম, তাতে সাহচর্য মিলেছে কয়েকটি সাহসী সংবাদমাধ্যমের। যারা বিকিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে, অর্থের বিনিময়ে বাংলাকে কলুষিত করার বিজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বাংলা থেকে ‘বিরোধী বিসর্জন’-এর এই লড়াইয়ে তাদের সাহায্য পেয়ে আমরা আপ্লুত।   
***
বিরোধী দলগুলির সম্মিলিত জোট’ই এদেশের বিজেপি অপশাসনের একমাত্র বিকল্প। তাই আন্তরিকতার সঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’ গঠনে উদ্যোগী হয়েছিলাম। পাটনা, বেঙ্গালুরু, আর মুম্বইয়ে ইন্ডিয়ার বৈঠকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, যে যেখানে শক্তিশালী, তারা লড়াই করুক বিজেপির বিরুদ্ধে। অর্থাৎ একের বিরুদ্ধে এক। আমাদের রাজ্যে কংগ্রেসকে দু’টি আসন ছাড়ার প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু এখানে ওরা (কংগ্রেস) সিপিএমের হাত ধরল। যে সিপিএম এ রাজ্যে বিজেপির সুবিধা করে দিতে এবারের ভোটে নেমেছিল। আমি সিপিএমের সঙ্গে আপস করিনি, এখনও করব না। আর সিপিএমের সঙ্গে জোট করে যে কংগ্রেসি ভোটযুদ্ধে নেমেছিলেন, তিনি আসলে বিজেপি’রই লোক। বাংলার মানুষের তা বোধগম্য হয়েছে। আমরা (তৃণমূল কংগ্রেস) পুরোপুরি ‘ইন্ডিয়া’তেই আছি। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটে প্রচুর পরিশ্রম করেছে। অভিষেক নিজেও ডায়মন্ডহারবার থেকে রেকর্ড ভোটে জিতেছে। দলের এই তরুণ মুখকেই প্রতিনিধি করে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে পাঠানো হয়েছে। দেশের মানুষের স্বার্থে, সংবিধান বাঁচাতে ‘ইন্ডিয়া’ যা সিদ্ধান্ত নেবে, তার সঙ্গেই থাকব আমরা। কারণ বাংলার মানুষ ইন্ডিয়া জোটের উপযুক্ত সহযোগী-শরিক হয়ে ওঠার ‘উপকরণ’ দিয়েছেন আমাদের। তারা দেখিয়েছেন, গণতন্ত্রের সামনে কীভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে একনায়কতন্ত্র। অত্যাচারী, স্বৈরাচারীকে কীভাবে গুটিয়ে যায়, দণ্ডিত হয় জনতার আদালতে। মানুষের সেই রায় আর আশীর্বাদকে পাথেয় করে আরও কাজ করতে হবে। তৃণমূল থাকবে মানুষের পাশে, মানুষের সাথে।  তবে একটা বিষয় স্পষ্ট করতে চাই। ১০০ দিনের প্রকল্প, আবাস যোজনা সহ নানা খাতে বাংলার হকের টাকা ফেরত চাই। কেন্দ্রের এই বঞ্চনার বিরুদ্ধেই ইভিএমের বোতাম টিপেছে তামাম বাংলা। স্বৈরতন্ত্রের অহং ভেঙেছে বাংলা, ভেঙেছে ঔদ্ধত্যের কোমর। হকের টাকা আদায়ে কীভাবে আন্দোলন করতে হয়, সেটা বাংলা জানে। এবারের আন্দোলন ফের হবে দিল্লিতেই। তবে সে আন্দোলন, বিজেপি স্পনসর্ড ‘আন্না হাজারের’ মতো নয়। মানুষের প্রকৃত আন্দোলন! 
21d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

কর্মে কিছুটা শুভ। খেলাধূলায় বিশেষ নৈপুণ্য প্রদর্শন। মানসিক দিকটি বিক্ষিপ্ত থাকবে।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার ৮২.৬৩ টাকা৮৪.৩৭ টাকা
পাউন্ড১০৪.২২ টাকা১০৭.৬৮ টাকা
ইউরো৮৭.৮৯ টাকা৯১.০১ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
দিন পঞ্জিকা